বিজ্ঞাপন

চিকিৎসা খরচ মেটাতেই দরিদ্র হচ্ছে ১৫ শতাংশ মানুষ

December 12, 2017 | 10:43 am

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে ৪০ ভাগ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা হলেও ৫০ ভাগ মানুষ গুণগত সেবা পাচ্ছে না। দেশে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যব্যয় দিনকে দিন বাড়ছে। অথচ সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজির ১৭ টি উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম। অথচ আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা দরকার। তা না হওয়ায় দেশে ধনী-গরিব সব শ্রেণীর মানুষ চিকিৎসা সেবা পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে বাধ্য হচ্ছে। আর এ ব্যয়ের জন্য দেশের ১৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিইে প্রতিবছরের মতো পৃথিবীব্যাপী পালিত হচ্ছে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস। আর এবারে এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘হেলথ ফর অল, রেইজ ফর রাইটস বা সবার জন্য স্বাস্থ্য অধিকার।’

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টের (এএনএইচএ) সর্বশেষ ২০১৫ সালের তথ্য থেকে জানা যায়, জনপ্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ৬৭ টাকা ব্যয় হচ্ছে মানুষের পকেট থেকে। অপরদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট থেকে জানা যায়, দেশের ৬৪ শতাংশ মানুষ নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে চিকিৎসা করাচ্ছেন এবং চিকিৎসার জন্য যে টাকা খরচ হচ্ছে সেখানে ৭০ শতাংশের বেশি যাচ্ছে ওষুধের পেছনে।

মানুষের চিকিৎসা ব্যয়ের অধিকাংশ ওষুধের পেছনে ব্যয় হলেও ওষুধের অতি ব্যবহার, ডায়াগনোসিস সার্ভিস, অস্ত্রোপচারের উচ্চমাত্রার খরচ, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কেবিন এবং বেডের উচ্চমূল্য, বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চেম্বারগুলোতে চিকিৎসকদের উচ্চমাত্রার ফি, সরকারি বা পাবলিক হাসপাতালগুলোতে অবৈধ লেনদেন, সরকারি সুযোগ সুবিধার চেয়ে বেসরকারি সুযোগ সুবিধার বেশি ব্যবহার এবং শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার জন্য বেসরকারি চিকিৎসার উপর নির্ভরশীলতা চিকিৎসা ক্ষেত্রে মানুষের খরচ বাড়িয়ে চলেছে।

এদিকে, সরকারের বাজেট বাড়লেও সেবার সুযোগ বাড়ছেনা বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক পরিচালক (স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট) মো. আসাদুল ইসলাম। তিনি  বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বা ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ (ইউএইচসি) প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও তারা এটি  নিয়ে কাজ করছে।

বিজ্ঞাপন

তবে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের বর্তমান পরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, কোন ব্যক্তির মোট আয়ের মধ্যে যদি ২০ শতাংশ চিকিৎসা খাতে ব্যয় হয় তাহলে বুঝতে হবে তিনি চিকিৎসার জন্য আর্থিক বিপর্যয়ে রয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ঢাকার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা পাচ্ছে না। তাই বিগত ৫ বছর ধরে ইউএইচসি শহর, নগর, গ্রাম থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সবার মাঝে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে যতটুকু সেবা দরকার ততটুকু দিতে হবে। এমনকি এ জন্য যতটুকু খরচ তার বেশি যেন না হয়, সেটিই কোয়ালিটি হেলথ কেয়ার। সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক যেটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু সেখানে হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, হেলথ এ্যাসিসটেন্টরা শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে কোয়ালিটি সেবা দিতে পারছেনা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা ডা. মুজাহেরুল হক সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিবছর ৬৪ লাখ মানুষ দরিদ্র হচ্ছে আমাদের দেশে কেবলমাত্র স্বাস্থ্যব্যয় মেটাতে গিয়ে। আর এ খরচের প্রধান এবং অন্যতম খরচ হচ্ছে ওষুধ কেনাকেটায়। তাই সরকারের উচিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

সারাবাংলা/জেএ/জিআ

বিজ্ঞাপন

 

 

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন