বিজ্ঞাপন

কয়লাভিত্তিক ৬ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টিরই অগ্রগতি নেই

March 24, 2018 | 8:06 am

।। হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : দেশে সরকারি, বেসরকারি ও যৌথ বিনিয়োগে প্রায় ২০টি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে এই কেন্দ্রগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও কার্যত কোন অগ্রগতি নেই। এর মধ্যে সরকারি কেন্দ্র রয়েছে ৬টি। ৬টির মধ্যে মাত্র একটি কেন্দ্র বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার জন্য তৈরি হলেও অন্যগুলোর অগ্রগতি একেবারেই কম। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের এক বৈঠকে কয়লাভিত্তিক এসব কেন্দ্রের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান।

বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, আমরা সরকারি কয়লা ভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর কাজ দ্রুততার সঙ্গে ও নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলেছি।

তিনি বলেন, বড়পুকুরিয়ায় নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এখন পরীক্ষামূলক উৎপাদনে আছে। আমরা আশা করছি আগামী জুলাই মাসে এটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎ সচিব আরও জানান, এই কেন্দ্রগুলোর প্রতিটি কাজ ও অগ্রগতি মন্ত্রণালয় থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ২০১০ সালে কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে ১২’শ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই কেন্দ্রের ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়। পরে ২০১৭ সালে জুলাইয়ে জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামকে নির্মাণ ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তবে নির্মাণ এলাকায় এখনও জমি পুর্নবাসনের কাজ শেষ করতে পারেনি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (সিপিজিসিবিএল)।এছাড়াও হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলায় বেশ কয়েকজন জাপানি নাগরিক খুন হওয়ার পর এই কেন্দ্রের কাজ বেশ কয়েক মাস ধরে বন্ধ ছিল। এখন সরকারি কেন্দ্রগুলোর মধ্যে এই কেন্দ্রে সর্বাধিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

কক্সবাজারের মহেশখালীতে ১৩শ ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরেকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য এখন জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের এরই মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে ৫৭৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ক্ষতিপূরণ হিসেবে অতিরিক্ত ৭৪২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা দিয়েছে সরকার। জমির পুর্নবাসন ও ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা পরিশোধ করা হলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিয়োগে কোন চুক্তি হয়নি। এর ফলে এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় অর্থে সংস্থানও এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। যে কারণে কবে নাগাদ এই কেন্দ্রের নির্মাণ শুরু হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজারের পেকুয়াতে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক একটি কেন্দ্র করার উদ্যোগ নিয়েছে ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি (ইজিসিবি)। প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহনকৃত জমির মূল্য গত বছর জেলা প্রশাসনের কাছে দেয়া হলেও এখনও ক্ষতিপূরণ ও পুর্নবাসনের কাজ শেষ হয়নি। ফলে জমির দখল বুঝে পায়নি ইসিজিবি।

এদিকে, ক্ষতিপূরণ ও পুর্নবাসনের কাজে দেরি হওয়ার কারণে জমির অতিরিক্ ক্ষতিপূরণের দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির প্রতিবেদনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য জাপানের মিতসুই কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হলেও চুক্তি শিগগির হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

পটুয়াখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার উদ্যোগ নিয়েছে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি (এপিএসসিএল)। কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য এরইমধ্যে প্রথম ধাপে ২৮৯ একর জমি অধিগ্রহনের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া এই কেন্দ্রের জন্য আরও ৪১৬ একর জমি অধিগ্রহন করার জন্য এপিএসসিএলের একটি প্রস্তাব পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে এই কেন্দ্রের জন্য করা ডিপিপি ( ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল) এখনও পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন পায়নি। জমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়নের কাজ এখনও শুরু না হওয়ার কারণে এই কেন্দ্রের নির্মাণের কাজ কবে শুরু বা শেষ হবে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কেউ কিছু বলতে পারছে না।

এছাড়া এপিএসসিএল দেশের উত্তরবঙ্গে ১২’শ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার উদ্যোগ নিলেও এখনও প্রাকযোগ্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করতে পারেনি। এজন্য ৫টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব যাচাইয়ের কাজ চলছে বলে জানান প্রকল্প উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, মহেশখালী, পটুয়াখালী, পেকুয়া ও উত্তরবঙ্গ-এই চারটি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের জন্য এখনও ঠিকাদার নির্ধারণ না হওয়ার কারণে অর্থায়ন ও নির্মাণ কাজ কবে শুরু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা নির্ভর খনি মুখে করা ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার (৩য় ইউনিট) কেন্দ্রটি গত মাসের শেষ থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। আগামী জুলাই মাসে কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদন আসবে বলে পিডিবির এক কর্মকর্তা জানান।

সারাবাংলা/এইচএ/এমএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন