বিজ্ঞাপন

বইমেলায় ছিল না শিশুদের ভিড়, কমেছে নতুন বইও

March 26, 2021 | 10:27 pm

নূর সুমন, নিউজরুম এডিটর

মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবারের বইমেলা পেয়েছে ভিন্ন একমাত্রা। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সেই আয়োজনে কিছুটা ভাটা পড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে বইমেলার শিশু চত্বরে। মেলায় শিশুদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে এবং তাদের জন্য নতুন বইয়ের সংখ্যাও কম।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতা দিবসের ছুটি থাকলেও তার খুব একটা প্রভাব পড়েনি শিশু চত্বরে। কিন্তু বইমেলার বাকি অংশে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। আর যেসব শিশু এসেছে তারা বাবা-মায়ের হাত ধরে বিভিন্ন স্টলে স্টলে ঘুরে নিজের পছন্দ অনুযায়ী বই দেখছে। তবে শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত নতুন বই না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে হতাশা প্রকাশ করেন অনেক অভিভাবক।

রাজধানীর কল্যাণপুরের দ্বীন কেজি জুনিয়র হাই স্কুলের নার্সারির শিক্ষার্থী আমরিন বাবা-মা’র সঙ্গে বই মেলায় এসেছে। ছোট ছোট কথায় সারাবাংলাকে সে জানায়, সে সিসিমপুর থেকে নেংটি ইঁদুর ও হলুদ ভূত কিনেছে।

বাবা-মা’র সঙ্গে বইমেলায় ঘুরতে এসেছেন সোয়াইন ও রাইদা। বড় বোন রাইদা মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী আর সোয়াইন বেসরকারি একটি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। রাইদা জানান, সে নাসির উদ্দিনের গল্প, খেলার ছলে বিজ্ঞান ও হ্যারিপটারের বই কিনেছেন।

বিজ্ঞাপন

বাবার সঙ্গে ঘুরতে আসা গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের চর্তুথ শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিন ইয়াসাদ সরকার সারাবাংলাকে জানান, বই মেলায় এসে তাকে খুব ভালো লেগেছে। সে বিজ্ঞান ও হাসির গল্পের বই কিনেছে।

এদিকে শিশু চত্বরের পাশে বিশেষ স্টল নিয়ে হাজির হয়েছে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। ‘থ্রিডি ফায়ার সিমুলেশন অ্যান্ড বুক স্টল’ দিয়েছে সংস্থাটি। সেখানে থ্রিডি কার্টুনের সাহয্যে আগুন থেকে রক্ষার নানা বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে শিশুসহ বড়দের।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে স্টলে উপস্থিত ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আল মাসুদ সারাবাংলাকে বলেন, কোথাও আগুন লাগলে কী করতে হবে, সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে আমার এই স্টল দিয়েছি। তবে মুজিববর্ষ উপলক্ষে শিশুদেরকে বেশি অগ্রধিকার দেওয়া হচ্ছে। এখানে হাই রেজুলেশনের ‘ফায়ার এক্সটিংগুইসার গেম’র মাধ্যমে সব কিছু দেখানো হচ্ছে।

এদিকে বইমেলায় এসেছে খুব একটা খুশি হতে পারেননি অনেক অভিভাবক। দুই ছেলেকে নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বইমেলায় ঘুরতে এসেছেন বেসরকারি চাকুরিজীবী হাদিউজ্জামান। বইমেলার বিষয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি সারাবাংলাকে বলেন, শিশুদের পড়ার মত নতুন বই নেই। আগের বইগুলোই রয়েছে। শিশুরা ঠিক যে ধরনের বই পড়তে চায়, সেই ধরনের বইয়ের অভাব রয়েছে।

সিদ্বেশ্বরী থেকে আসা আরেক অভিভাবক মিজানুর রহমান জানান, এবার পাঠক সমাগম খুব কম মনে হচ্ছে। এছাড়াও নতুন বইয়েরও অভাব রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে মেলায় শিশুদের উপস্থিতি কম থাকায় এক ধরনের হতাশা প্রকাশ করেন প্রকাশকরা। এ বিষয়ে প্রশ্ন করতেই সিসিমপুর স্টলের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি ইমরান সারাবাংলাকে জানান, আমরা ভালো নেই। আমাদের কিছু ভক্ত রয়েছে, তাদের জন্য এই বইমেলায় থাকা। যা বিক্রি হচ্ছে তা দিয়ে ডেকোরেশনের খরচও উঠবে না।

এজন্য করোনা মহামারির পাশাপাশি মেলার আয়োজকদের দায়ী করে তিনি আরও বলেন, আয়োজকদের খামখেয়ালীর কারণে এই অবস্থা হয়েছে। তারা সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।

ঝিঙেফুল স্টলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ইমরুল কায়েস খান বলেন, এবার মেলায় শিশুদের উপস্থিতি খুব কম। বিনোদনের ব্যবস্থা কম, তাই এই দিকে (শিশু চত্বর) তেমন কেউ আসছেন না।

প্রায় একই কথা বলেন ঘাসফড়িং স্টলের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বই বিক্রির অবস্থা ভালো না। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, করোনা মহামারি, গরম, অন্যান্য বারের ন্যায় শিশু প্রহর না থাকা এবং শিশুদের জন্য সিসিমপুরের বিশেষ আয়োজন না থাকা। কারণ সিসিমপুর শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করত। এজন্য শিশুরা বইমেলায় আসত। কিন্তু এবার না থাকায় তারও প্রভাব পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুদের উপস্থিতি কমেছে। আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছুটির পর অনেক শিশু বইমেলায় আসত। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না।

এবার মেলায় নতুন বই না থাকার বিষয়ে শফিকুল বলেন, মূলত মহামারির কারণে এবার বইমেলা হবে কি না, তা প্রকাশকরা দ্বিধায় ছিলেন। তাই নতুন বই করা হয়নি। এরপর যখন বইমেলা শুরু হলো- প্রকাশকরা আর ঝুঁকি নিতে চাইলেন না। কয়েকদিন পর মেলা চলার পর প্রকাশকরা যখন দেখলেন তারা খরচ তুলতে পারবেন না। তখন তারা নতুন বই ছাপানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। আমাদেরও পাঁচ থেকে ছয়টি বই আসার কথা ছিল। কিন্তু এই পরিস্থিতির কারণে তা আর ছাপানো হয়নি।

সারাবাংলা/এনএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন