বিজ্ঞাপন

ফেসবুকে বন্দি নববর্ষ

April 14, 2021 | 3:40 pm

শাহীনূর সরকার

বাংলা নববর্ষ।  বাঙালির একান্ত যে সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা, তার এক পীঠস্থান যেন এই নববর্ষ। সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে অসাম্প্রদায়িক এই বাংলা যেন এই দিনেই সবচেয়ে বেশি উৎসবমুখর। কারণ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছে পহেলা বৈশাখ হলো উদযাপনের দিন। আর সেই উদযাপন জড়িয়ে থাকে বাংলার নিজস্ব ঐতিহ্য-কৃষ্টি। বছর ঘুরে ঠিক তেমন আরেক বর্ষবরণের ক্ষণ উপস্থিত, কিন্তু সময়টাই প্রতিকূল।

বিজ্ঞাপন

সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়াল থাবা। পৃথিবীব্যাপী করোনার বিস্তারে পহেলা বৈশাখে নিরব এই বাংলার রমনার বটমূল, গ্রামীণ জনপদের বটতলার মেলা। অন্য বছরগুলোর মতো ১৪ এপ্রিলে বাংলা মেতে ওঠেনি রঙ-বেরঙের পোশাকে, পুতুল-বাঘের মোটিফ-মুখোশে। পাড়ায় পাড়ায় বসেনি মেলা।

তবে বর্ষবরণের এই উপলক্ষ তো প্রাণের। পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক, একে তো কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। তাই করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার যখন সবাইকে ঘরবন্দি থাকতে বলেছেন, তখন ঘরে বসেও থেমেই নেই বর্ষবরণের অনুষঙ্গগুলো। ঘরের বাইরে বের হতে না পারলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়, স্মৃতি রোমন্থন। বর্ষবরণের গান, বাঙালিয়ানায় সাজগোজ— সবকিছুই হচ্ছে ফেসবুক ঘিরে।

শুভেচ্ছা কথন

বিজ্ঞাপন

শুভ নববর্ষ, পুরনো বছরের সব দুঃখ-বেদনা ধুয়ে-মুছে নতুন বছর সবার জীবনে নিয়ে আসুক সুখ আর শান্তি। পহেলা বৈশাখে বন্ধু-আত্মীয়দের প্রতি এই বার্তা এখন প্রোফাইলে প্রোফাইলে পৌঁছে দিচ্ছেন শুভাকাঙ্ক্ষীার।

গতবছর থেকে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করার প্রত্যাশা। নতুন বছরের শুভেচ্ছার সঙ্গে করোনামুক্ত নিরোগ এক পৃথিবীর প্রত্যাশাও তাই ঘুরছে ফেসবুকের দেয়ালে দেয়ালে। ভার্চুয়াল ভিউকার্ড বা নিজের বানানো শুভেচ্ছা কার্ডের ছবি দিয়েও ফেসবুক বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন অনেকেই।

বিজ্ঞাপন

এসো হে বৈশাখ এসো এসো

বাংলা নববর্ষে পাড়ায় পাড়ায় মেলা থেকে ভেসে আসা নতুন বছরকে বরণ করার গান এবার বাজছে না। তবে ফেসবুকে সেসব গান গেয়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন অনেকে। তাতে অনেক কচি কণ্ঠে ফেসবুকে বেজে উঠছে রবি ঠাকুরের চিরনতুন গান— ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো…’। পুরনো কোনো বছরে রমনার বটমূলে বর্ষরণের আয়োজনে সামিল হয়েছিলেন— সেখানকার পরিবেশনাগুলোর স্মৃতিও কেউ কেউ কেউ টাইমলাইনে শেয়ার দিচ্ছেন। বৈশাখি মেলার বাস্তবতা না থাকলেও কেউ কেউ শেয়ার দিচ্ছেন ফিডব্যাকের জনপ্রিয় সেই গান— ‘মেলায় যাই রে…’।

ফেসবুকে বাঙালি সাজ

বিজ্ঞাপন

বাঙালি নারীর শাড়ি আর ছেলেদের পাঞ্জাবি, ফতুয়া— নববর্ষে নানা রঙের, বিশেষ করে লাল-সাদার প্রধান্যই পহেলা বৈশাখের চিরপরিচিত চিত্র। বৈশাখের দিনটিতে পথে-ঘাটে এমন সাজই চোখে পড়ে সবচেয়ে বেশি। করোনা পরিস্থিতিতে সড়ক সুনসান, লাল-সাদার সেই বৈশাখি সাজ তাই বন্দি হয়েছে ফেসবুকে। বাইরে বের হওয়ার সুযোগ নেই বলে তো আর বৈশাখকে বরণ করা থেমে থাকবে না। তাই ঘরেই চলছে নববর্ষের উদযাপন। আর ফেসবুকে শেয়ার করছেন সেইসব ছবি।

জরুরি সেবায় নিয়োজিতদের নববর্ষ

করোনা সংক্রমণের বিস্তার রোধে যত কঠোর বিধিনিষেধই থাকুক না কেন, জরুরি সেবা দিতে এর মধ্যেও ঠিকই ছুটে যেতে হচ্ছে চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী এবং সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের। নববর্ষের দিনেও তাদের ব্যস্ততার শেষ নেই। তবে তার ফাঁকেই নতুন বছরের সাজে ফেসবুকে শেয়ার করেছেন বৈশাখের প্রথম দিনের ছবি।

পুরনো কথন

এ বছরের মতো গত বছর, অর্থাৎ ১৪২৭ বঙ্গাব্দের প্রথম দিনটিও কাঠাতে হয়েছিল ঘরবন্দি হয়েছে। কারণটা ছিল সেই একই করোনা সংক্রমণ। তবে এর আগের বছরগুলোর কোনোটিতেই নববর্ষ উদযাপনে জাঁকজমকের কমতি ছিল না। সেসব উৎসবমুখর দিনগুলো স্মরণ করে স্মৃতিকাতর অনেকেই। ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে এমন অনেক স্মৃতিকাতর দিনের ছবিও।

অনেকে পুরনো নববর্ষের ছবি শেয়ার দিয়ে নববর্ষকে বরণ করছেন। তাদের আশা, কোনো একদিন আবারও সুস্থ্য হবে পৃথিবী, পহেলা বৈশাখে আবারও বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। বাঙালি সাজে সেজে উৎসবে মেতে উঠবে নারী, শিশু, বৃদ্ধ সবাই।

নবজাতকের প্রথম নববর্ষ

নবজাতককে ঘিরে মা-বাবাসহ পরিবারের সবার আনন্দের শেষ নেই। নবজাতককে বাংলা নববর্ষে নতুন জামায় সাজিয়ে তাকেও বাঙালিরা এই বাংলার ঐতিহ্য-সংস্কৃতির কথা জানান দেন। করোনায় বাইরে বের হয়ে উৎসবের আয়োজন দেখানোর ইচ্ছা পূরণ না হলেও নবজাতককে নতুন পোশাক পড়িয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনেকে।

পহেলা বৈশাখকে ঘিরে ফেসবুকের দেয়ালে ভার্চুয়াল এই উৎসবের অংশ কেবল রাজধানীবাসী নয়,  সারাদেশ, এমনকি দেশের বাইরেও প্রবাসী বাঙালিদেরও এমন ভার্চুয়াল উদযাপনেই সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। এমনিতে সাধারণ অবস্থায় বাইরের উৎসবের রঙও ছড়ায় ফেসবুকে। কিন্তু এবারে রাজপথ শূন্য হয়ে পড়ায় গোটা বৈশাখই হয়ে পড়েছে ফেসবুকনির্ভর। আর তাদের সবার প্রত্যাশা একটিই— পৃথিবী নিশ্চয় আবার একদিন সুস্থ হয়ে উঠবে। আর সেই নির্মল পৃথিবীতে মানুষ আবার মুক্ত বাতাসে গলা ছেড়ে গাইবে বৈশাখের আগমনী গান, নির্মল পৃথিবীকে মানুষ আবার সাজিয়ে তুলবে রঙ-রসে।

সারাবাংলা/এসএসএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন