বিজ্ঞাপন

নগরে ভার্টিক্যাল গার্ডেন

April 16, 2021 | 10:00 am

আহসান রনি

চোখের সামনে ঘন গাঢ় সবুজ দেখতে কার না ভালো লাগে। বিশেষ করে কম্পিউটারের স্ক্রিনের সামনে একটানা তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ বারান্দার গ্রিল জড়িয়ে কাঁপতে থাকা কচি সবুজ পা৷তার দিকে তাকালেই যেন দুচোখ জুড়িয়ে যায়। কিংবা পড়তে পড়তে, লিখতে লিখতে বা একাধারে কাজ করতে করতে চোখেমুখে যে একঘেয়েমি ও বিষন্নতার ছাপ পড়ে, তা দূর করতেও দুচোখের সামনে চাই এক চিলতে সবুজ। এছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ মেলেই ঘরের দেয়ালজুড়ে সবুজ এক নিমিষিই চোখে ও মনে শান্তি এনে দেয়। আর সবুজের এসব অসম্ভব আবদার কেবল সম্ভব করতে পারে ভার্টিক্যাল গার্ডেন বা দেয়াল বাগান।

বিজ্ঞাপন

ভার্টিক্যাল গার্ডেন বাগান সৃজনের একটি বিশেষ পদ্ধতি যেখানে অল্প জায়গায় অধিক গাছ রোপণ করে সে জায়গাটিকে সবুজে সাজিয়ে তোলা যায়। যাদের ছাদে বা আঙিনায় বাগান করার সুযোগ নেই তাদের জন্য ভার্টিকাল গার্ডেন বা দেয়াল বাগান ইদানিং খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যদিও ভার্টিক্যাল গার্ডেন বাড়ির ছাদে কিংবা যে কোন পরিসরেই করা সম্ভব, তবে শহরের সবুজপ্রিয় মানুষ বিকল্প না পেয়ে বারান্দা ও ঘরের দেয়ালকেই বেছে নিচ্ছে।

যেহেতু ভার্টিক্যাল গার্ডেনে স্থরে স্থরে বা ধাপে ধাপে তুলনামূলক কম দুরত্বে একটার পর একটা গাছ রোপণ করা হয় তাই অগভীরমূলীয় প্রায় সকল বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ ভার্টিক্যাল গার্ডেনের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। তবে রোদ বা আলো বাতাসের প্রাপ্যতা ভেদে অগভীরমূলীয় ফুল, সবজি, ফল কিংবা পাতাবাহারি ইত্যাদি গাছের চারা রোপণ করেও ভার্টিক্যাল গার্ডেন গড়ে তোলা যায়।

ছাদে বা বারান্দায় যেখানে দিনে অন্তত ৪-৫ ঘন্টা সরাসরি আলো পৌঁছে সেসব যায়গায় চাইলেই ফুল বা শাক-সবজি লাগিয়েও ভার্টিক্যাল গার্ডেন গড়ে তোলা যায়। ফুলের মধ্যে বিশেষ করে শীতের ফুল যেমন পিটুনিয়া, ভার্বেনা, ডায়ানথাস, এসটার, ফ্লক্স, সিলভিয়া, জিনিয়া ইত্যাদি ফুল দিয়ে সহজেই ভার্টিক্যাল গার্ডেন করা যায়। পাশাপাশি প্রায় সারাবছর ফোটে এমন ফুল যেমন মর্নিং ডোয়ার্ফ গ্লরি, পানিকা, চাইনিজ টগর ও পুর্তলিকা দিয়েও বারান্দা ও ছাদের সৌন্দর্য বাড়ানো যায়। একইভাবে শাক-সবজি লাগিয়েও ভালো ফলন পাওয়া যায়। চেরি টমেটো, লেটুস, ব্রকলি, মরিচ, ক্যাপসিক্যাম, লালশাক, পালং শাক, ডাঁটাশাক ইত্যাদি শাক-সবজি সহজেই চাষাবাদ করা যায়।

বিজ্ঞাপন

ঘরের ভেতরে, লিভিং রুম বা অফিসেও চাইলে ছায়াবান্ধব পাতাবাহারি গাছ দিয়ে এ ধরনের বাগান করা যায়। মানিপ্ল্যান্ট, এলোকেশিয়া, ফার্ন, স্পাইডার, এনথোরিয়াম, বোট লিলি, ড্রাসেনা, মেরেন্টা, মনস্টেরা, ফিলোডেন্ড্রোন ইত্যাদি গাছ দিয়ে ভার্টিক্যাল গার্ডেন করে অফিস বা বাসাবাড়ির ভেতরের দেয়ালগুলো নান্দনিকভাবে সাজিয়ে তোলা যায়। ইদানিং বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্লাস্টিক, লোহা, স্টিল বা কাঠের ফ্রেম বানিয়ে দেয়ালে সেট করে তাতে পোর্টেবল টব ঝুলিয়ে এ ধরনের বাগান তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি দেয়ালের ধাপে ধাপে সিমেন্টের স্থায়ী বেড বানিয়েও ভার্টিক্যাল গার্ডেন করা যায়। তবে আধুনিক পদ্ধতির ভার্টিক্যাল গার্ডেনের অনেক উপকরণ আমাদের দেশে উৎপাদন না হওয়ায় দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে এ ধরনের বাগান তৈরিতে বেশ খানিকটা খরচ পড়ে যায়। একইসাথে দেশীয় প্রচলিত পদ্ধতিতে সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে তুলনামূলক কম খরচেও ভার্টিক্যাল গার্ডেন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে পরিচিত ও দেশীয় সহজলভ্য গাছগুলোই রোপণ করা হয় তাই এর যত্ন ও পরিচর্যা পদ্ধতি খুব একটা জটিল নয়। পরিমিত পানি ও প্রতি এক দুই মাস অন্তর পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার, সার, ভিটামিন সরবরাহ করলেই বাগান সবুজ ও সতেজ থাকে। এছাড়াও অটোমেটিক ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম চালু করে সাথে টাইমার কিংবা সেন্সর সেট করে সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা করা যায় ভার্টিক্যাল গার্ডেনে। আর এক্ষেত্রে যেহেতু পাশাপাশি অনেকগুলো গাছ থাকে তাই রোগবালাই যেমন ছত্রাক বা ভাইরাসের আক্রমণ হলে তা দ্রুত ছড়ায়। ফলে আক্রান্ত গাছকে দ্রুত স্থানান্তর করে সহজেই প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। কিছু জৈব বালাইনাশল ও প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি বায়ো পেস্টিসাইড স্প্রে করেও প্রতিকার পাওয়া যায়।

বাগান আয়তনে বড় হলে মাটির পরিবর্তে কোকোডাস্ট, পার্লাইট, পিটমস, কম্পোস্ট কিংবা অর্ধেক মাটি অর্ধেক কোকোডাস্ট বা কম্পোস্ট মিশিয়েও গ্রোইং মিডিয়া তৈরি করা যায়। মাটিবিহীন ভার্টিক্যাল গার্ডেন একদিকে যেমন হালকা ও টেকসই হয় অন্যদিকে কাদা, ময়লা ও রোগবালাইও তুলনামূলক কম হয়। পাশাপাশি হাইড্রোফোনিক বা জলচাষ পদ্ধতিতেও মাটিবিহীন শুধু পানিকে গ্রোইং মিডিয়া হিসেবে ব্যবহার করে নান্দনিক ভার্টিক্যাল গার্ডেন গড়ে তোলা যায়।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, গ্রিন সেভার্স

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসএসএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন