বিজ্ঞাপন

৭৯০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্রে ভিসি কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ ১১১টি

March 13, 2021 | 6:45 pm

ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট

রংপুর: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে দ্বিতীয় দফায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) টিম আসার আগের দিন উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র প্রকাশ হয়েছে। ৭৯০ পৃষ্ঠার এই শ্বেতপত্রে বেরোবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির ১১১টি অভিযোগ তুলে ধরেছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদে’র ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এই শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়। শ্বেতপত্রে তবে বেরোবি প্রশাসনের বিরুদ্ধেও বেশকিছু অভিযোগ করা হয়। তবে এসব অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে গণমাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা না মেনে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক অনুপস্থিত থাকা, ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে বসে একাডেমিক কার্যক্রম চালানো, উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি, প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়ম করে স্বজনপ্রীতি, জালিয়াতি, ভর্তি বাণিজ্য, হয়রানি, নির্যাতন, নিপীড়ন ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরা হয়।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ড. কলিমউল্লাহকে রাষ্ট্রপতি ২০১৭ সালের ১৪ জুন সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে উপস্থিতির শর্তে উপাচার্য পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এখানে যোগ দেওয়ার পর ১৩৫২ দিনের মধ্যে ১১১৫ দিনই ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থেকেছেন। ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে বসে নানা ধরনের দুর্নীতি-অনিয়ম, স্বাজনপ্রীতি, ভর্তি বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। উপাচার্য এসব দুর্নীতি করেন সংঘবদ্ধভাবে। তিনি এসবের মূল নায়ক। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির সব রেকর্ড ভেঙে সংঘবদ্ধ দুর্নীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে দুর্নীতির এই চক্র তৈরি করেছেন তিনি।

নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে ধরে ড. মতিউর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সংস্থা জানিপপের (জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ) সঙ্গে যুক্ত এবং কিছু কিছু অঞ্চলের প্রার্থীরা প্রাধান্য পেয়ে থাকেন। এছাড়া নিয়োগ বাণিজ্যেরও অভিযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ও উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে রয়েছেন উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ এবং তার মা। দু’জনে মিলেই শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উপাচার্য নিজেই, ওই অনুষদের ডিন পদেও রয়েছেন উপাচার্য। উপাচার্য হিসেবে তিনি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি, অনুষদের ডিন হিসেবেও তিনি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য আর বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তিনিই সদস্য। অন্যদিকে তার মা বিষয় ‘বিশেষজ্ঞ’ সদস্য।

উপাচার্যের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ কেনাকাটাতেই সরকারি ক্রয়নীতি অনুসরণ না করে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। উপাচার্যের দুর্নীতি সহযোগী শিক্ষক-কর্মকর্তারাও গত সাড়ে তিন বছরে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে উপাচার্য কলিমউল্লাহসহ কয়েকজন কর্মকর্তার নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট একটি ইট বিছানো রাস্তা নির্মাণ দেখিয়ে অন্তত ৫০ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। রাস্তা নির্মাণের এই কাজ করেছে একটি ফলের দোকানদার।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর থেকে তিনি প্রায় তিন বছর পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও পরিচালকসহ একাই ১৬টি প্রশাসনিক পদে থেকে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললে ড. কলিমউল্লাহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দমন করার জন্য কোনো তদন্ত ছাড়াই সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নিয়ে অবৈধভবে শোকজ নোটিশ দেন, সতর্ক করেন। উপাচার্য আইন লঙ্ঘন করে এ পযর্ন্ত ১৪ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে রেখেছেন। ভুক্তভোগীরা আদালতের দ্বারস্থ হলে আদালত থেকে যে নির্দেশ দেওয়া হয়, তাও তিনি অমান্য করেন। লিয়াজোঁ অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজ করার নামে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, ভুয়া বিলে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।

উপাচার্য কলিমউল্লাহ বঙ্গবন্ধুর দর্শনবিরোধী উল্লেখ করে মতিউর রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মনে-প্রাণে ধারণ করতে পারেন না ড. কলিমউল্লাহ। সম্প্রতি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে দায়সারাভাবে অর্থ নয়-ছয় করে ক্যাম্পাসের অখ্যাত স্থানে বঙ্গবন্ধুর নিম্নমানের ম্যুরাল স্থাপন করে রাজনীতির এই মহানায়কের প্রতি অবজ্ঞারই প্রমাণ দিয়েছেন। গত বছর ৬০টিরও বেশি গবেষণায় আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হলেও এক শিক্ষককে বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণার জন্য বরাদ্দ দেননি তিনি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, অধিকার সুরক্ষা পরিষদের পক্ষ থেকে শ্বেতপত্রে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ১১১টি অভিযোগ এনে শ্বেতপত্র প্রকাশের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে প্রতিবাদ জানিয়েছে। গণমাধ্যমে পাঠানো এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আগামীকাল রোববার (১৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের একটি কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তদন্ত করতে আসবে। তাদের তদন্তকে প্রভাবিত করতেই এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক। এসময় সংগঠনের সদস্য সচিব খায়রুল কবির সুমন, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার, ড. তুহিন ওয়াদুদ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসনীম হুমায়দা, রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন-

ভিসি কলিমউল্লাহর বক্তব্য সবই মিথ্যা: ইউজিসি

কলিমউল্লার অভিযোগ বানোয়াট: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

স্পিকার-মন্ত্রীর তদবির না শোনায় তারা রুষ্ট হয়েছেন

যা করেছি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে করেছি: কলিমউল্লাহ

বেরোবির পরিস্থিতির জন্য দায়ী শিক্ষামন্ত্রী: কলিমউল্লাহ

বেরোবির পরিস্থিতির জন্য দায়ী শিক্ষামন্ত্রী: কলিমউল্লাহ

১৩৫২ কর্মদিবসে ১১১৫ দিনই অনুপস্থিত ভিসি কলিমউল্লাহ

ভিসি কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে ইউজিসির কাছে ১০৮ অভিযোগ

উপাচার্য কলিমউল্লাহকে বেরোবি ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

ভিসি কলিমউল্লাহর ‘দুর্নীতির ৭৫৮ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র’ প্রকাশ কাল

ঘেরাও কর্মসূচি থেকে বাঁচতে ঢাকায় সিন্ডিকেট সভা করি: কলিমউল্লাহ

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন