বিজ্ঞাপন

কোভিড চিকিৎসায় ২৫০ শয্যা নিয়ে ডিএনসিসি হাসপাতাল চালু রোববার

April 17, 2021 | 7:40 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বাড়ছে প্রতিদিনই। সংক্রমণ শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে রোগীর ভিড়। দেশের অন্যান্য স্থানেও বাড়ছে হাসপাতালে বেড না পাওয়ার হাহাকার। এ অবস্থায় ন্যূনতম এক হাজার বেডের হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এর আগে ডিএনসিসি মহাখালীতে যে আইসোলেশন সেন্টার চালুর ‍উদ্যোগ নিয়েছিল সেখানেই প্রাথমিকভাবে ২৫০ বেড দিয়ে রোগী ভর্তির কার্যক্রম শুরু হবে রোববার (১৮ এপ্রিল)।

বিজ্ঞাপন

কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, ৫০ বেডের আইসিইউ, ৫০ বেডের জরুরি সেবা (মেডিসিন), ১৫০টি কোভিড-১৯ আইসোলেটেড রুম দিয়ে রোববার শুরু করা হবে এই হাসপাতাল। পর্যায়ক্রমে এপ্রিল মাসের শেষ নাগাদ হাসপাতালটি পুরো চালুর পরিকল্পনা নিয়ে দ্রুত কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরবর্তী সময়ে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে ডিএনসিসি মার্কেটে আইসোলেশন সেন্টার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সেটি পরবর্তীতে আর চালু করা হয়নি। দেশে সংক্রমণ কমে আসতে থাকলে এটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে সম্প্রতি নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বৃদ্ধির পরে দেশে ২২ মার্চ এক প্রজ্ঞাপনে ডিএনসিসি করোনা আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত করার নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে ডিএনসিসির আইসোলেশন সেন্টারটিকে খুব দ্রুত হাসপাতালে রূপান্তরিত করার জন্য দৈনিক তিন শিফটে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) সাবেক এই পরিচালক সারাবাংলাকে বলেন, ‘৫০ বেডের আইসিইউ, ৫০ বেডের জরুরি সেবা (মেডিসিন), ১৫০টি কোভিড-১৯ আইসোলেটেড রুম দিয়ে আগামীকাল শুরু করা হবে এই হাসপাতাল। এই রুমগুলো হবে অনেকটা কেবিনের মতন। আমাদের এখানে দ্রুতই বেডের সংখ্যা আরও বাড়বে। আইসিইউ সাপোর্টের যে ফেইজ আছে তার অধিকাংশই কিন্তু প্রস্তুত হয়ে গেছে। সেগুলোও আমরা যুক্ত করে খুব দ্রুত কাজ শুরু করতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘এতদিন আমরা হাসপাতাল চালুর বিষয়ে বলেছি। তবে আগামীকাল উদ্বোধন হওয়ার পরে আশা করছি দ্রুত চিকিৎসাব্যবস্থা শুরু করতে পারব। পুরো কাজ শেষ হওয়ার পরে আসলে সবাই বুঝতে পারবে যে কত বড় মানের একটি কিছু হলো। আমাদের কিছু জনবলও প্রয়োজন হবে অবশ্য। হঠাৎ করে এত বড় হাসপাতাল সম্পূর্ণ জনবল দিয়ে চালু করে ফেলাটা বাংলাদেশে চ্যালেঞ্জের কাজ। সেখানে কিছুটা সময় লাগলেও খুব দ্রুতই তা পূরণ হয়ে যাবে বলে আশা করছি। আমরা আশাবাদী যে কোভিড-১৯ চিকিৎসা ম্যানেজম্যান্টের জন্য এখানে ভালো কিছু করতে পারব।’

বিজ্ঞাপন

রোগীরা কীভাবে ভর্তি হবে সে বিষয়ে জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এখানে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে বা উপসর্গ আছে এমন যে কেউ আসতে পারবে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। তারা আসার পরে প্রবেশ করবে আমাদের ট্রায়াজে। সেখানে আবার দুইটা জোন আছে। যাদের মৃদু উপসর্গ আছে বা হেঁটেই আসতে পারছে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য তাদের যদি ভর্তি প্রয়োজন না হয় তবে ভর্তি করা হবে না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হবে। পরে এসে তিনি আবার রিপোর্ট করতে পারবেন।’

ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আসবে তারা ট্রায়াজ-২ এ চলে যাবে। সেখানে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা আছে। ছয় বেডের একটা আইসিইউ সেটাপ থাকবে নিচ তলাতেই। সেখানে ভেন্টিলেটর পর্যন্ত দেওয়ার সুযোগ থাকছে। আর তাই ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডেই ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের স্ট্যাবল হওয়ার সুযোগ আছে। সেখানে তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পাঠিয়ে দেওয়া হবে দুই তলায় ওয়ার্ডে। সেখানে যদি কারও পরিস্থিতি খারাপ হয় তবে তাকে আমরা পাঠিয়ে দেবো আইসিইউ বা এইচডিইউতে। আর যদি একটু স্ট্যাবল হয় বা ঝুঁকির মাত্রা কমে আসে তবে আমরা তাদের কেবিনে দিয়ে দেবো। এই কেবিনগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেনসহ হাই-ফ্লো নজল ক্যানোলা সুবিধা থাকবে। এক্ষেত্রে মনিটরের ব্যবস্থাও করা হবে খুব দ্রুতই। ওখানে তারা কিছুটা স্ট্যাবল হলে তাদের ধীরে ধীরে ডিসচার্জ হওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এটাই আমাদের আপাতত স্টেপ-১ ও স্টেপ-২ পরিকল্পনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব, এখানে আমাদের যে টেলিকমিউনিকেশন আছে তা চালু করার। আমাদের এখানে একটা টেলিমেডিসিন সেন্টার আছে, যা ভবিষ্যতে চালু করা হবে বলে আশা করছি। এখানে জনবল যুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো সেটাপ খুব দ্রুত চালু হবে। প্রাথমিকভাবে মোটামুটি প্রায় সব কিছু প্রস্তুত হয়ে গেছে। আশা করছি, অন্য কোনো সমস্যাতে আর পড়তে হবে না আমাদের।’

বিজ্ঞাপন

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আগামীকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এই হাসপাতালের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে বলে আশা করছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি এ সময় ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামও উপস্থিত থাকবেন। হাসপাতাল পরিচালিত হবে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের আওতায়। এ কারণে আমাদের কিছু কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। আশা করছি, দেশের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে এখানে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যেতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ন্যূনতম এক হাজার বেডের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সংখ্যা এর চেয়ে বাড়া বা কমার সম্ভাবনা নেই। সে বিষয়ে এখনই আগাম কিছু বলতে চাইছি না। এখানে আমরা অন্তত ১০০ আইসিইউ বেড যুক্ত করব চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য। ১২০টির মতো এইচডিইউ শয্যার এখানে যুক্ত হতে যাচ্ছে। এটা আসলে সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন হাসপাতাল হতে যাচ্ছে। এখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন কাজ করে যাচ্ছে। আমিও কিন্তু আর্মড ফোর্সের ডিভিশনের পক্ষেই এখানে কাজ করে যাচ্ছি। আর্মড ফোর্সের ডিভিশনের নিয়ন্ত্রণে ও তত্ত্বাবধানে এখানে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এখানে আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে জনবল, আর্থিক সহায়তা, ওষুধ বিভিন্ন কিছু দিয়ে। আর্মড ফোর্সেস থেকেও আমরা চিকিৎসক, নার্সসহ আমাদের কিছু থাকছে। ডিএনসিসি তাদের জায়গা দিয়েছে ও একই সঙ্গে অন্যান্য কিছু সাপোর্ট দিয়ে আমাদের সাহায্য করে যাচ্ছে। মূলত এই তিনটা প্রতিষ্ঠান মিলেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

হাসপাতালটির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ফরিদ হোসেন মিঞা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মহাখালীতে ডিএনসিসির আইসোলেশন সেন্টারে ১ হাজার ৫০০ বেডের কোভিড ইউনিট তৈরির কাজ চলছে। আশা করছি এটি চালু হলে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া আরও সহজ হবে।’

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আইসিইউ সেবা শুরু হতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মহাখালীতে। ঠিক ১৫ দিন পরেই ধাপে ধাপে আরও বেড বাড়ানো হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ও করোনাবিষয়ক মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা নর্থ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) হাসপাতালটা যদি চালু করা যায় তবে দ্রুত কিছু হাসপাতালের লোড কমবে। এখানে যদি রোগীরা ভর্তি শুরু হয় তবে অন্যান্য হাসপাতালের ওপর প্রেশার কিছুটা কমে আসবে। আশা করছি, এখানে অনেক বেশি মানুষকে সেবা দেওয়া যাবে।’

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন