বিজ্ঞাপন

‘বদলির জেরে’ বিচারক-কর্মচারী-আইনজীবীদের বিবাদ, আদালত বর্জন

March 18, 2021 | 7:59 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা জজ আদালতে কর্মচারী বদলি সংক্রান্ত ঘটনায় বিচারক, কর্মচারী ও আইনজীবীদের মধ্যে বিবাদের ঘটনা ঘটেছে। এর জেরে, অনির্দিষ্টকালের জন্য আদালত বর্জন শুরু করেছে জেলা আইনজীবী সমিতি। ঘটনার পর থেকে আদালত চত্বরে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ বজলুর রহমান এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর প্রতিবেদনও দিয়েছেন। সেখানে তিনি ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন।

প্রতিবেদনে তিনি জানান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রেজা মো. আলমগীর হাসান ২০২১ সালের ১৫ মার্চ পিআরএল ছুটিতে যান। ওই দিন বিকাল ৫টায় তিনি তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। জজ আদালতের বর্তমান নাজির মো. মাসুদুজ্জামানকে ২০২০ সালের ৯ আগস্ট ভারপ্রাপ্ত নাজির হিসাবে দায়িত্ব দেওয়ার পর নিয়োগ ও বাছাই সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিধি মোতাবেক ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি তাকে জেলা জজ আদালতের নাজির হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

২০২১ সালের ১৫ মার্চ বিকাল ৫টায় মোহাম্মদ বজলুর রহমানকে দায়িত্ব হস্তান্তর করার পর ওই দিন রাত ১২টায় জজের বাসভবনে চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন ও বর্তমান পেশকার নুরুল হক, আপিল সহকারী শাখাওয়াত হোসেনসহ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি যান। সেখানে বসে রাত সাড়ে ১২টার দিকে মো. মাসুদুজ্জামানকে নাজির পদ হতে প্রত্যাবর্তন করে বেঞ্চ সহকারী নুরুল হককে নাজির পদে পদায়নের একটি আদেশ স্বাক্ষর করা হয়।

বিজ্ঞাপন

পরদিন কার্যালয়ে এসে ঘটনাটি জানার পর মোহাম্মদ বজলুর রহমান প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে আদেশ ও ইস্যুবই আনার জন্য বলেন। কিন্তু প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, সেগুলো আপিল সহকারীর কাছে রয়েছে। তবে আপিল সহকারী জানান, সেগুলো জজের বাসভবনে রয়েছে। এরপর সেদিন বিকাল সাড়ে ৪টার সময় আদেশ ও ইস্যু বই আনা হয়। বই দু’টি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ৩০ নম্বর আদেশটি নাজির পদে প্রত্যাবর্তনের একটি আদেশ। যে আদেশে বর্তমান নাজিরের পদোন্নতির আদেশ বাতিলের কোনো কথা লেখা নেই।

ইস্যু বই পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দায়িত্ব হস্তান্তরের যে চিঠি তাতে স্মারক নম্বর দেওয়া আছে ১২০/জি এবং নাজিরের পদায়নের যে আদেশ তাতে স্মারক নম্বর দেওয়া হয়েছে ১২১/জি। তারপর বেঞ্চ সহকারী নূরুল হক নাজির পদে যোগদানের চিঠি উপস্থাপন করলে তাকে বলা হয়, ‘যেহেতু জেলা জজ ১৫ মার্চ বিকাল ৫টায় দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন এবং তারপর রাত ১২টায় বাসভবনে বসে এ ধরনের একটি আদেশ দিয়েছেন। পরবর্তীতে জেলা জজ এসে এর সিদ্ধান্ত দেবেন।’

বিজ্ঞাপন

চুয়াডাঙ্গা ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ বজলুর রহমান আরও জানান, এরপর ১৮ মার্চ সকাল সোয়া ১০টার দিকে স্থানীয় বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৪-১৫ জন আইনজীবী ভারপ্রাপ্ত জজের খাস কামরায় আসেন এবং ওই আদেশ কার্যকর করার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। তখন তাদের বলা হয় ভারপ্রাপ্ত জজের প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। সে কারণে এর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে না।

তখন তারা উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘এই আদেশ কার্যকর করবেন কিনা বলেন তা না হলে বারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন ঘুসি মেরে টেবিলের গ্লাস ভেঙে ফেলে আমাকে মারতে উদ্যত হন। পরে পুলিশ ও আদালতের কর্মচারীরা আমাকে আইনজীবীদের হাত থেকে রক্ষা করেন। এর কিছুক্ষণ পর উচ্ছৃঙ্খল আইনজীবরা বাঁশ, কাঠের লাঠিসহ আদালতের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে বিচারকদের আক্রমণ করার চেষ্টা চালায়। সে সময় পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করে।’

এদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মোহাম্মদ বজলুর রহমান এবং দুই কর্মচারীকে জেলা থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতি।

কর্মচারী দু’জন হলেন- জেলা জজ আদালতের নাজির মো. মাসুদুজ্জামান এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এর পেশকার (বেঞ্চ সহকারী) জহুরুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কার্যকরী সদস্যদের লাঞ্ছিত ও কয়েকজনকে মারধরের ঘটনায় এই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এসময় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালিম হোসেনসহ সমিতির নেতা এবং সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সকালে জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জরুরি সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আইনজীবীরা জানান, সদ্য বিদায়ী জেলা ও দায়রা জজ রেজা মো. আলমগীর হাসান গত ১৫ মার্চ চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ কে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে যান। শেষ কর্মদিবসে তিনি জেলা জজ আদালতের নাজির মো. মাসুদুজ্জামানকে অনুলিপি শাখার প্রধান তুলনা সহকারী পদে বদলি এবং প্রেষণে রেকর্ড কিপার হিসেবে দায়িত্ব দেন। সেইসঙ্গে জেলা জজ আদালতের পেশকার (বেঞ্চ সহকারী) নুরুল হককে নাজির পদে নিয়োগ দেন। মো. মাসুদুজ্জামান গত চারদিনেও নুরুল হককে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়াতেই আদালতে অচলাবস্থা দেখা দেয়।

বিষয়টি সুরাহা করতে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক তালিম হোসেনসহ কার্যকরী পরিষদের সদস্যরা আদালত পরিচালনার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. বজলুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে খাস কামরায় যান। সেসময় বিচারকের সামনেই মাসুদুজ্জামান ও জহুরুল ইসলামসহ আদালতের কর্মচারীরা লাঠিসোঠা নিয়ে আইনজীবীদের ওপর হামলা করে।

হামলায় আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ্দিন, ও কার্যনির্বাহী সদস্য সাজ্জাদ হোসেন রকি আহত হন। খবর পেয়ে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লুৎফুল কবীরের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং আইনজীবীদের উদ্ধার করেন।

সভাপতি আলমগীর হোসেন জানান, এই হামলার ঘটনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক মামলা করা হবে। সেই সঙ্গে বিষয়টি প্রধান বিচারপতি এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন