বিজ্ঞাপন

জামায়াতও উদযাপন করছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী!

March 3, 2021 | 8:37 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িয়ে নিন্দিত জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে চট্টগ্রামে মাসব্যাপী কর্মসূচি শুরু করেছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জামায়াত নেতারা বাংলাদেশকে কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন।

বিজ্ঞাপন

মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (৩ মার্চ) দুপুরে নগরীর বাকলিয়ায় দারুল আইতাম এতিমখানায় এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ করে দলটি। এসময় নগর জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ শাহজাহানসহ দলটির নেতারা ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘দেশ যেন আত্মনির্ভরশীল কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, সেজন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। স্বাধীন সার্বভৌম সবুজ শ্যামল এই দেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। এই দেশ যেন আত্মনির্ভরশীল কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, সেজন্য আল্লাহর কাছে এই দোয়া করছি। স্বাধীনতার জন্য শহিদদের রেখে যাওয়া কাজ আল্লাহ যেন কবুল করেন এবং শহিদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশবাসীকে কাজ করার তৌফিক দান করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘অর্থবহ স্বাধীনতা ও নৈতিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ— এই স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ যেন একটি কল্যাণময় রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, সে লক্ষ্যে জামায়াত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করতে হবে আমাদের সবাইকে।’

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নগর কমিটির সেক্রেটারি মুহাম্মদ নুরুল আমীন, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ ও ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুছ, সাংগঠনিক সেক্রেটারি এম এ আলম চৌধুরী, জামায়াত নেতা সুলতান আহমদ, আহমদুল হক, নুর হোসাইন, ছাত্রনেতা নোমান রশীদ, মুহাম্মদ ফয়সাল ও এরফানুল হক।

জামায়াত ইসলামীর চট্টগ্রাম নগর কমিটির প্রচার সম্পাদক এম আলমের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও পাকিস্তান বিভক্তির বিরোধিতা করে জামায়াত ইসলামী বাঙালি জাতীয়তাবাদী, বুদ্ধিজীবী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিধনযজ্ঞে পাক সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল বলে সমালোচনা আছে। সেসময় আলবদর বাহিনী গঠন করে নিজেরাও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগের মুখে থাকা দলটি পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর পুনরুজ্জীবিত হয়। তৎকালীন সামরিক সরকারের অনুকম্পা নিয়ে এবং ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সারাদেশে ভিত্তি গড়ে তুলে কয়েকটি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান দলটির কয়েকজন নেতা। এমনকি ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারে দু’জন মন্ত্রিত্বও পান।

বিজ্ঞাপন

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের উদ্যোগ নিলে দলটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। সহিংস আন্দোলন করেও বিচার ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জামায়াত। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির অন্তত সাত জন শীর্ষ নেতা দণ্ডিত হন। এদের মধ্যে সাবেক আমির গোলাম আযমকে (বর্তমানে প্রয়াত) ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি পাঁচ নেতার ‍মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। এরা হলেন— মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মো. কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা ও মীর কাশেম আলী। আরেক নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে শহিদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে এবং ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সারাদেশে গণজাগরণ মঞ্চের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। একাত্তরের কৃতকর্মের জন্য জামায়াতের ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জোরালো হয়। তবে জামায়াত এখনও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে ক্ষমা চায়নি।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন