বিজ্ঞাপন

বনজ কুমারের তদন্তের ফল এমনই হওয়ার কথা: বাবুনগরী

April 13, 2021 | 9:06 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রতিষ্ঠাতা আমীর শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা ও বাস্তবতা বিবর্জিত’ বলে দাবি করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। এক বিবৃতিতে তিনি মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারকে ‘আক্রমণ’ করে বলেছেন, ‘বনজ কুমার মজুমদারের তদন্তের ফলাফল এমনই হওয়ার কথা।’

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমীর শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলেও দাবি করেছেন।

২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দেশের কওমি অঙ্গনের শীর্ষ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব শাহ আহমদ শফী মারা যান। তিনি হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসার মহাপরিচালক ছিলেন। মৃত্যুর আগে ওই মাদরাসায় তিন দিন ধরে তাকে অবরুদ্ধ করে ছাত্র বিক্ষোভ হয়। এর মধ্যে শফী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এক পর্যায়ে শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হয়। পরে হেলিকপ্টারে ঢাকায় হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর শফীর পরিবার এবং হেফাজতে ইসলামের মধ্যে তার অনুসারীরা শফীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এজন্য তারা বাবুনগরী ও তার অনুসারীদের দায়ী করেন।

এরপর ১৭ ডিসেম্বর আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বাদি হয়ে চট্টগ্রামের তৃতীয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিপলু কুমার দে’র আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় মামুনুল হকসহ ৩৬ জনকে আসামি করা হয়। আদালত পিবিআইকে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেন।

বিজ্ঞাপন

মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়, মাদরাসায় ভাংচুর করে শাহ আহমদ শফীকে উত্তেজিত করার মাধ্যমে এবং উনাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে না দেওয়ার মাধ্যমে প্রাণে হত্যা করা হয়েছে। মাদরাসা অবৈধভাবে গ্রাস করার জন্য পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিশ্ববরেণ্য এই ইসলামী চিন্তাবিদকে হত্যা করেছে।

১২ এপ্রিল ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পরিদর্শক মো. মুনির হোসেন আদালতে জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করে ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এর প্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত জুনায়েদ বাবুনগরী বিবৃতিতে বলেন, ‘আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যু নিয়ে পিবিআইর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার যে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বাস্তবতা বিবর্জিত। আমরা মনে করি, বনজ কুমার মজুমদারের নেতৃত্বে তদন্তের ফলাফল এমনই হওয়ার কথা। আমরা এই উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবেদন প্রত্যাহারপূর্বক দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

বাবুনগরী বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না, এরপরও নতুন করে আমাকেসহ আরও ১২ জনকে হয়রানিমূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এই মামলা ডাহা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক। এর কোনো বাস্তবতা নেই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাড়পত্র ও ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটসহ নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রমাণের আলোকে দেশ-বিদেশের সকলের নিকট প্রমাণিত হয়েছে, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু আল্লাহতালার হুকুমে স্বাভাবিক ছিল। তিনি অনেকদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভূগছিলেন। রোগ বেড়ে যাওয়ায় একাধিকবার তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সর্বশেষ আল্লাহ ইচ্ছায় তিনি মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে ইন্তেকাল করেছেন।’

‘আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ ব্যাখ্যামূলক বিবৃতির মাধ্যমে বাস্তব সত্য মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেছেন। তার বাবার মৃত্যু স্বাভাবিক হয়েছিল বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এরপরও আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর প্রায় দুই মাস পর দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের নামে মামলা দায়ের হওয়ায় বোঝা যায়, এই মামলা কতটা হাস্যকর ও ভিত্তিহিন’- বলেন জুনায়েদ বাবুনগরী।

এদিকে পৃথক এক বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ সকল নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।

তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলায় দীর্ঘ আট বছর পর গ্রেফতার হওয়া নতুন ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আমি মনে করি। ২০১৩ সালের মামলায় এখন গ্রেফতার হওয়া কতটা হাস্যকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আজিজুল হক ইসলামাবাদী সারাদেশে হেফাজতের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন, ওপেনভাবে চলাফেলা করেছেন। অথচ এখন বলা হচ্ছে পুলিশ তাকে খুঁজে পায়নি। এর চেয়ে বড় হাস্যকর বিষয় আর কি হতে পারে !’

বিজ্ঞাপন

গত ১১ এপ্রিল রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে গ্রেফতার করে।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন