বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আজ

March 26, 2021 | 12:00 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বাঙালি জাতির জীবনে অনন্য সাধারণ একটি দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধিকারের দাবিতে জেগে ওঠা নিরীহ বাঙালির ওপর চালিয়েছিল নির্মম হত্যাযজ্ঞ। এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগ মুহূর্তে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

এর পর কেটে গেছে ৫০ বছর। আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় গোটা বাঙালি জাতি পালন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

১৯৭২ সাল থেকে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনার এই দিনটিকে গৌরব ও আবেগের সঙ্গে পালন করে আসছে। কিন্তু গত বছর যখন ৪৯তম স্বাধীনতা দিবস আসে, তখন নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ব্যাপক সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব টালমাটাল। সে কারণে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোসহ রাষ্ট্রীয় সব কর্মসূচি বাতিল করা হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও স্বাধীনতা দিবসের সব কর্মসূচি বাতিল করে।

গত বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পালন করা হয় সীমিত পরিসরে। এ বছরের শুরু থেকেই কনরোনা সংক্রমণ কমতির দিকে থাকায় জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী একযোগে উদযাপন করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে সরকার। গত কয়েকদিনে সংক্রমণ বাড়লেও আজ শুক্রবার (২৬ মার্চ) স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দশম দিনের আয়োজন চলবে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে রাষ্ট্রীয় এই আয়োজন চলছে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে। ১০ দিনের এই আয়োজনে শেষ দিনের থিম ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

সুবর্ণজয়ন্তীর এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সকাল ১১টায় ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখান থেকে দুপুর ১২টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হবেন তিনি।

এর আগে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে গত ১৭ ও ১৮ মার্চ বাংলাদেশ সফর করেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ। তার সফরসঙ্গী ছিলেন সহধর্মিনী ফার্স্ট লেডি ফাজনা আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ শহিদ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রীসহ মোট ২৭ জন।

বিজ্ঞাপন

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ১৯ ও ২০ মার্চ বাংলাদেশ সফর করেন। শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন দেশটির শিক্ষামন্ত্রী, আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রতিমন্ত্রী, তাঁত ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী, গ্রামীণ গৃহায়ন ও গৃহ নির্মাণ সামগ্রী শিল্প প্রতিমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ২৮ জন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে জাতির পিতা মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে গত ২২ মার্চ ঢাকায় আসেন নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ড. লোটে শেরিং ২৩ ও ২৪ মার্চ বাংলাদেশ সফর করেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে আরও অনেক বিশ্বনেতাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারলেও ভিডিওবার্তায় ৫১ বছরে পা দেওয়া বাংলাদেশের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ছাড়াও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশোহিদে সুগা পাঠিয়েছেন এই শুভেচ্ছাবার্তা। এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন জানিয়েছেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ভিডিওবার্তায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিসও। এসব বার্তায় সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রসংশা করেন তারা।

বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের সঙ্গে সমগ্র বিশ্ব আজ একমত— ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যার ভেতর থেকে যেভাবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল বাঙালি জাতি, আজ অবধি নিচু হয়নি সে মাথা। অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় সবগুলো সূচকে পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশকেই পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একসময় ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র তকমা জুটলেও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনীতির ‘পরাশক্তি’ হয়ে ওঠা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার, মাথাপছিু আয়, গড় আয়ু, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিট্যান্স প্রবাহ, বিনিয়োগ, জিডিপি প্রবৃদ্ধি— সব ক্ষেত্রেই উদাহরণযোগ্য উচ্চতায় আজ অবস্থান বদলে যাওয়া বাংলাদেশের।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে দেশবাসীসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নকে জনমুখী ও টেকসই করতে সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই অর্জনকে অর্থবহ করতে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) জাতির উদ্দেশে ভাষণও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষণে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উদযাপন যেন আনুষ্ঠানিকতা-সর্বস্ব না হয়, সবার প্রতি সেই আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও তাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন