বিজ্ঞাপন

৭ মার্চের ভাষণ স্বাধীনতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক: বিএনপি

March 7, 2021 | 9:05 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, ৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে অনেকগুলো মাইলফলকের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ। এই ভাষণ গোটা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৭ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে তারা এসব কথা বলেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন বিএনপির জাতীয় কমিটি এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।

বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সভা পরিচালনা করেন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি গঠনের পর কর্মসূচি গ্রহণ করলে দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দলের অনেকেই— কেউ নাম দিয়ে, কেউ নাম না দিয়ে স্যোশাল মিডিয়াতে সুবর্ণজয়ন্তী পালনের যৌক্তিকতা, বিশেষ করে ৭ মার্চ পালন করা উচিত কী, উচিত না, সে ব্যাপারে অনেক কথা লিখেছেন। কেউ কেউ নেগেটিভ কথাও লিখেছেন।’

বিজ্ঞাপন

‘তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ৫০ বছর আগে যা ঘটেছিল, সেটার প্রকৃত ইতিহাস জানার অধিকার আজকের প্রজন্মের রয়েছে। আজকের যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সেই প্রেক্ষাপটে সত্যকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গিয়ে একটা দলীয় ধারণা এই জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা সেইখানে একটা অবস্থান নিতে চেয়েছি। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে, স্বাধীনতার ঘোষকের দল হিসেবে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সত্য ইতিহাস তুলে ধরতে চেয়েছি’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরাও আমাদের প্রশ্ন করেছেন, আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী কেন করছি? আরে, স্বাধীনতা কি আওয়ামী লীগের একার? স্বাধীনতা কি কোনো ব্যক্তির? স্বাধীনতা সমগ্র জাতির। এই স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে আমাদের লাখ লাখ মানুষ। এই স্বাধীনতার জন্য আমাদের মা-বোনেরা সম্ভ্রম হারিয়েছে। সুতরাং এটাকে স্মরণ করে, স্বাধীনতার যে চেতনা সেটা নতুন প্রজন্তের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া বিএনপির দায়িত্ব। সেই কারণেই আমরা এই কাজগুলো শুরু করেছি।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৭ মার্চ শুধু একটা দিন, ২৬ মার্চ শুধু একটা দিন। কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই এই দেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে। এই যুদ্ধ শুধু একদিন, দুই দিন, তিন দিনের নয়। এদেশের মানুষ পাকিস্তানিদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নতুন প্রজন্মেকে সেই ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে রেখে তাদের সামনে একটা ভ্রান্ত ইতিহাস তুলে ধরেছে।’

তিনি বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) নতুন প্রজন্মকে একটা ধারণা দিচ্ছে যে, একটিই মাত্র দল, একজন মাত্র ব্যক্তি, একটি মাত্র গোষ্ঠী বা পরিবার এই দেশের সবকিছু এনে দিয়েছে, স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, উন্নয়ন এনে দিয়েছে। এমন একটা প্রেক্ষাপটে আমরা সত্যটা তুলে ধরতে চাই। আমরা তুলে ধরতে চাই, এ দেশের স্বাধীনতার জন্য কখন কারা নেতৃত্ব দিয়েছে, সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এদের (আওয়ামী লীগের) একমাত্র কাজ হচ্ছে- সবার অবদানকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। তাদের একমাত্র স্লোগান, এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। এই স্লোগান কেবল এখন না, এই স্লোগান শুরু হয়েছে ৭১ সালের পর থেকেই। তখনই থেকেই তাদের কথাই ছিল- এক ব্যক্তি, এক দল ছাড়া আর কিছু থাকবে না। এখনো তাই শুরু হয়েছে।’

জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের খেতাব প্রয়োজন হয় না। জিয়াউর রহমান প্রত্যেকের হৃদয়ের মাঝে বসে আছেন। ইতিহাস জিয়াউর রহমানকে ধরে রাখবে, তাকে এত সহজে মুছে ফেলা যাবে না। আমরা সবাইকে মর্যাদা দিতে চাই, মর্যাদা দিয়েছি। আমরা কাউকে ছোট করতে চাই না। কাউকে ছোট করার জন্য আমরা এই আয়োজন করিনি।’

বিজ্ঞাপন

সভাপতির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৭ মার্চে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ছিল না। স্বাধীনতার নয় বছর পর এই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ৭ মার্চে জিয়াউর রহমানকে কেউ চিনতো না। এই জন্যই বলছি, কোনো দলকে ছোট করার জন্য আমরা ৭ মার্চের আলোচনা করতে আসিনি। কারণ, তখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ছিলই না। এখানে তুলনা করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। জিয়াউর রহমান এই বাংলাদেশের মানুষের কাছে ২৬ মার্চ থেকে পরিচতি। জিয়াউর রহমান ৭ মার্চের কোনো বিষয়বস্তু না। তাই আমরা কাউকে ছোট করা, কাউকে বড় করা বা ইতিহাসকে বিকৃত করার জন্য আলোচনা করতে আসিনি। আমরা আলোচনা করতে এসেছি প্রকৃত ইতিহাসকে তুলে ধরার জন্য।’

‘অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করেছেন, আগে তো ৭ মার্চ পালন করেন নাই, এখন করছেন কেন? আমাদের পরিষ্কার জবাব, সুবর্ণজয়ন্তীর একটি দিন হিসেবে আমরা ৭ মার্চ পালন করছি। সুবর্ণজয়ন্তী ইতোপূর্বে আর কখনো আসেনি। তাই আমরা ২ মার্চও এর আগে পালন করিনি, ৩ মার্চও এর আগে পালন করিনি, ৭ মার্চও পালন করিনি, ৯ মার্চও পালন করিনি। সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের লক্ষ্য আমরা প্রকৃত ইতিহাসকে তুলে ধরব। সেই জন্য ৭ মার্চ আমরা আলোচনা সভা আয়োজন করেছি’— বলেন ড. মোশাররফ।

তিনি বলেন, ‘স্বাধীকার আন্দোলন, শ্বায়ত্বশাসন আন্দোলন এবং গণতন্ত্রের সংগ্রামের মধ্যে সে সময় আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা ছেড়ে দেয়নি। এরই প্রেক্ষাপটে ৭ মার্চের ভাষণ। অবশ্যই এই ভাষণ ঐতিহাসিক এবং এই ভাষণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এ ভাষণে কিছু নির্দেশনা ছিল— এটা আমরা অস্বীকার করতে চাই না। সেই সময়ের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান— এটাও আমরা অস্বীকার করতে চাই না।’

ড. মোশাররফ বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যতবার জাতির উদ্দেশে এবং সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন ততবার শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উচ্চারণ করেছেন। খালেদা জিয়া যতবার পার্লামেন্টে বক্তব্য দিয়েছেন, ততবার শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উচ্চারণ করেছেন। অতএব আমরা ইতিহাসকে অবজ্ঞা করতে চাই না। ইতিহাসকে বিকৃত করার উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা ৭ মার্চ পালন করতে আসিনি।’

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর পাকিস্তানের সামরিক জান্তারা ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় বাংলাদেশে যে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে উঠেছিল, সেই আন্দোলন সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে ৭ মার্চের জনসভা। আজকে যারা ক্ষমতায় আছন, তারা কি সেই প্রেক্ষাপট ভুলে গেছেন। সেই প্রেক্ষাপট হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রেক্ষাপট। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের প্রেক্ষাপট। সুতরাং তাদের কি সেই অধিকার আছে ৭ মার্চ নিয়ে উচ্চকণ্ঠে কথা বলার। সেই অধিকার তাদের নাই, সেই মুখ তাদের নাই।’

তিনি বলেন, ‘৭ মার্চ হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে অনেকগুলো মাইলফলকের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক। মুক্তিযুদ্ধের অনেকগুলো মাইলফলক ধূলোয় ঢেকে গেছে, সংস্কারের অভাবে ভেঙে-চুরে যাচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে আমরা সেই মাইলফলকগুলোকে ধূলোমুক্ত করতে চাই, সংস্কার করতে চাই, জাতির সামনে তুলে ধরতে চাই।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন