বিজ্ঞাপন

নাগরিক ভাবনায় ‘লকডাউন’

April 13, 2021 | 5:42 pm

সুশোভন সরকার অর্ক, নিউজরুম এডিটর

ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। বাড়ছে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃতের সংখ্যা। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে আগের রেকর্ড ভেঙে হচ্ছে নতুন রেকর্ড। এ অবস্থায় সংক্রমণ রোধে মন্ত্রিসভার সদস্যরা মুখে ‘লকডাউন’ বললেও কাগজে-কলমে আট দিনের জন্য ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ জারি করেছে সরকার। আগামীকাল ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এই বিধিনিষেধ।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। তবে সেসব বিধিনিষেধের তোয়াক্কা তেমন কেউ করেননি বেশিরভাগ জায়গাতেই। বিধিনিষেধ আরোপ করার পর সরকারের পক্ষ থেকেই তা দফায় দফায় শিথিলও করা হয়েছে। এ অবস্থায় আগামীকাল ১৪ এপ্রিল থেকে সরকার ঘোষিত ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে জনমনে রয়েছে প্রশ্ন, সন্দেহ। এ ক্ষেত্রে সরকারকেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলছেন নাগরিকরা।

তারা বলছেন, সরকার চাইলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে করোনা প্রতিরোধের জন্য কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পারে। তবে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে চাইলে লকডাউন হিসেবেই বাস্তবায়ন করতে হবে। কিছু জায়গা উন্মুক্ত রেখে কিছু জায়গা বন্ধ রাখলে চলবে না। আর জনগণকে সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, সব স্তরে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করলে তখন হয়তো কঠোর লকডাউন না দিলেও চলবে। সেক্ষেত্রে সরকারকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে।

লকডাউন নিয়ে নাগরিক ভাবনায় নেতিবাচক যে বিষয়টি উঠে আসছে, তা হলো প্রান্তিক মানুষের অর্থনৈতিক দুরবস্থা। তারা মনে করছেন, শহর বা নগর এলাকাগুলোতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেশি হওয়ায় এসব এলাকাতেই বিধিনিষেধের প্রয়োগটা থাকবে বেশি। আবার এসব এলাকাতেই ‍উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্তের পাশাপাশি নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীনদের সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে সব কার্যক্রম বন্ধ থাকলে অর্থনৈতিক যে প্রভাব এসব মানুষের ওপর পড়বে, তা নিয়ে ভাবছেন অনেকেই। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকলে তাই প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের জন্য তারা সরাসরি আর্থিক সুবিধা দাবি তুলেছেন।

বিজ্ঞাপন

ভ্যালুফার্স্ট ডিজিটাল মিডিয়া বাংলাদেশের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স প্রধান সামি উল ওয়াশেক সিমন সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের যে অবস্থা, তাতে কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করা খুবই জরুরি। তবে সে লকডাউন হতে হবে প্রকৃত লকডাউন। প্রার্থনার জন্য সবাই বের হবে, কিন্তু অফিস বন্ধ থাকবে— এমন লকডাউনে কাজ  হবে না।  এবারের করোনা স্ট্রেইনে শিশু-বৃদ্ধসহ সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। তাই গতবারের লম্বা সাধারণ ছুটির মধ্যে একটা পর্যায়ে যেমন অনেকেই বাইরে ঘুরতে বের হয়েছিল কিংবা পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে রাস্তায় খেলা বা শপিংয়ের মতো কাজ হচ্ছিল, এগুলো পুরোপুরি আটকাতে হবে।

তিনি বলেন, লকডাউন সঠিকভাবে কার্যকর করতে পারলে হয়তো সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও অন্তত দুই সপ্তাহের লকডাউনের কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এবং বিজিবি ও আনসারের মতো বাহিনীগুলোর মাধ্যমে শহর ও গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে এই দুই সপ্তাহের রেশন দেওয়া যেতে পারে।  তাহলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকলেও মানুষগুলো পথে বসবে না।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং অনলাইন উদ্যোক্তা তানজিম তাবাসসুম তানজু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। দেশের মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে অসচেতনতা রয়েছে। জনবহুল এই দেশে দূরত্ব মেনে কাজ করাও কঠিন। তাতে করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে কঠোর লকডাউন প্রয়োজন। কঠোর শব্দটি বলতে বোঝায় যা কিনা মানতেই হবে কিংবা যেটি মানতে সবাই বাধ্য। সরকারের উচিত সেভাবেই লকডাউন কার্যকর করা। এ ক্ষেত্রে অনেকেরইকিছু সমস্যা হবে। কিন্তু আমরা সবাই কঠোরভাবে লকডাউন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই সুস্থ থাকব, দেশ সুস্থ থাকবে। আপাতত সেটিই প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

সেরকম লকডাউন হলে অনেকেই জীবিকা হারাতে পারেন— এমন আশঙ্কা জানিয়ে তাবাসসুম তানজু বলেন, আমার স্বল্প অভিজ্ঞতা বলছে, লকডাউন দীর্ঘ হলে অনেককেই গতবারের মতো চাকরি হারাতে হবে, অনেকের আয়-উপার্জন বন্ধ থাকবে কিছুদিন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে। এসব দিকে সরকারের নজর রাখতে হবে।  যারা উপার্জনহীন হয়ে পড়বেন, তাদের জন্যও সরকারের খাদ্য বা আর্থিক সহায়তা দেওয়া উচিত।

কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করা সম্ভব কি না— জানতে চাইলে তানজু বলেন, ‘অবশ্যই সম্ভব, যদি জনগণের সহযোগিতা থাকে।  তবে লকডাউন তো সারাজীবন সম্ভব না।  নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত লকডাউন রেখে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলে তখন স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে হবে সরকারকে।’

লকডাউনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কতটুকু বাস্তবসম্মত— জানতে চাইলে তানজুর তুলনায় ভিন্নমত জানালেন রাজধানীর বাসিন্দা নাজমুন নিপা।  তিনি বলেন, ‘লকডাউনের পক্ষে আমি নই।  কারণ এ দেশে পরিপূর্ণ লকডাউন কোনোভাবেই সম্ভব না।  কারণ এর আগেও যতবারই সরকার বিভিন্ন বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার কোনোটিই বাস্তবায়ন করা যায়নি।’

তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতও মেনে নিচ্ছেন নিপা। তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা তো বলছেনই, অন্তত দুই সপ্তাহ কঠোর লকডাউন দিলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। আমারও মনে হয়, সরকার যদি তেমন স্ট্রিক্টলি এক বা টানা দুই সপ্তাহ লকডাউন দেয়, তাহলে কাজ দেবে।  এ ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীকে মাঠে নামানো উচিত।  কারণ জনগণ পুলিশকে যতটা গুরুত্ব দেয়, সেনাবাহিনীকে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে।  তবে লকডাউন হলে লকডাউন, আর না হলে সব খোলা রাখতে হবে।  সীমিত, শিথিল— এগুলো দিয়ে মনে হয় না কোনো কাজ হবে।’

বিজ্ঞাপন

সরকারের বিধিনিষেধ আরোপের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে নিপা বলেন, এখন যে ধরনের বিধিনিষেধ চলছে, এটাতে উল্টো ক্ষতি হয়েছে। সাধারণ জনগণ কাঁচাবাজার, মার্কেটে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।  বাস, ট্রেন, লঞ্চে গাদাগাদি করে বাড়ি গেছে। ফলাফল কী? ফলাফল হচ্ছে করোনার সুপারস্প্রেড।  গ্রামে যেখানে ছিল না, সেখানেও হয়তো চলে গেছে।  যানবাহন বন্ধ রেখে অফিস খোলা রাখা আর আত্মহত্যা একই কথা।  এক-আধটা লেগুনা চলছে, তাতে গাদাগাদি করে মানুষ যাচ্ছে।  এসবে করোনার লাভ, আমাদের না।

স্থপতি জাকারিয়া জাবের বলেন, ‘অন্তত একবার দুই সপ্তাহের ফুল শাটডাউন দেওয়া উচিত। তার জন্য প্রয়োজনে সেনাবাহিনী নামাতে হলে নামানো উচিত।  এরপর ভাবা উচিত পলিসি নিয়ে।  এছাড়া সংক্রমণ থামানো সম্ভব হবে না।  বেশিরভাগ অফিস কিন্তু এরই মধ্যে হোম অফিস (ওয়ার্ক ফ্রম হোম) শুরু করে দিয়েছে। গত বছর থেকেই অনেকে হোম অফিসে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সরকার শাটডাউন দিলে তারা সবাই আবার হোম অফিসে ফিরবে। সরকার অনেক সময় নষ্ট করেছে। আর বেশি সময় গেলে কিছুই করার উপায় থাকবে না।’

শাটডাউন দিলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে, তাতে মানুষের আর্থিক সংকট বাড়বে— এ বিষয়ে অনেকের আশঙ্কা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘শাটডাউন দিলে অর্থনৈতিক ধাক্কা আসবে, অর্থনীতিতে সংকট আসবে— এটাই স্বাভাবিক।  তবে আমার মনে হয় না দেশে দুর্ভিক্ষ হবে, বাংলাদেশ আর তেমন অর্থনৈতিক অবস্থায় নেই।  জনগণকে যথাযথভাবে শাটডাউন মানানো গেলে আর সরকার একেবারেই প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জন্য সহায়তার ব্যবস্থা করলে অর্থনৈতিক অবস্থাও যে খুব অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে ‍দুই সপ্তাহে— তেমনটি বোধহয় হবে না।’

মেরুল বাড্ডা এলাকায় থাকেন আশফাকুজ্জামান।  কাজ করেন বেসরকারি একটি মার্কেট রিসার্চ প্রতিষ্ঠানে। তিনি বলছেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর সরকারের কর্মকাণ্ড তুলনামূলকভাবে অগোছালো মনে হচ্ছে।

আশফাকুজ্জামান বলেন, ‘গত বছর কিন্তু সরকার করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরপরই সরাসরি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে পুলিশ-র‌্যাব, এমনকি সামরিক বাহিনীর মাধ্যমেও জারি করা বিধিনিষেধ পালন করানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু এবারে কী দেখলাম, একবার বিধিনিষেধ দেওয়া হচ্ছে, তারপর সরকারই প্রজ্ঞাপন দিয়ে গণপরিবহন চালু করছে, দোকানপাট খুলে রাখার অনুমতি দিচ্ছে। সরকারই যদি সুযোগ করে দেয়, তাহলে জনগণ মানবেটা কী? সরকারকে তো নিজের অবস্থানে কঠোর থাকতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর সরকার প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জন্য নগদ সহায়তা দিয়েছে। ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের জন্যও প্রণোদনা দিয়েছে। গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ বছর আরও কার্যকরভাবে লকডাউন প্রয়োগ করা যেত। কিন্তু সরকার তো লকডাউন বলছেই না। মন্ত্রী-এমপিরা মুখে লকডাউন বলছেন, কিন্তু কাগজে-কলমে লকডাউন নেই।  গত বছর যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, এ বছর তো সেটাও করা হচ্ছে না। সরকারের পরিকল্পনা আরও গোছানো হওয়া উচিত ছিল। সেক্ষেত্রে গত বছর একটা পর্যায় পর্যন্ত সাধারণ ছুটি জনগণ মেনে নিয়েছিল। এবারও সরকার চাইলে কঠোর লকডাউনও কার্যকর করা সম্ভব। কিন্তু সরকারকেই আগে ঠিক করতে হবে তারা কী চায়।’

লকডাউন কার্যকরের বিষয়ে জনগণের সঙ্গে সরকারের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাটিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তপন মাহমুদ লিমন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেকোনো জাতীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন সরকার ও নাগরিকের মধ্যে বিশ্বাসের জায়গা স্থাপন করা। সরকার যা বলছে, জনগণ যদি তা ভরসা করে মেনে নেয়, তাহলে প্রত্যাশা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নও সম্ভব। কিন্তু এর আগে আমরা দেখেছি, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি বিভিন্ন প্রস্তাবনা দিলেও সেগুলো তেমন বাস্তবায়িত হয়নি।  সেক্ষেত্রে সরকার বিশেষজ্ঞ ও দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে ছোট আকারেও যদি জাতীয় কমিটি করতে পারে, সেটি জনগণের মাঝে আস্থা তৈরি করবে। ওই কমিটির সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।’

সরকার যে উদ্যোগই নিক না কেন, সেটি জনগণের কাছে স্পষ্ট করার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তপন মাহমুদ। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা যা বলে, সাত দিনের লকডাউন তেমন কার্যকর নয়।  ১৪ দিনের লকডাউনে হয়তো সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।  সেক্ষেত্রে সরকার শুরুতে সাত দিনের জন্য কিছু বিধিনিষেধ দিয়েছে। এটা হয়তো আবার বাড়ানো হবে।  এটাও কিন্তু জনগণকে এক ধরনের ধোঁয়াশার মধ্যে রাখা।  ১৪ দিন হলে ১৪ দিনের জন্যই ঘোষণা দিতে হবে এবং সেটি কঠোরভাবে পরিকল্পনামাফিক কার্যকর করতে হবে। সেক্ষেত্রে নাগরিকদেরও তো প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

তিনি বলেন, এখনো দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি অনেকেই বিশ্বাসই করছেন না। আবার অনেকেই মানতে চাইছেন। সরকারের দায়িত্ব হলো পুরো বিষয়টি জনগণকে স্পষ্টভাবে বোঝানো। সেটি করতে পারলে কিন্তু জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করানোটাই সহজ হবে।

সারাবাংলা/এসএসএ/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন