বিজ্ঞাপন

‘বিএনপি অতীত প্রভুদের পালিত সারমেয় দল হিসেবেই আছে’

March 8, 2021 | 8:15 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিএনপিকে অতীত প্রভুদের পালিত সারমেয় দল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়া যে দল গঠন করেছে, সেই দলের নেতারা ৭ই মার্চের ভাষণের ভাষা বুঝবে না, মর্ম বুঝবে না। এটা তো খুব স্বাভাবিক। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ধরে নিতে হবে যে, এরা এখনো সেই পুরনো প্রভুদের ভুলতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারাসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে বিএনপির নেতাদের বিতর্কিত বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘হ্যাঁ বিএনপি মেনে নেবে না, এটার কারণ আছে। আমি আরেকটা কারণ বলতে চাই, ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা করে। জাতির পিতা বলেছিলেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত হও। রাস্তাঘাটসহ সব বন্ধ করে দাও। সেদিন যারা রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছিল তারা জানত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আক্রমণ করবে। বিশেষ করে ২৫শে মার্চ চট্টগ্রামে যারা ব্যারিকেড দিচ্ছিল, তাদের উপরে যারা গুলি চালিয়েছিল, তার মধ্যে জিয়াউর রহমান একজন। যারা সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলে সেদিন রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছিল তাদের অনেককেই এই জিয়াউর রহমান গুলি করে হত্যা করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘চট্টগ্রামের যারা মুক্তিযোদ্ধা, অনেকের কাছে জিজ্ঞাসা করলে এ তথ্য পাওয়া যাবে। তাদের অনেকে বিদেশেও আছেন, দেশেও রয়েছেন। শুধু তাই নয়, জিয়াউর রহমান ২৫ ও ২৬ মার্চ দুদিন পাকিস্তানি প্রভুদের নির্দেশে হত্যাকাণ্ড চালায়। ২৭ তারিখ সে যাচ্ছিল সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে। আর সেই অস্ত্র নামানো ঠেকাতে সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ জনগণ বাধা দিয়েছিল। এমনকি সেখানে পৌঁছানোর আগেই জিয়াউর রহমানকে তারা আটকিয়ে ফেলে।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধরে নিতে হবে যে, বিএনপি এখনো তাদের পুরনো প্রভুদের ভুলতে পারেনি। পাকিস্তানের পালিত সারেমেয় দল হিসেবেই তারা আছে। এটাই হলো বাস্তবতা। কাজেই তারা কিছু বুঝবে না।’

তিনি বলেন, ‘২৬ তারিখ দুপুর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান সাহেব জাতির পিতার ঘোষণা পাঠ করছিলেন। যে ঘোষণা ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানিরা আক্রমণ করে তখনই তৈরি করা হয়। পাকিস্তানিরা যেকোনো মুহূর্তে আক্রমণ করতে পারে, তার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের সবরকম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। কোথায় যেতে হবে, কী করতে হবে, কোথা থেকে অস্ত্র আসবে, কীভাবে ট্রেনিং হবে- সব ব্যবস্থাই তিনি করে দিয়েছিলেন। এসব নির্দেশনা দিয়ে তিনি সবাইকে চলে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আক্রমণ চালায় সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণা পিলখানায় ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে প্রচার করা হয়। রেডিও টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ স্টেশন থেকে এই তথ্যটা সঙ্গে সঙ্গে সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। ২৬ তারিখ সেই ঘোষণা স্বাধীন বাংলা অর্থাৎ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হয়। আমাদের আওয়ামী লীগের নেতারা একের পর এক সেই ঘোষণা দিতে থাকেন। চট্টগ্রামে আমাদের আখতারুজ্জামান বাবু ভাইয়ের বাসাটাই ছিল একটা স্টেশন। সেখানে সবাই মিলিত হতো। এবং সেখান থেকে সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে তারা চলে যেত। সেই সময় জহুর আহমেদ চৌধুরী বললেন, আমরা তো ঘোষণা দিয়েই যাচ্ছি, সেনাবাহিনীর কাউকে নিয়ে আসো, তাহলে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব আসবে।’

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলতে থাকেন, ‘মেজর রফিক সেখানে অ্যামবুশ করে বসে ছিলেন। প্রথমে মেজর রফিককে বলা হলো- আপনি আসেন, ঘোষণাটা একবার দিয়ে যান। মেজর রফিক বললেন, আমি এখানে অ্যামবুশ করে বসে আছি। আমি যদি এখান থেকে সরি তাহলে পাকিস্তানি হানাদারা বাহিনী এই জায়গাটা দখল করে নেবে। ওই সময় জিয়াউর রহমান যেহেতু জনগণের কাছেই ধরা ছিল তাই তাকেই নিয়ে আসা হয়। এরপর তাকেই দিয়ে ঘোষণাটা পাঠ করানো হয়। সেভাবেই তাকে ঘোষক বলে প্রচার চালায় বিএনপি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর জিয়াউর রহমান যে ২৫ ও ২৬ মার্চ রাতে মানুষ হত্যা করেছে সেকথাটা সবাই ভুলে যায়। সে তো আগাগোড়াই পাকিস্তানের দালালি করে আসছে। তার জন্মই তো ওখানে। তার লেখাপড়া পাকিস্তানে। সে কবে বাংলাদেশের হলো? চাকরি সূত্রে এখানে এসেছিল। সেই সূত্রে বিবাহ করে পরবর্তী সময়ে থেকে যায়। এই তো বাস্তবতা। তারপরও যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে সবাইকে সম্মান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এদের চরিত্র তো বদলায়নি। ঠিকই বেঈমানি-মোনাফেকি করেছে। ছিল মেজর, বঙ্গবন্ধুই তাকে প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করেছিলেন। আর সেই কিনা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডেরর মূল হোতা।’

‘যারা ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে, যারা এদেশটাকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, তাদের তৈরি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ কী-ইবা আশা করতে পারে’- বলেন আওয়ামী লীগ প্রধান।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন