বিজ্ঞাপন

জিয়ার রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত শিগগিরই

March 4, 2021 | 7:15 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) গঠিত কমিটি। জিয়ার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ‘চেতনাবিরোধী’ যেসব অভিযোগ উঠেছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে তারা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তথ্য-প্রমাণ হাতে এলে বেশি সময় নেওয়া হবে না।

বিজ্ঞাপন

জামুকা সূত্রে জানা গেছে, সংবিধান লঙ্ঘন, সংবিধানের মূলনীতি বাতিল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের সমর্থন দেওয়া, তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখা, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা উল্লেখ থাকা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন, দেশত্যাগে সহযোগিতার পাশাপাশি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠনের অভিযোগ এনে জামুকার এক বৈঠকে তার খেতাব বাতিলের সুপারিশ তোলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ ফেব্রুয়ারি জামুকার ৭২তম বৈঠকে জিয়াউর রহমানসহ স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের খেতাব বাতিলে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

সংসদ সদস্য ও জামুকার সদস্য মোশাররফ হোসেনকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে আরও আছেন সংসদ সদস্য শাহজাহান খান ও মো. রশিদুল আলম। কমিটিকে দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এই দুই মাসের মধ্যে জিয়াউর রহমানসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার সঠিক প্রমাণ ও তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে। সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে জিয়াউর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বহাল থাকবে।

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিয়াউর রহমান জাতির জনকের খুনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এসব তথ্য সবার জানা। কিন্তু তা মুখে বললে হবে না। দালিলিক প্রমাণ লাগবে। সেজন্যই আমরা একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। সেই কমিটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। কমিটিকে দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে। তারা যে প্রতিবেদন দেবে তা গ্রহণযোগ্য কিনা সেটাও জাতির সামনে প্রকাশ করা হবে। তারপরে সিদ্ধান্ত আসবে।’

বিজ্ঞাপন

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা, রাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে জামুকার বৈঠকে তার খেতাব বাতিলের প্রস্তাব করা হয়।

এ প্রসঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে আমাদের দুইভাবে দেখতে হবে। ১৯৭১ এ জিয়া ছিলেন দুর্দান্ত মুক্তিযোদ্ধা। দেশপ্রেমিক। কিন্তু সেই জিয়াকে পঁচাত্তরের পরের জিয়ার সঙ্গে মেলানো যাবে না। পঁচাত্তরের পরের জিয়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংবিধান থেকে মুছে ফেলেছেন। যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করে দিয়েছেন। ধর্মের নামে রাজনীতির সুযোগ করে দিয়েছেন। এগুলো স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ড। এসবের জন্য যদি খেতাব বাতিলের কথা আসে তবে যথার্থ। তবে এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকলের খেতাব কেড়ে নিতে হবে। একা জিয়াউর রহমানের হলে সেই সিদ্ধান্ত হবে রাজনৈতিক।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ করেননি বলে বিভিন্ন পর্যায় থেকে যে অভিযোগ শোনা যায় সেটা ঠিক নয়। জিয়া মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের পর তিনি সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা লিখেছেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথাও লিখেছেন। জিয়াউর রহমান জীবদ্দশায় কখনো দাবি করেননি যে, তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন।’

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, জামুকা গঠিত তিন সদস্যের কমিটি জিয়াউর রহমান ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরীফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী, মোসলেহ উদ্দীনের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে। একইসঙ্গে পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা খন্দকার মোশতাক আহমদ, মাহবুবুল আলম চাষীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কাজে জড়িয়ে পড়া অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার বিষয়েও তথ্য উপস্থাপন করবে জামুকা গঠিত তদন্ত কমিটি।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন