বিজ্ঞাপন

মশা নিধনের কর্মীরা কোথায় জানতে ট্র্যাকার বসাবে ডিএনসিসি

March 21, 2021 | 10:49 am

সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মশা নিধনের কর্মীরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে না তা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক উপস্থিতি ও তাদের লোকেশন জানতে ট্র্যাকার বসানোর পরিকল্পনা করছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র (ডিএনসিসি) আতিকুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২০ মার্চ) সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে ডিএনসিসি মেয়র এ সব পরিকল্পনার কথা জানান।

মশা নিধনে নিয়োজিত সিটি করপোরেশেনর কর্মীদেরকে মাঠে পাওয়া যায় না, নগরবাসীর এমন অভিযোগ পুরোনো। প্রতিদিন মাঠে থাকার নিয়ম থাকলেও মশককর্মীদের কখনও কখনও সপ্তাহ অন্তর দেখা মিলত। আবার কোথাও কোথাও মাস পেরিয়ে গেলেও তাদের দেখা পাওয়া অতি ভাগ্যের ব্যাপার এলাকাবাসীর জন্য। এমন অভিযোগ এখনও অব্যাহত।

কিন্তু নগরবাসীর এসব অভিযোগ কর্তৃপক্ষ সব সময় উড়িয়ে দিয়ে বলত- মশককর্মীরা নিয়মিত কাজ করছে। তাদের মনিটরিং করা হচ্ছে। তাদের কাজের কোনো ত্রুটি নেই।

বিজ্ঞাপন

তবে কর্তৃপক্ষের এমন দায়হীন বক্তব্যের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে এবার খোদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলামও সংশয় প্রকাশ করেছেন মশককর্মীদের কাজ নিয়ে। তার দাবি- মশককর্মীরা যদি ঠিকমত মাঠে থেকে নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতো তাহলে মশার এমন পরিস্থিতি হতো না। তাই তাদের মাঠে সঠিক সময়ে উপস্থিতি নিয়ে আমার নিজেরও সন্দেহ!

তবে আশার কথা হলো মশককর্মীদের এমন অব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে কঠোর হচ্ছে ডিএনসিসি। এজন্য এপ্রিল মাসের মধ্যেই মশককর্মীদের কাজে ফেরা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থাৎ বায়োমেট্টিক পদ্ধতিতে হাজিরা ব্যবস্থাপনা চালু করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে কাজে থাকাকালীন কোনো কর্মী কোথায় রয়েছে সেটিও মনিটরিং করতে ট্র্যাকার বসানোর পরিকল্পনাও নিয়েছে ডিএনসিসি। এমনটাই সারাবাংলাকে জানিয়েছেন ডিএনসিসির মেয়র।

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি আগে আমার নিজের সমালোচনা করতে চাই। কারণ নিজের যত সমালোচনা করব ততই আমি কাজে সফল হবো। তাই আমি নিজের সমালোচনা করেই বলছি- আমার মশককর্মীরা ঠিকমত মাঠে কাজ করে কিনা সেটাই আমি নিশ্চিত হতে পারছি না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ যে অভিযান পরিচালনা করেছি মশার বিরুদ্ধে তাতে আমি ১২’শ মশককর্মী নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। কিন্তু প্রথম দিনই আমার মনে হয়েছে আমি যে ১২’শ কর্মী নিয়ে মাঠে নেমেছি সেখানে কি প্রকৃতপক্ষে ১২’শ জন উপস্থিত ছিল? হয়তো ছিল আবার হয়ত ছিল না। এই যে নিশ্চিত হতে পারিনি। এটা তো আমার মনিটরিং কাজে জটিলতা সৃষ্টি করেছে। কারণ সনাতন পদ্ধতিতে আমি দেখলাম হাজিরা খাতায় তাদের উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু খাতায় থাকলেও তারা বাস্তবে ছিল কিনা তা নিশ্চিত হতে আমার কিন্তু কোনো ডিজিটাল ব্যবস্থা নেই। তাই আমরা এবার ডিজিটালভাবে কর্মীদের হাজিরা নিশ্চিত করতে বায়োমেট্টিক প্রিঙ্গারপ্রিন্ট চালু করতে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে কার্যক্রম উদ্বোধন করেছি। সেই সঙ্গে কর্মীদের মনিটরিং করতে ট্র্যাকার ব্যবস্থা চালু করতে উদ্যোগ নিয়েছি।’

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এর মাধ্যমে মশক নিধন কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে এবং দায়িত্বরত অবস্থায় তারা কোথায় যায় তা দেখা যাবে। কারণ আমার অভিযানে ১২শ মশক নিধন কর্মী উপস্থিত থাকার কথা, কিন্তু তারা সবাই এসেছে কিনা তা আমরা জানি না। ফলে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা একটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। তাই সনাতনী পদ্ধতিতে থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে আমরা মনিটরিং করার ব্যবস্থা করেছি। স্মার্ট সিটি গড়ার লক্ষ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে, স্মার্ট পদ্ধতিতে সবকিছু মনিটর করতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে এই ডিভাইস দেওয়া হবে। মশক নিধন কর্মীরা দায়িত্ব শুরুর আগে এবং দায়িত্ব শেষ করার পরে এই বায়োমেট্রিক হাজিরা প্রদান করবে। আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, মনিটরিং তার মধ্যে একটি। তাই ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, ‘বায়োমেট্রিক হাজিরা ও ট্র্যাকার স্থাপনের জন্য আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে এই কাজটি সম্পন্ন করা হবে। আর এ কাজ মশক নিধন সুপারভাইজার এবং কাউন্সিলরগণ মনিটরিং করবেন।’

মশা নিধনে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘অঞ্চলভিত্তিক মশক নিধনকর্মীদের জন্য তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে মশার হটস্পট বের করার জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর, রোড ইন্সপেক্টর, সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা, কীটতত্ত্ববিদ, সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে, যে ওয়ার্ড সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন থাকবে এবং কম মশা পাওয়া যাবে সে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং তার টিমকে আগামী ডিসেম্বর মাসে স্বর্ণ পদক দেওয়া হবে।’

তবে ডিএনসিসি মেয়রের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মশককর্মীদের ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় মনিটরিংয়ের জন্য গত বছর আমরা মেয়রের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম। কারণ উন্নত বিশ্বের সব দেশে এ পদ্ধতিতে মনিটরিং করা হয়। তাই মেয়র আতিকুল ইসলাম যে উদ্যোগ নিয়েছেন এটির জন্য অবশ্যই উনাকে ধন্যবাদ দিতে হবে। আশা করছি এর মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে সংস্থাটি।’

সারাবাংলা/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন