বিজ্ঞাপন

চলচ্চিত্রে নারীর উপস্থাপন ও নারীপ্রধান চলচ্চিত্র

March 8, 2021 | 9:13 pm

আহমেদ জামান শিমুল

নায়িকা বিপদে পড়বেন, নায়ক এসে উদ্ধার করবেন; এরপর তাদের মধ্যে ভাব-ভালোবাসা হবে। স্বামীর সুখের জন্য স্ত্রীরা তাদের নিজেদের সর্বস্ব বিসর্জন দেবেন, স্বামী নির্যাতন করলেও সংসার ছেড়ে যাবেন না, ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীর জন্য অবমাননার, কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রকে ভিলেন কখনো ধর্ষণ করতে পারবে না, তার আগেই নায়ক এসে তাকে উদ্ধার করবেন—এসব বিষয় ছিল এক সময়ের বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের নিয়মিত উপজীব্য।

বিজ্ঞাপন

এ ধরনের প্রবণতা  প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ থেকে শুরু করে অনেকদিন পর্যন্ত লক্ষ্য করা গেছে। তবে আশির দশকে যখন বাংলাদেশে ‘অ্যাকশনধর্মী’ সিনেমার প্রচলন শুরু হলো, তখন থেকে এ অবস্থার পরিবর্তন শুরু হতে থাকে। তখনকার চলচ্চিত্রগুলোতে একটু একটু করে দেখানো শুরু হলো নারীরাও প্রতিবাদ করতে জানে। সংসার, অফিস কিংবা রাস্তায় অন্যায়কারীকে শায়েস্তা করে। এ ধরনের ছবিতে শুরুতে শাবানা, ববিতা, দিতি এবং পরবর্তীতে শাবনূর, মৌসুমী, মুনমুন, ময়ূরী, পপি, মাহি ও ববি অভিনয় করেছেন।

তবে নারীই ছবির গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র, এই ধারণাটা শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার আগ থেকেই। যেমন বলা যায়, এ দেশের প্রথম ব্লকবাস্টার ছবি ‘রূপবান’-এর কথা। সে ছবির হাত ধরে এ দেশে নির্মিত হয়েছে বহু নারীপ্রধান গল্পের ছবি। স্বাধীনতা পূর্ববতী সময়ে ‘আসিয়া’, ‘নদী ও নারী’ ছবিগুলোর কথা এখানে বলা যায়।

স্বাধীনতার পর  ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘সারেং বৌ’, ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’, ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ মতো নারীপ্রধান ক্লাসিক ছবি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পরিচালকদের মধ্যে আমজাদ হোসেন পরিচালিত অধিকাংশ ছবির গল্পের কেন্দ্রে নারী থেকেছে প্রত্যক্ষ বা পারোক্ষভাবে। এর মধ্যে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ তো এ দেশের অন্যতম ক্লাসিক চলচ্চিত্র। আরও উল্লেখ করা যায় ‘সুন্দরী’, ‘কাল সকালে’, ‘দুই পয়সার আলতা’ মতো চলচ্চিত্রের কথা।

‘বেদের মেয়ে জোসনা’র কথাও বলা যায়। নিজের প্রেমিক রাজপুত্র আনোয়ারকে বেশ কয়েকবার জোসনা নামের একজন বেদের মেয়ের রক্ষার অতি সাধারণ গল্প এটি। অঞ্জু ঘোষ ও ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনীত ছবিটি তো এ দেশের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে স্বীকৃত।

কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লাকে নিয়ে ‘শিল্পী’, জনপ্রিয় ফোকশিল্পী মমতাজকে নিয়ে ‘মমতাজ’ ছবিগুলো একজন নারীর শিল্পী হিসেবে লড়াইয়ের গল্প বলে।

বিজ্ঞাপন

একবিংশ শতকের প্রথম দশকে মৌসুমী অভিনীত ‘খাইরুন সুন্দরী’র সফলতার পর একের পর এক ফোক ঘরানার ছবি নির্মিত হতে থাকে। যে সকল ছবির কেন্দ্র ছিলেন একজন নারী। তবে এসব ছবির একটি কমন বিষয় ছিল পতিব্রতা নারী।

বাণিজ্যিক ছবির সফল নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘ম্যাডাম ফুলি’-তো গত শতাব্দীর শেষের দিকে খুব আলোচিত একটি ছবি। নায়িকা সিমলাকে এখনো মানুষ ওই ছবির নামে চিনে।

এ শতাব্দীর শুরুতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা শুরু হয়। ‘নিষিদ্ধ নারী’র মত অনেক নারী প্রধান ছবি হলেও এসবের বেশির ভাগই ছিল অশ্লীলতার দোষে দুষ্ট। একই সময়ে পপি অভিনীত ‘বস্তির রাণী সুরাইয়া’ আলোচিত ছিল।

এ শতাব্দীতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি নারী কেন্দ্রিক ছবি বানিয়েছেন নারগিস আক্তার। তার পরিচালিত ‘চার সতীনের ঘর’ কিংবা ‘মেঘলা আকাশ’ একদিকে যেমন নারীর অধিকারের কথা বলে, অন্যদিকে সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে মানুষকে সচেতন করে।

বিজ্ঞাপন

প্রসূন রহমানের ‘সুতপার ঠিকানা’য় একজন নারীর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সংগ্রাম তুলে ধরা হয়েছে। রুবাইয়াত হোসেনের ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ একজন গার্মেন্টসকর্মীর লড়াইয়ের গল্প বলা হয়েছে। এখানে শাবনূর অভিনীত ‘দুই নয়নের আলো’, ‘নিরন্তন’-এর কথাও উল্লেখ করা যায়।

‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার’-এ মোস্তফা সরয়ার ফারুকী দেখিয়েছেন স্বামী ছাড়া একজন নারীর বেঁচে থাকার লড়াইয়ের পথটা যে কঠিন তা। নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ‘গেরিলা’য় বলেছেন মুক্তিযুদ্ধে নারীদের আত্মত্যাগের কথা।

দেশে ডিজিটাল চলচ্চিত্রের জোয়ার শুরু হলে জাজ মাল্টিমিডিয়া বানায় ‘অগ্নি’, ‘অগ্নি ২’ ও ‘রক্ত’। এছাড়া চিত্র নায়িকা ববি বানান তার নিজের প্রযোজনায় ‘বিজলী’। এসব ছবি একই সঙ্গে নারীপ্রধান এবং অ্যাকশনধর্মী।

সবশেষ ‘ন’ ডরাই’, ‘দেবী’ নারীপ্রধান বাংলাদেশি ছবি হিসেবে আলোচিত। এছাড়া ‘স্বপ্নবাজী’ ও ‘বুবুজান’ নামে দুটি নারীপ্রধান চলচ্চিত্র রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়।

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন