বিজ্ঞাপন

প্রকাশ হবে রাজাকারের পূর্ণাঙ্গ তালিকাও

March 8, 2021 | 3:10 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার, আলবদর, আলশামসের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি হচ্ছে। চলতি বছরেই সে তালিকা চূড়ান্ত করা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, যে আইনি জটিলতায় রাজাকারদের তালিকা তৈরির কাজ থেমে আছে তা দ্রুতই শেষ হচ্ছে। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে এ সংক্রান্ত আইনের সংশোধনী খসড়া পাস হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হয়। যার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের নামও দেখা যায়। ওই তালিকা নিয়ে সমালোচনায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে মুক্তিযু্দ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সে তালিকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তখন জানানো হয়েছিলো ২০২০ সালের স্বাধীনতা দিবসের আগেই নতুন করে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হবে। সে কাজ করতে গিয়ে দেখা গেলো ওই ধরনের তালিকা প্রকাশ করার এখতিয়ার নেই সরকারের। যে কারণে ওই কার্যক্রম সেখানেই থেমে যায়। এরপর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল- জামুকা আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আইনটি সংশোধন হলে রাজাকারদের তালিকা প্রণয়নে আর কোনো বাধা থাকবে না।

জামুকা সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য শাহজাহান খানের নেতৃত্বে গঠিত রাজাকারের তালিকা তৈরিতে একটি উপকমিটি কাজ করছে। এই কমিটি রাজাকারের তালিকা সংগ্রহের প্রক্রিয়া ও প্রকাশের বিষয় নির্ধারণ করবে। এই কমিটির সুপারিশেই জামুকা আইন সংশোধন করা হচ্ছে। আইনটি সংশোধন করে রাজাকারের তালিকা তৈরি এবং তা প্রকাশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, রাজাকারদের তালিকা তৈরির উদ্দেশ্যে জামুকা আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী খসড়া এরই মধ্যে মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে তা গত বিজয় দিবসের আগেই সংসদে উত্থাপন করার কথা ছিলো। তা না হওয়ায়, আগামী সংসদ অধিবেশনে আইনটির সংশোধনী খসড়া উত্থাপন করা হবে এবং এ অধিবেশনেই পাস হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময় রাজাকার আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির যে সব নথি থানা ও জেলা পর্যায়ে ছিলো সেসব নথি কৌশল করে নস্ট করে ফেলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তৎকালীন ১৯ জেলার রেকর্ডরুমে যেসব দালিলিক প্রমাণ ছিল, সেগুলো খুঁজতে গিয়ে তা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সেসব উদ্ধারে সরকারের একাধিক সংস্থা কাজ করছে।’

এ প্রসঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘রাজাকারদের তালিকা করা সহজ হবে এই অর্থে যে কোন এলাকায় কতজন রাজাকার ছিল তা মানুষ জানেন। তাই এই তালিকা তৈরি করতে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করা জরুরি। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরিতে যেভাবে গবেষক, বিশেষজ্ঞরা যুক্ত রয়েছেন। এই তালিকা তৈরিতেও এমন ব্যক্তিদের রাখা দরকার না হলে আগের মতো অসম্পূর্ণ, ভুলে ভরা তালিকায় ই জনগণ দেখতে পাবেন। আবার রাজাকারদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাও আছেন। তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা বলা হয় এই অর্থে যে তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেছে ঠিক কিন্তু আবার মুক্তিযোদ্ধাদের আগাম খবর দিয়ে সতর্ক করে দেওয়ার কাজও করেছে। সেজন্য ঢালাওভাবে তালিকা করা যাবে না। এদের সংজ্ঞাও থাকা দরকার। কারণ তারাও বহুমানুষকে বাঁচিয়েছেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। আমরা চাই একটি স্বচ্ছ এবং পূর্ণাঙ্গ তালিকা, যেখানে কোনো রাজনীতি কিংবা আমলাতান্ত্রিক বিষয় থাকবে না।’

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে রাজাকারদের তালিকা তৈরির বিষয়টি সামনে আসে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সব সময় রাজাকারদের তালিকা তৈরির জোর দাবি জানিয়ে আসছিলো। এরপর অন্যান্য মহল থেকেও এ দাবি ওঠে। আলোচনা হয় সংসদেও। এরপর এই তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সারাবাংলা/জেআর/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন