বিজ্ঞাপন

কল্পনার ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তব

March 26, 2021 | 5:16 pm

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপায়নের এক অনন্য উচ্চতায় প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল ২০০৮ সালে, সেই স্বপ্ন এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান। দেশের প্রায় প্রতিটি কর্মকাণ্ডে লেগেছে অনলাইনের ছোঁয়া লেগেছে। সরকারি প্রায় সব সেবাই এখন অনলাইন নির্ভর। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই দেশে চালু হতে যাচ্ছে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা (ফাইভজি)। আর এ বছরই সারাদেশকে ফোরজি নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ২০১৮ সালে স্যাটেলাইট ক্লাবে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে সরকার। দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আওতায় চলে এসেছে। গ্রামে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন দেশের তরুণরা। প্রসার ঘটছে ই-কমার্সের। বাড়ছে ডিজিটাল লেনদেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাবে যখন সবখানে নেমে এসেছিল স্থবিরতা, ঠিক তখনও সরকারি পর্যায়ের প্রায় প্রতিটি কার্যক্রমই ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে গেছে সরকার। এখনো সভা-সেমিনারের মতো বিভিন্ন আয়োজনের বড় একটি অংশই হচ্ছে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে। বলতে গেলে সামগ্রিকভাবে দেশের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া।

গ্রাহকের সঙ্গে বাড়ছে ইন্টারনেটের ব্যবহার

দেশে প্রতিমাসেই ইন্টারনেট ব্যবহাকারীর সংখ্যা বাড়ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে ইন্টারনেটের ব্যবহার। বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহাকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ২৭ লাখ। এর মধ্যে ১০ কোটির বেশি গ্রাহক মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। আর দেশে বর্তমানে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১৭ কোটি ৩৩ লাখ। করোনায় ইন্টারনেটের ডাটার ব্যবহারও বেড়েছে। গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে একজন গ্রাহক আড়াই জিবির বেশি ডাটা ব্যবহার করেছেন, যা প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। তখন মোবাইল ফোনে কথা বলার প্রবণতা কমেছিল। ঘরবন্দি সময়ে প্রায় কমবেশি সবাই তখন ফেসবুক মেসেঞ্জারে বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে গ্রুপ ভিডিও চ্যাট করায় মেতে উঠেছিল। অন্যান্য মাধ্যমেও ভিডিও কলের প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

বিজ্ঞাপন

সুবর্ণজয়ন্তীতেই চালু হচ্ছে ফাইভজি

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা ফাইভজি চালুর লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। সে লক্ষ্যে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই ফাইভজি’র তরঙ্গ (স্পেকট্রাম) বরাদ্দের উদ্যোগ নেওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা (আইসিটি) সজীব ওয়াজেদ জয় সময় দিলে এ বছরের ১৬ ডিসম্বেরের মধ্যেই হবে এই তরঙ্গের নিলাম। এর মধ্য দিয়ে একই সময়ে ফাইভজি’র যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশে ফাইভজি প্রযুক্তি চালুর লক্ষ্য রয়েছ। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার একাধিকবার বলেছেন, দেশে ২০২১ সালেই ফাইভজি চালু করা হবে।

বিজ্ঞাপন

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সম্প্রতি সারাবাংলাকে এ প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, ‘নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে ফাইভজি চালুর লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। কিন্তু আমাদের মন্ত্রণলয় থেকে আমরা বলছি, ২০২১ সালের মধ্যেই ফাইভজি চালু করব। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ লক্ষ্যে বিটিআরসি তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যেই ফাইভজি চালুর লক্ষ্য আমাদের। এ সময়ের মধ্যে সজীব ওয়াজেদ জয়ের শিডিউল পাওয়া গেলে ওই সময়ই নিলাম অনুষ্ঠিত হবে এবং ফাইভজি চালু হবে।’

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে দেশের সবগুলো টেলিভিশন চ্যানেল তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। দেশের ভেতরে টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও ও তারহীন টেলিভিশন দেখার প্রযুক্তি ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) সেবা ‘আকাশ’-ই এখন স্যাটেলাইটের প্রধান গ্রাহক। দেশের দুর্গম ও উপকূলীয় এলাকার ৩১টি দ্বীপ এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথের আওতায়। ১১২টি ভি-স্যাটের মাধ্যমে সেখানে সরবরাহ করা হচ্ছে ব্যান্ডউইথ। ফলে মোবাইল ইন্টারনেট ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ ছাড়ায় সেখানকার মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন।

ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করছে সেখানকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষ। এছাড়া এসব এলাকা টেলিমেডিসিন ও টেলি-এডুকেশনেরও আওতায় আনা হবে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ কমিউনেকশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)।

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে দেশের প্রথম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’র সফল উৎক্ষেপণ হয়। নিজ কক্ষপথ ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রিতে পৌঁছানোর পর এর ইন অরবিট টেস্টসহ (আইওটি) নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হয়। পাওয়া যায় সফল সংকেত। উৎক্ষেপণের ছয় মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মালিকানা ও দেখভালের দায়িত্ব বুঝে নেয় বাংলাদেশ। এরপর থেকে বাংলাদেশ কমিউনেকশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)-এর অধীনে স্যাটেলাইটটির সম্পূর্ণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে কার্যক্রম। এরই মধ্যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য পরামর্শকও নিয়োগ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে এর কার্যক্রম চালু হওয়ার ঘোষণা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২-এর উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)।

প্রসার ঘটেছে অনলাইন কেনাকাটার

দেশে গত কয়েক বছর ধরেই অনলাইন কেনাকাটার প্রসার ঘটছে। তবে করোনাকালে অনলাইনে কেনাকাটা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। চাল-ডাল থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার ক্ষেত্রে ঢাকা শরের বড় অংশটিই তখন ই-কমার্স সাইট বা অনলাইন মাধ্যমেকেই বেছে নেয়। এমনকি ঈদুল আজহায় অনলাইন থেকে কোরবানির পশু কেনাও এবার বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। লকডাউনের সময় ও এলাকাভিত্তিক লকডাউনে ই-কমার্স খাত বড় ভূমিকা রেখেছে।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের মতে, গত ১০-১১ বছর ধরে ই-কমার্সকে আমরা যতটা জনপ্রিয় করতে চেয়েছি, করোনার প্রথম পাঁচ মাসে তার চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় করতে পেরেছি। আর এই পাঁচ মাসে ই-কমার্সে ৫০ শতাংশের বেশি কেনাকাটা বেড়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিওয়াইএমএনটিএস-এর এক জরিপে বলা হয়, ২০২০ সালে ভোক্তাদের অনলাইন কেনাকাটা আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ। আর দেশের ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা মধ্য জুলাইয়ে ধারণা দেন, সাধারণ সময়ের চেয়ে অনলাইন কেনাকাটা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। আর গেল বছর ৮ হাজার কোটি টাকার মতো লেনদেন হলেও এ বছর লেনদেনের পরিমাণ ১৬ হাজার কোটি টাকা।

করোনায় ভার্চুয়াল বাংলাদেশ

করোনা মহামারিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ ভার্চুয়াল বাংলাদেশে রূপ নেয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুতে এটি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ১০টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল অনলাইনে অফিস-আদালতের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করা। সাধারণ ছুটির সময় পোশাক কারখানা ছাড়া দেশের বেশিরভাগ অফিস বন্ধ হয়ে গেলেও অনলাইনে সচল ছিল গণমাধ্যম। সময়টিতে ওয়ার্ক ফ্রম হোম পন্থা অবলম্বন করেছে প্রায় কমবেশি সব প্রতিষ্ঠান। মার্চের পর থেকেই রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠনের সভা-সেমিনার, সংবাদ সম্মেলন, গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও বার্ষিক সাধারণ সভা অনলাইন মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এছাড়া করোনাভাইরাসের নিত্য দিনের তথ্য জানাতেও ব্যবহৃত হয়েছে অনলাইন মাধ্যম।

সাধারণ ছুটি কিংবা লকডাউনে সাধারণ মানুষ তাদের বন্ধু, পরিবারের অত্মীয় স্বজনের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের ভিডিও চ্যটে বা অন্যান্য মাধ্যমের গ্রুপ চ্যাটে। প্রথম দিকে ইউটিউবসহ নানা মাধ্যমে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখে সময় কেটেছে অনেকের। জুনের পর পর শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হয় অনলাইনে ক্লাস। করোনা মহামারিতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বর্তমানে দেশের প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল সেবায় এসেছে। ঘরে বসেই গ্রাহক এখন সরকারি সেবা পাচ্ছে। প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে নিত্য দিনের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ হচ্ছে। ই-নথিতে এসেছে বাংলাদেশ। দরপত্র প্রক্রিয়াও এসেছে ডিজিটালে। বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে। করোনার কারণে ট্রেনের টিকেট কাটা যাচ্ছে কেবলমাত্র অনলাইনেই। বাড়ছে ডিজিটাল লেনদেন। বিকাশ, রকেট, নগদের মতো সেবা অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। অ্যাপ-নির্ভর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। উবার ও পাঠাওয়ের মতো সেবা যাতায়তে নিয়ে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। অ্যাপ ব্যবহার করে পাওয়া যাচ্ছে মেডিসিন সেবাও। টেলিমেডিসিন, টেলি-এডুকেশন সেবায় প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশের প্রায় প্রতিটি সেবা এখন অনলাইনেই পাওয়া যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রের অঙ্গীকারে বলা হয়েছে, আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রযুক্তি জ্ঞান আহরণ ও প্রয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম। তা বিবেচনা করেই ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। এরপর গত এক যুগে আইসিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছে।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উৎসাহ আর উদ্যোগ ছাড়াও তার সুযোগ্য সন্তান আইটি বিশেষজ্ঞ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের অবদান জাতীয় পরিমণ্ডল পেরিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আর এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব। শিক্ষা ব্যবস্থায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক সম্প্রসারণ ছাড়াও প্রশাসন, ব্যাংকিং, চিকিৎসাসেবা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং গণযোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়ে আছে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন