বিজ্ঞাপন

নারী দিবস- নারী নেতৃত্বে সমতার বিশ্ব গড়ার প্রত্যয়

March 8, 2021 | 12:00 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। লিঙ্গ সমতার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়। বিশ্বব্যাপী নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাদের কাজের প্রশংসা এবং ভালোবাসা প্রকাশের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য উদযাপনের উদ্দেশ্যে নানা আয়োজনে পালিত হয় এই দিনটি।

বিজ্ঞাপন

১৮৫৭ সালে মজুরি বৈষম্য, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা আর কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নামেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা। সেই মিছিলে চলে সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়ন। পরে ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে নেতৃত্ব দেন জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন। ক্লারা জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন।

এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে চলা আন্দোলন আর সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯১১ সাল থেকে একটি দিন নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়। পরে ১৯১৪ সাল থেকে বেশকয়েকটি দেশে ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।

বাংলাদেশেও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের আগে থেকেই এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ১৯৭৫ সালে এসে ৮ মার্চ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। সেই থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য-

বিজ্ঞাপন

করোনাকালে নারী নেতৃত্ব
গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব

করোনাভাইরাস অতিমারির কারণে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলোকে চিহ্নিত করা হচ্ছে চলতি বছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে। বিশেষ করে  নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীরাও যে সমান অংশীদার হতে পারেন, এই থিমের মাধ্যমে তাই বোঝানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী, ভবিষ্যতের সমানাধিকার এবং অতিমারি থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য নারীদের চেষ্টা সকলের সামনে তুলে ধরাও এই থিমের অন্যতম উদ্দেশ্য। উল্লেখ্য, করোনা অতিমারি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ নারী নেতৃত্ব তুলনামূলক অধিক সফলতার পরিচয় দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে নারী-পুরুষ সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

“বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নের ফলে নারী উন্নয়ন আজ সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, বিচারবিভাগ, প্রশাসন, কূটনীতি, সশস্ত্রবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, শান্তিরক্ষা মিশনসহ সর্বক্ষেত্রে নারীর সফল অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশ ক্রমান্বয়ে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, এদেশের নারী পুরুষের যৌথ প্রচেষ্টায় বিনির্মাণ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।

“নারী তার মেধা ও শ্রম দিয়ে যুগে যুগে সভ্যতার সকল অগ্রগতি এবং উন্নয়নে করেছে সমঅংশীদারিত্ব। আর তাই সারা বিশ্বে বদলে গেছে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। এখন নারীর কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বীকৃতি।”

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বাণীতে আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর সম অধিকারের বিষয়টি সংবিধানে নিশ্চিত করেছেন।

“লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। আমাদের জাতীয় উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমরা গ্রহণ করেছি নানামুখী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ।”

জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার রেসপন্সিভ বাজেট প্রণয়নসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। হ্রাস পাচ্ছে নারীর দারিদ্র্য।”

এই অতিমারি দেখিয়েছে নারী নেতৃত্ব কতটা ইতিবাচক। করোনা অতিমারির সঙ্গে মানব সভ্যতার যুদ্ধে তারাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, সেবিকা, গবেষক— সবক্ষেত্রেই তাদের উপস্থিতি পরিস্থিতিকে উন্নত করেছে। তবে কাজে এগিয়ে থাকলেও এখনও পুরুষের তুলনায় অনেক কম বেতন পান নারী। জাতিসংঘ প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় ১১ শতাংশ হারে কম বেতন পাচ্ছেন প্রথমসারির নারী করোনা যোদ্ধারা। যা বেতন কাঠামোর বৈষম্যকেই প্রকাশ করে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মধ্য দিয়ে নারীত্বের উৎসব পালিত হয়। জাতি, ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে নারীদের কৃতিত্বকে স্বীকৃতি জানানোর জন্য এই দিনটি পালিত হয়। এই দিনে প্রত্যেককে নারী অধিকার ও লিঙ্গ সমতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হয়। পাশাপাশি নারীদের সমান অধিকারের লড়াই জোরদার করা এই দিনটি পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য। পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কিংবা পেশাগত জীবনে নারীদের যেসব সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়, এই দিবস পালনের মধ্য দিয়ে তা যেমন সকলের সামনে তুলে ধরা হয়, তেমনি সচেতনতা বাড়ানোতেও রাখে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা।

এদিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জাতীয় পর্যায়ে ৫ জনকে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ সম্মাননা দেবে সরকার। সকাল সাড়ে ১০টায় শিশু একাডেমি মিলনায়তনে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাদের হাতে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ।

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন