বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে রমজানের ভোগ্যপণ্য, খালাস নিয়ে শঙ্কা

March 24, 2018 | 9:15 am

।। রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিশ্ববাজারে দাম কম থাকায় রমজানকে সামনে রেখে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি করছেন দেশীয় আমদানিকারকরা। চট্টগ্রাম বন্দরে এ পর্যন্ত খালাসযোগ্য ভোগ্যপণ্য আছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন। আমদানির এই গতি অব্যাহত থাকলে ও নির্ধারিত সময়ে খালাস হলে রমজানে চাহিদার চেয়ে বেশি ভোগ্যপণ্য বাজারে থাকবে এবং দাম স্থিতিশীল থাকবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে আমদানিকারকদের দেওয়া তথ্য অনুসারে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা কনটেইনার ও খোলা পণ্য খালাস ধীরগতি আছে। এতে সঠিক সময়ে খালাস হয়ে ভোগ্যপণ্য বাজারে পৌঁছাবে কি না সেটা নিয়ে শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা।

ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের উচিৎ রমজানের বাজারের কথা চিন্তা করে ভোগ্যপণ্য খালাসকে প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়া। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা আমদানিকারকেরা সেটা পাচ্ছি না। ডিমান্ড এবং সাপ্লাই ঠিক রাখতে হলে বন্দরকে তড়িৎ গতিতে পণ্য ডেলিভারি দিতে হবে। এতে রমজানে বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম ঠিক থাকবে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি চট্টগ্রাম চেম্বারের এক অনুষ্ঠানে চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বন্দরের বিভিন্ন সমস্যায় কারণে পণ্য খালাসে সংকট সৃষ্টির বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি মন্ত্রীকে এই সংকট সমাধানের তাগিদ দেন।

ব্যবসায়ীদের এই শঙ্কা নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) জাফর আলম সারাবাংলাকে বলেন, এটা অহেতুক বন্দরকে দোষারোপ করার প্রবণতা। আমরা দেখেছি ৪০ শতাংশ আমদানিকারক জাহাজ আসার পরও সময়মতো কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন না। এতে কাস্টমসের ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যায় না। জাহাজ সাগরে ভাসে আর দোষ পড়ে বন্দরের উপর। ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ জাহাজের পণ্য খালাসে বিলম্ব হয় কাস্টমসের কারণে। তাদের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন জটিলতায় ক্লিয়ারেন্স আটকে থাকে। এসব দেখার দায়িত্ব বন্দরের নয়। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স দিলে আমরা ৩-৪ দিনে খালাস করে দিচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

বন্দর দিয়ে আমদানিযোগ্য রমজানের অত্যাবশ্যকীয় ভোগপণ্যের মধ্যে আছে চিনি, ভোজ্য তেল, ডাল, ছোলা ও গম। এ ছাড়া খেজুর ও চালের চাহিদা আছে।

বন্দর ও আমদানিকারকদের সূত্রমতে, ভোগ্যপণ্য নিয়ে ১৫টি বাল্ক কার্গো (খোলা পণ্যবোঝাই জাহাজ) গত এক মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ জাহাজেরই খালাস চলছে। তবে খালাসের গতি নিয়ে অসন্তোষ আছে আমদানিকারকদের মধ্যে।

২২ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে অশোধিত চিনি বোঝাই তিনটি জাহাজ। তিনটি জাহাজে ৫৫ হাজার, ৫০ হাজার ও ৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি আছে।
গম নিয়ে এসেছে পাঁচটি জাহাজ। ৩১ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন গম নিয়ে একটি, ৫৩ হাজার, ৬০ হাজার, ৫৭ হাজার এবং ৬০ হাজার গম নিয়ে আরও চারটি জাহাজ এসেছে।

বিজ্ঞাপন

৪ হাজার মেট্রিকটন ও ৫ হাজার মেট্রিক টন চাল নিয়ে এসেছে দুটি জাহাজ। ১৬ হাজার মেট্রিকটন এবং ৩০ হাজার মেট্রিকটন সয়াবিন তেল নিয়ে দুটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থান করছে। ৯ হাজার মেট্রিকটন, ১২ হাজার মেট্রিক টন এবং ৯৫০০ মেট্রিক টন পাম অয়েল নিয়ে তিনটি জাহাজ এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। কনটেইনারে করে ডাল ও ছোলা এবং অন্যান্য ভোগ্যপণ্য নিয়ে আরও কয়েকটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসার অপেক্ষায় আছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টি কে গ্রুপসহ ৯টি শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এবং ক্ষুদ্র আমদানিকারকেরা এসব জাহাজে করে পণ্য এনেছেন বলে বন্দর ও আমদানিকারকদের সূত্রে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ সারাবাংলাকে বলেন, মে মাসের মাঝামাঝিতে রমজান শুরু হবে। এপ্রিলে আরও অনেক ভোগ্যপণ্য আসবে। বিশেষ করে রমজান শুরুর ১৫দিন আগে আমদানিকারকরা তাদের পণ্য খালাসের জন্য সবচেয়ে বেশি তোড়জোড় শুরু করবেন। মূলত তখনই সংকট শুরু হবে বলে আমাদের ধারণা। এখন খালাসে যে সহনীয় পরিস্থিতি আছে সেটা হয়ত তখন থাকবে না। বাল্ক কার্গোর জট তৈরি হতে পারে। কারণ জেটি ও লাইটারেজ জাহাজের সংকট আছে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এখন ভোগ্যপণ্যের দাম কম। সে জন্য ব্যবসায়ীরা আমদানির দিকে ঝুঁকেছেন। খালাসে সমস্যা হলে জাহাজের গড় অবস্থানকাল বেড়ে যাবে। এতে আমদানিকারকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এর প্রভাব পড়বে পণ্যমূল্যের উপর।

বন্দর সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পণ্য খালাসে নিয়োজিত আছে ১ হাজার ৪৫০টি লাইটার জাহাজ (অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী ছোট জাহাজ)। পণ্য আমদানির যে গতি, তার সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে দরকার আরও অন্তত ৩০০টি।

বাল্ক কার্গোতে করে বন্দরে যেসব পণ্য আছে সেগুলো ভেড়ার জন্য বন্দরে জেটি আছে মাত্র ছয়টি। অথচ ভোগ্যপণ্য এবং সিমেন্ট-স্টিলের পাতজাতীয় ইস্পাত পণ্য খালাসের জন্য বন্দরে নতুন জেটি নির্মাণ করা দরকার। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে একটিও নতুন জেটি নির্মাণ হয়নি।

লাইটারেজ জাহাজ ও জেটি সংকটের কথা স্বীকার করলেও চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন) জাফর আলম সারাবাংলাকে বলেন, সংকটের কথা বলা হলেও জেটি তো খালি পড়ে থাকছে। তিনদিন আগে একটি বাল্ক কার্গো পণ্য খালাস করে চলে গেছে। গত তিনদিন ধরে তো সব জেটি খালি পড়ে আছে। তিনদিন আগে বার্থে কনটেইনারবাহী জাহাজ ছিল ১০টি। বাইরে ছিল চারটি। সেগুলো থেকে তো খালাস চলছে। সমস্যা তো নেই।

তবে চট্টগ্রাম বন্দরের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং চট্টগ্রামের পাইকারী ভোগপণ্য বিক্রেতাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য। তাদের মতে, প্রতিবছর রমজানের আগে ভোগ্যপণ্য খালাসে সংকটের একটি ইস্যু সৃষ্টি করা হয় কৃত্রিমভাবে। মূলত আমদানি করা ভোগ্যপণ্য নিয়ে জাহাজগুলো সাগরে ভাসলেও পণ্য খালাসের তোড়জোড় থাকে না আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের। বাজারে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানোর জন্যই এই সংকট তৈরি করা হয়।

সারাবাংলা/আরডি/ এমএইচ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন