বিজ্ঞাপন

মওদুদ আহমদ আর নেই

March 16, 2021 | 7:08 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আর নেই। মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। সত্তর দশকের শেষভাগ ও আশির দশকে মওদুদ আহমদ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, দুই দফায় উপপ্রধানমন্ত্রী ও একবার উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেসউইং সদস্য শায়রুল কবির খান সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মওদুদ আহমদ মৃত্যুবরণ করেন।

বর্ষীয়ান  রাজনীতিক মওদুদ আহমদ কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে বিএনপিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ২৪ মে ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমদ এবং মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মওদুদ আহমদ ছিলেন চতুর্থ।

মওদুদ আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্মান পাস করে ব্রিটেনের লিংকন্স ইন থেকে ‘ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল’ ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনে পড়া-লেখা শেষ করে দেশে ফিরে আসেন এবং হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তিনি ব্লান্ড ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলনে।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বিভিন্ন সরকারের আমলে উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, উপপ্রাধানমন্ত্রী এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

১৯৭৭-৭৯ সালে তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তাকে উপপ্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮১ সালের মে মাসে জিয়াউর রহমান নিহত হন এবং এক বছরের মধ্যে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৮৫ এর নির্বাচনে মওদুদ আহমদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং এরশাদ সরকারের তথ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

এক বছর পর ১৯৮৬ এ তাকে আবার উপপ্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং এরশাদ তাকে উপরাষ্ট্রপতি করেন। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।  জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালে মওদুদ আহমদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালেও তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা থেকে মোট পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও এক সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খান কর্তৃক আহুত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন উপমহাদেশের খ্যাতিমান এই আইনজীবী।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন