বিজ্ঞাপন

ফের চিকিৎসকের গাড়ি আটকে মামলা

April 19, 2021 | 11:12 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১৪-২১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারিভাবে দেশব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পঞ্চম দিনেও চিকিৎসকের গাড়ি আটকে মামলা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাঁচ হাজার ৫০০ টাকার জরিমানাও করা হয়েছে ওই গাড়ির বিরুদ্ধে।

বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগী চিকিৎসক জানিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রের নির্দেশনায় রমনা বিভাগের একজন পুলিশ সার্জেন্ট এই মামলা দায়ের করেন।

তবে ট্রাফিকের রমনা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দায়িত্বরত চিকিৎসকদের গাড়ি না আটকানোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। তারপরেও যদি কোনো স্থানে এমন ঘটনা ঘটে থাকে তবে জরিমানা মওকুফের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রোববার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর অ্যালিফেন্ট রোডের বাটা সিগন্যাল এলাকায় এ মামলা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী চিকিৎসক ডা. এনামুল কবির খান।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি হন ডা. এনামুল কবির খান। তার স্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত। রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজার এলাকায় তাদের বাসা।

তিনি বলেন, সকালে ডা. কামরুন নাহার মুক্তা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বাসা থেকে কর্মস্থল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে তিনি গাড়ি ছেড়ে দেন। এ সময় রাস্তায় যদি পুলিশ আটকায় তবে তাদের দেখানোর জন্য আমার স্ত্রী হাসপাতালে নেমে তার আইডি কার্ডটি চালকের কাছে দেয়। কিন্তু, ফেরার সময় বাটা সিগন্যাল এলাকায় গাড়ি আটকানো হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামুনের নির্দেশে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট গাড়িটি থামান।

সরকারি বিধি নিষেধ থাকার পরেও নির্দেশনা না মানার বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন ডা. এনামুল।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে ওই গাড়ির চালক জানান, চিকিৎসককে হাসপাতালে নামিয়ে দিয়ে বাসায় ফেরার পথে গাড়ির আটকানো হয়। এসময় তিনি নিজেও পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন। পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে মামলা দেওয়া হচ্ছে বলে জানায়। পরে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কথা বলতে চাই। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট তার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে ট্রাফিকের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার জয়দেব চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, বিধিনিষেধ চলাকালে জরুরি সেবার আওতাধীন গাড়ি ও চিকিৎসকদের গাড়ি যেনো না আটকানো হয় সে বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। মামলা না দেওয়ার জন্যেও তারা মাঠে কর্মরত সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু এরপরেও মাঝে মধ্যে ভুল হচ্ছে। যদি ভুলক্রমে কোনো চিকিৎসকের গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়ে থাকে তবে তাদেরকে কার্যালয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান ওই উপ কমিশনার। জরিমানা মওকুফ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান। তবে, অনেক সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশনা দিলে কিছু করার থাকে না বলেও জানান তিনি।

একই দিনে একই ভ্রাম্যমান ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের চেকে পড়েন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনি। সেখানে ঢাকা জেলার সহকারী কমিশনার শেখ মো. মামুনুর রশিদ আদালত পরিচালনা করছিলেন। নিউ মার্কেট থানার একজন পরিদর্শকের নেতৃত্বে একাধিক পুলিশ সদস্য সেখানে দায়িত্বরত ছিলেন। এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা রকম আলোচনা।

এর আগে, সরকারিভাবে বিধিনিষেধ শুরুর প্রথম দিন অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল একাধিক চিকিৎসক রাস্তায় হয়রানি হওয়ার অভিযোগ জানান। এ দিন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে গাড়ি আটকানো হয় বলে জানান কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কর্মকর্তারাও।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট দুইটি ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সড়কে পুলিশের কোনো সদস্য অপেশাদার আচরণ করলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর অনুরোধ করা হয়।

প্রসঙ্গত, দেশে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ভাবে দেশব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে এই কঠোর বিধিনিষেধ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে থাকা সব প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থল, নদী ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভুত থাকবে।

সারাবাংলা/এসবি/একেএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন