বিজ্ঞাপন

দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে নেই গ্রামাঞ্চলের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী

April 13, 2021 | 1:11 pm

তুহিন সাইফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আরও আগেই পার হয়ে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রথম বর্ষ। এই এক বছরে বাতিল হয়েছে বেশ কয়েকটি পাবলিক পরীক্ষা, বাদ গেছে বাৎসরিক মূল্যায়নও। মহামারির এই সময়ে নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রমের জায়গা নিয়ে গেছে অনলাইন শিক্ষা আর টেলিভিশন পাঠদান। আর এতেই পিছিয়ে পড়ছে গ্রাম আর রাজধানী থেকে দূরবর্তী অঞ্চলের মফস্বলের শিক্ষার্থীরা। এদের সংখ্যা প্রায় ৭০ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

টেলিভিশন, রেডিওসহ অনলাইনের যে মাধ্যমগুলোতে এখন শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে, সেসবে গ্রামের শিক্ষার্থী সহজেই অংশ নিতে পারছে না। অর্থনৈতিক অবস্থা এবং অবকাঠামোগত সুবিধাদির কারণে শহরের শিক্ষার্থী গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় এখন যোজন যোজন এগিয়ে। তাছাড়া ক্লাস বন্ধ থাকলেও শহরের শিক্ষার্থীরা পড়তে পারছেন হোম টিউটরের কাছেও, যে শিক্ষা সেবাটি গ্রামে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। মোটা দাগে বললে, এই কারণেই গ্রাম ও শহরে, ধনী ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানগত পার্থক্যের সৃষ্টি হচ্ছে।

মহামারির সময়ে শিক্ষার অবস্থা নিয়ে গত মাসে এডুকেশন ওয়াচ যে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিল, সেখানেও এই বিষয়টি স্পষ্টভাবেই তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সংসদ টিভি, অনলাইন, রেডিও ও মোবাইল ফোনে মাত্র ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। ৬৯ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আছে এই দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের বাইরে। এরাই মূলত গ্রামীণ এবং অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক, যাদের হার ৬৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিতে না পারা এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে শতকরা ৫৭ দশমিক ৯ জন বলছে, ফোন কিংবা টেলিভিশন না থাকায় তারা ক্লাস করতে পারছে না। আবার অনলাইন সুবিধা থাকলেও নেটওয়ার্কের দূর্বলতার কথাও উল্লেখ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। যেখানে শহর অঞ্চলে এই সমস্যাটি একেবারে নেই বললেই চলে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে অভিভাবকদের অনেকে ভাবছেন অনলাইনে কিংবা টেলিভিশনে তেমন পড়াশোনা হয় না। ফলে প্রান্তিক অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে যথাযথভাবে তাগাদাও দেওয়া হয় না। তাছাড়া এই শিখন পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত না থাকায় অনেকে শিক্ষকও ঠিকঠাক মতো পড়াতে পারছেন না। পড়ালেখা হচ্ছে নামে মাত্র!

এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই পার্থক্যটি আরও স্পষ্ট হবে যখন স্বাভাবিক শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির মতো পরীক্ষাগুলোতেও গ্রামের শিক্ষার্থীরা শহরের প্রতিযোগীদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারবে না। এসএসসি ও এইচএসসিতে শহরের শিক্ষার্থীরা বেশি ভালো করবে। এই বিষয়টিকে শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। যেসব শিক্ষার্থী মহামারির সময়ে পিছিয়ে পড়ছে তাদের আলাদা গুরুত্ব দিয়ে পড়াতে হবে।’

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, ‘ফের করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে না হয়তো। কিন্তু এই সময়ে আমাদের পরিকল্পনা করতে কীভাবে মহামারি পরবর্তী সময়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। শিক্ষায় শহরে-গ্রামে এই যে ফারাকটা তৈরি হয়েছে এটাকে কিন্তু বাড়তে দেওয়া যাবে না। বিদ্যালয় খোলার পরপরই কমিয়ে আনার কাজ শুরু করে দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘এটাই কিন্তু শেষ মহামারি নয়। মহামারি আরও আসবে। হয়তো আমরা থাকব না। এখনি সময় মহামারি বিবেচনা করে শিক্ষাকে ঢেলে সাজানো। প্রতিটি গ্রামে পর্যাপ্ত সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ডিভাইস নিশ্চিত করতে হবে। আর অনলাইন শিক্ষাকে করতে হবে আরও প্রাণবন্ত। মহামারির কারণে এখন যে সমস্যাগুলো দেখা দিয়েছে, সেগুলো কীভাবে সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের বড়ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে।’

উল্লেখ্য, গেল বছরের মার্চ মাস থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সময়ে ক্লাস হচ্ছে ভার্চুয়ালি। তবে ভার্চুয়ালি পরীক্ষা না নিতে পারায় এইচএসসির মতো পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। হয়নি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেটসহ (জেএসসি) অন্যান্য পরীক্ষাও। এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও পিছিয়ে গেছে।

 

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিএস/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন