March 29, 2021 | 8:43 pm
সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের পরিমাণ কোনোভাবেই কমছে না। বরং দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হওয়ার একবছর পেরিয়ে এসে সংক্রমণের মাত্রা আরও বাড়ছে। দেশে সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ হাজার ১৮১ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। যা দেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ শনাক্তের সংখ্যা। ২০২০ সালের মার্চের ৮ তারিখ প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের ৩৮৭ দিন পরে এই সংখ্যা শনাক্ত হয়েছে।
সোমবার (২৯ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার সই করা এক কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে জানানো হয়, দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৪৫ জন। সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যাও ৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
এর আগে, গত বছরের ২ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৯ জন করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়েছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেওয়া গত একবছরের করোনা সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম দেশে এই ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। ওই দিন তিন জনের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া যায়। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ৯ এপ্রিল একদিনে শনাক্ত হয় শতাধিক সংক্রমণ। এর ১৫ দিন পর ২৪ এপ্রিল সংক্রমণ ছাড়িয়ে যায় পাঁচশ’র ঘর।
২০২০ সালের ১১ মে প্রথমবারের মতো একদিনে সহস্রাধিক সংক্রমণ শনাক্ত হয় দেশে। একদিনে দুই সহস্রাধিক সংক্রমণ শনাক্ত হয় ওই মাসেই— ২৮ মে। ১০ দিন পরই ১০ জুন সংক্রমণ শনাক্ত হয় তিন হাজারের বেশি। এরপর থেকে ১৩ জুন বাদে ৩০ জুন পর্যন্ত প্রতিদিনই তিন হাজারের বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। জুলাই মাসেও ৩১ দিনের মধ্যে ১৪ দিনই তিন হাজারের বেশি সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছিল। সব মিলিয়ে দেশে একদিনে তিন হাজারের বেশি করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৩৭ দিন।
এখন পর্যন্ত দেশে একদিনে সর্বোচ্চ বেশি করোনা সংক্রমণ শনাক্তের রেকর্ড ছিল ২০২০ সালের ২ জুলাই। সেদিন ৪ হাজার ১৯ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। এছাড়া ১৭ জুন চার হাজার আট জন ও ২৯ জুন চার হাজার ১৪ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন। শনাক্তের পরিমাণে এই তিন দিনই রয়েছে তালিকার সর্বোচ্চ অবস্থানে। এছাড়া সাড়ে তিন হাজারের বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ১১ দিন।
২০২১ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার পর্যায়ক্রমে কমে আসতে থাকলেও মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে এটি বাড়তে থাকে। ২৩ মার্চ দেশে তিন হাজার ৫৫৪ জনের মাঝে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ২৪ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে তিন হাজারের উপরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। গত ২৮ মার্চ দেশে তিন হাজার ৯০৮ জনের মাঝে সংক্রমণ শনাক্ত হয় যা বাংলাদেশের করোনা ইতিহাসে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতি খারাপে দিকে। আর এমন অবস্থায় যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টের পাওয়ার সংবাদ আশঙ্কাজনক। একইসঙ্গে দেশের মানুষ যদি এখনও স্বাস্থ্যবিধি এড়িয়ে চলে, মাস্ক না পরে তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। তখন হাসপাতালে জায়গা দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট একটা কারণ হতে পারে। তবে মূল কারণ কখনোই না। এক্ষেত্রে সংক্রমণ বাড়ার জন্য মূলত দায়ী আমাদের জীবনাচরণে স্বাস্থ্যবিধিকে গুরুত্ব না দেওয়া। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনসমাগম এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এই মুহূর্তে খুবই জরুরি এবং একইসঙ্গে মাস্ক পরাটাও। ভ্যাকসিন দেওয়ার পড়েও অনেকে রিল্যাক্স হয়ে ঘুরছে। এটাও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে আমাদের জন্য। কারণ, ভ্যাকসিন দিলেই সবার মাঝে অ্যান্টিবডি গড়ে উঠবে আর করোনা সংক্রমণ হবে না- এমনটা কিন্তু কোথাও বলা হয় নাই। সুতরাং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারিভাবেও চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এরইমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে কিছু প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বার্ন ইনস্টিটিউটকে কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড করা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে আমাদের স্বাস্থ্যবিধিটা বেশি করে মানতে হবে, যাতে হাসপাতালে কাউকে না আসতে হয়।’
সারাবাংলা/এসবি/এমও