বিজ্ঞাপন

ছাদে চৈতালী চাষাবাদ

April 9, 2021 | 10:00 am

আহসান রনি

কয়েক মাস ধরে শীতের বাহারি যেসব ফুল ছাদবাগানে রঙ ছড়াচ্ছিল তাঁর সবই এখন প্রায় নিষ্প্রভ। মুটিয়ে যাচ্ছে গাঁদা, ডালিয়া, সিলভিয়া ভার্বেনা আর শুকিয়ে যাচ্ছে ডালপালা। চৈতালি হাওয়ায় দুলতে দুলতে জানান দিচ্ছে বার্ধক্য এসে গেছে, হয়েছে যাবার সময়। ফলে একে একে খালি হচ্ছে টব আর বেড়। তাই দেরি না করে খালি টব আর বেড়গুলোতে হালকা গোবার সার মিশিয়ে লাগিয়ে ফেলুন শসা, চিচিঙ্গা, করলা, কাকরোল, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটাশাক, পাটশাক, গিমাকলমি ইত্যাদি।

বিজ্ঞাপন

ছাদে সবজির বেড তৈরির জন্য কিছু নিয়ম মানতে হবে। যেমন, ছাদের যেসব জায়গায় সারাদিন রোদ পড়ে বা যেসব অংশে বিল্ডিংয়ের ছায়া পড়ে তা লক্ষ্য রেখে সবজি চাষ করতে হবে। সে অনুযায়ী কোন অংশে কোন সবজি লাগানো যায় তার পরিকল্পনা ও সে অনুযায়ী দরকারি জিনিসপত্র যোগাড় করতে হবে। ট্রেতে বা বেডে যে সবজিই চাষ করবেন না কেন সারি করে টব বা বেড রাখলে ছাদের সৌন্দর্য অনেকগুন বেড়ে যায়। স্থায়ী বা অস্থায়ী ট্রে বা বেড যেটাই হোক না কেন তা সবজি চাষের উপযোগী করতে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক কম্পোস্ট দিয়ে ভরাতে হবে। কম্পোস্ট কম থাকলে কমপক্ষে তিন ভাগের এক ভাগ দিতে হবে। জৈব সার হিসেবে ছাই, হাড়ের গুঁড়া ও অন্যান্য জৈব সারও মেশানো যায়।

ট্রে বা বেডে- লালশাক, পাটশাক, গিমাকলমি ইত্যাদির বীজ ফেলে নিয়মিত সেচ ও আগাছা পরিস্কার রাখলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। এছাড়া টবে বেগুন,ঢেঁড়স,মরিচ ইত্যাদি লাগিয়েও দ্রুত ফলন পাওয়া যায়। পাশাপাশি, ড্রামে বা বস্তায় চালকুমড়া,বরবটি, করলা, ধুন্দুল, মিষ্টিকুমড়া ইত্যাদির চারা বা বীজ পুঁতে নিয়মিত যত্ন করলে আশানরুপ ফলন পাওয়া যায় । তবে এসব সবজি গাছের উপরে মাচা করে দিতে পারলে গাছ বেশি পরিমানে ছড়াতে পারে এবং ফলনও বেশি হয়।

ছাদে সবজির বেড তৈরির পাশাপাশি অনেক সবজি টবেই চাষ করা যায়। তবে টবে সবজি চাষের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। তাহলে রোগবালাই যেমন কম হয় ফলনও বাড়ে । যেমন, টবে সঠিক নিয়মে মাটি ভরাট করা, মাটির সাথে অবশ্যই জৈব সার দেয়া। রাসায়নিক সার দিলে শাকসবজির স্বাদ কমে যায় ও রোগ পোকামাকড়ের আক্রমণ বাড়ে। অল্প কিছু রাসায়নিক সার দরকার হলেও তা থেকে বিরত থাকতে হবে ও জৈব সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সকাল ও দুপুরের রোদ পায় এমন স্থানে টব বা পাত্র রাখা ভাল । দুপুরের রোদ বেশি প্রখর হলে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। লতানো শাকসবজির জন্য মাচা বা বাউনির ব্যবস্থা করতে হবে।
টবে কোন আগাছা জন্মাতে দিবেন না। শসা ও কুমড়া জাতীয় সবজির জন্য হাত দ্বারা পরাগায়নের ব্যবস্থা করবেন । টবে গাছের সংখ্যা বেশি হলে পাতলা করে দিন।পাতা বা ডগার সংখ্যা বেশি হলেও তা পাতলা করে দেওয়া ভাল। রোগ ও পোকামাকড় দমনের বালাইনাশক ছিটাতে ছোট হ্যান্ড স্প্রেয়ার সংগ্রহে রাখতে পারেন। রাসায়নিক বালাইনাশকের বদলে তামাকের গুলের পানি, সাবানের পানি,নিমপাতার রস অথবা জৈব বালাইনাশক স্প্রে করতে পারেন । পোকা দেখলে প্রথমে হাত দিয়ে মেরে ফেলুন। রোগাক্রান্ত পাতা বা গাছ দেখলে তুলে ধ্বংস করুন।

বিজ্ঞাপন

চৈত্র মাসে ছাদবাগানে ফুল ফোটাতে চাইলে বেছে নিতে পারেন গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা,সূর্যমুখী, জিনিয়া, সিলোসিয়া, দোপাটি, গোলাপ ইত্যাদি। এহাড়াও সারাবছর ফোটে এমন ফুলের মধ্যে রয়েছে- জবা, কামিনী , অ্যালামন্ডা, বাগানবিলাস ইত্যাদি ।

টবে ফুলগাছ লাগাতে হলে প্রথমেই ফুলগাছের সাথে মানানসই টব সংগ্রহ করবেন । ছোট গাছের জন্য বড় টব হলে ক্ষতি নেই কিন্তু বড় গাছের জন্য ছোট টব চলবে না। প্রতি টবের জন্য্ দোঁআশ মাটির সাথে তিন ভাগের একভাগ পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরী করতে হবে। এর সাথে এক মুঠো হাড়ের গুঁড়ো,দুই চা চামচ চুন,দু মুঠো ছাই মিশাতে পারলে ভালো হয়। এতে টবের মাটি দীর্ঘদিন ধরে উর্বর থাকে। গাছকে সোজা রাখার জন্য অবলম্বনের প্রয়োজন হয়। এ কাজে বাঁশের কঞ্চি বা স্টিক এর প্রয়োজন হয় । চাইলে কাছাকাছি দোকানে সররাচর পাওয়া যায় এমন সস্থা চিকন প্লাস্টিকের পাইপও ব্যবহার করতে পারেন বিকল্প হিসেবে।

সদ্য লাগানো ফুলের চারা কয়েকদিন ছায়ায় রেখে সহনশীল করে নিতে হবে। এ অবস্থায় সকালে রোদ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কুঁড়ি আসার লক্ষণ প্রকাশ পেলে ৫০গ্রাম টিএসপি, ১০০গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫গ্রাম এমওপি সার একসাথে মিশিয়ে প্রতি গাছে ১ চা চামচ দশ দিন অন্তর দিতে হবে। বেশি দিন ধরে ফুল ফোটাতে চাইলে গাছে কখনও ফুল শুকোতে দিতে নেই। ফুল শুকানো শুরু হলেই ফুল কেটে দিতে হয়। এতে ভাল ফুল পাওয়া যায়। চৈত্রমাসে দুয়েকবার বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। ফলে টব, বেড কিংবা ড্রামগুলোতে মাটি কমে গেলে তা নতুন মাটি দিয়ে দ্রুত ভরাট করে দেয়া উত্তম যাতে বৃষ্টি হলে গাছের গোড়ার উপরিভাগে অতিরিক্ত পানি দীর্ঘক্ষণ জমে থাকতে না পারে। কারণ জমানো পানি একদিকে যেমন গাছের জন্য ক্ষতিকর পাশাপাশি মশাও ডিম পাড়তে পারে এমন পানিতে৷

বিজ্ঞাপন

পাশাপাশি চৈত্রমাসে ঝড়েরও সম্ভাবনা থাকে ফলে এ সময় ছাদের রেলিং এর উপর কোন টব রাখা একদমই উচিত নয়। সম্ভব হলে অধিকতর লম্বা গাছগুলোর জন্য শক্ত খুঁটির ব্যবস্থা করতে হবে। বড় গাছগুলো যাতে ঝড়ো বাতাসে উল্টে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং অন্য গাছকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে সেজন্য চৈত্রের শুরুতেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, গ্রিন সেভার্স

সারাবাংলা/এসএসএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন