বিজ্ঞাপন

ধোলাইপাড়ে হচ্ছে না বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য!

April 4, 2021 | 5:12 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর ধোলাইপাড় মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২ এপ্রিল) দিবাগত গভীর রাতে ভাস্কর্য তৈরির সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়া হয়। ফলে স্বপ্নের পদ্মাসেতু দিয়ে ঢাকার প্রবেশমুখে আর হচ্ছে না বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য— এমনটিই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সবুজ উদ্দিন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্মাণাধীন স্থান থেকে নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আপাতত কাজ বন্ধ আছে। পুনরায় অনুমতি পেলে আবার কাজ শুরু হবে।’

শনিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধোলাইপাড় মোড়ে যে স্থানটিতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের কথা ছিল, সেখানে ইট-কাঠ, বালু, সিমেন্ট, রড, টিন, বেষ্টনী ত্রিপল— কোনো কিছুই নেই। কেবল ভাস্কর্যের বেদীটা সেখানে রয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

ধোলাইপাড় মোড়ের পূর্ব পাশে অবস্থিত দোলা ও আনন্দ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মো. কাউসার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুনছি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য আর এখানে হবে না। গতকাল (শুক্রবার) গভীর রাতে পুলিশের বড় বড় ট্রাক এসেছিল। র‌্যাবের গাড়ি এসেছিল। অনেক পুলিশ সদস্য সেখানে ছিলেন। তখন চারদিক দিযে ঘেরা ত্রিপল নিয়ে যান। আজ শুনলাম বেষ্টনীর টিনও নিয়ে যাওয়া হবে। এখানে আর কোনো ভাস্কর্য হবে না।’

‘ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের একাধিক কর্মকর্তা ও ভাস্কর্য নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সঙ্গে কথা বলে আমি এসব জেনেছি,’— বলেন মো. কাউসার হোসেন।

তবে ধেলাইপাড় মোড়ের ফলের দোকানদার সুমন মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুনছি ভাস্কর্য অন্যখানে তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকে এখানে এনে বসাবে। এর আগে এখানেই তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। হেফাজতের বিরোধিতার ফলে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) রাতে পুলিশ এসে ভাস্কর্য নির্মাণের সরঞ্জাম নিয়ে গেছে। টিনও নাকি সরানো হবে।’

বিজ্ঞাপন

 

‘সরকার চাইলে যেকোনো কিছু করতে পারে। কেউ বিরোধিতা করুক আর না করুক। ধোলাইপাড় মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাসকর্য বসবে কি না, তা সরকারই ভালো জানে,’— বলেন সুমন মিয়া।

ধোলাইপাড় মোড়ের পশ্চিম পাশে ফার্মেসি সহকারী আজাদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বসানোর উদ্যোগ নেওয়ায় এখানকার লোকজন খুবই খুশি হয়েছিল। এটা হলে সবাই বলত, ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য রয়েছে। সবার পরিচয়ের জায়গা হয়ে উঠত এই ধোলাইপাড়। কিন্তু হেফাজতের বিরোধিতার ফলে এটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ভাবছিলাম সরকার এটি তৈরি করেই ছাড়বে। কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত গতকাল সবকিছু সরিয়ে ফেলেছে কর্তৃপক্ষ। এখন বেষ্টনীর টিন বাকি আছে। সেগুলোও নাকি সরিয়ে ফেলা হবে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য আর এখানে বসছে না।’

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে পদ্মাসেতু দিয়ে ঢাকার প্রবেশমুখ রাজধানীর ধোলাইপাড় মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

কিন্তু হেফাজত ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে। এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কুষ্টিয়ায় নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলা হয়।

ওই সময় ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো সংবাদ সম্মেলন, বিবৃতির মাধ্যমে ভাস্কর্যের বিরোধিতা জানায়। তবে হাক্কানি আলেম সমাজ ও ইসলামী জোটসহ ওলামা-মাশায়েখদের কেউ কেউ ভাস্কর্য ও মূর্তিকে এক করে না দেখার আহ্বান জানান। তারা ভাস্কর্যকে সংস্কৃতির অংশ বলে অভিহিত করেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হেফাজত ইসলামের একটি প্রতিনিধি দল সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের পর ধোলাইপাড় মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (২ এপ্রিল) রাতে সেখান থেকে সব নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেওয়া হলো।

সারাবাংলা/ইউজে/এজেড/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন