বিজ্ঞাপন

‘বিদ্রোহী লিগ’ বাঁচাবে ফুটবল: ফ্লোরিন্তিনো পেরেজ

April 20, 2021 | 11:19 am

সাহাবার সাগর, নিউজরুম এডিটর

রোববার (১৮ এপ্রিল) থেকে গোটা ফুটবল বিশ্বের মুখে একই আলোচনা ‘ইউরোপিয়ান সুপার লিগ’। তোলপাড় গোটা সংবাদমাধ্যম। রিয়াল মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট ফ্লোরিন্তিনো পেরেজই নির্বাচিত হয়েছেন ইউরোপিয়ান সুপার লিগের প্রথম প্রেসিডেন্ট। এরপর ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, জুভেন্টাস ও আর্সেনালের প্রেসিডেন্টরা। তবে সবার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন রিয়াল প্রেসিডেন্ট। সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাতে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এল চিরিঙ্গুয়েতায় ইন্টারভিউ দিয়ে জবাব দিয়েছেন সুপার লিগ নিয়ে যত আলোচনা-সমালোচনার।

বিজ্ঞাপন

পড়ুন: ‘বিদ্রোহী’ লিগের ঘোষণায় তোলপাড় ফুটবল বিশ্বে, জেনে নিন আদ্যোপান্ত

১২ শীর্ষ ক্লাব নিয়ে আসছে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ

ইউরোপের শীর্ষ ১২ ক্লাব নিয়ে ইউরোপিয়ান সুপার লিগের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। আর তাতেই নড়েচড়ে বসেছে গোটা ফুটবল বিশ্ব। নড়ে উঠেছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফাও। আর তাই তো সোমবার (১৯ এপ্রিল) জরুরি বৈঠকও ডাকে তারা। বৈঠক শেষে কঠোর হুঁশিয়ারি জানিয়েছে ওই ১২টি প্রতিষ্ঠাতা ক্লাব এবং ক্লাবের ফুটবলারদের। উয়েফার সভাপতি আলেক্সান্ডার ক্যাফেরিন কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান দিলেন, সুপার লিগে অংশগ্রহণ করলে কোনো খেলোয়াড় জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারবেন না। আর উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে বলে এই লিগকে ইতোমধ্যেই ‘বিদ্রোহী লিগ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে উয়েফা।

বিজ্ঞাপন

সুপার লিগে খেললে নিষিদ্ধ জাতীয় দলে

রিয়াল মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট ফ্লোরিন্তিনো পেরেজকে সভাপতি করে রোববার (১৮ এপ্রিল) রাতে ঘোষণা এসেছে ইউরোপিয়ান সুপার লিগের নতুন কমিটির। ইউরোপের শীর্ষ ১২টি ক্লাব নিয়ে এ বছরের আগস্টেই মাঠে গড়াবে নতুন এই সুপার লিগ। ইতোমধ্যেই ইউরোপিয়ান শীর্ষ ক্লাবগুলো অফিসিয়ালি এই টুর্নামেন্ট নিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে। আর এমন ঘোষণা আসার পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফা।

বিজ্ঞাপন

তবে এসব হুঁশিয়ারিকে তোয়াক্কা করলেন না সুপার লিগের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরিন্তিনো পেরেজ। জানিয়ে দিলেন যত যাই হোক না কেন সুপার লিগ মাঠে গড়াবেই।

নিচে রিয়াল মাদ্রিদ ও ইউরোপিয়ান সুপার লিগের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরিন্তিনো পেরেজের সাক্ষাৎকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

‘উয়েফার একনায়কতন্ত্র এখানেই শেষ। নতুন এক সময়ের শুরু এখন থেকে। ফুটবল অনেক খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর সুপার লিগ সব ক্লাবকে অর্থনৈতিকভাবে বাঁচাবে। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের পরিবর্তে সুপার লিগে অংশগ্রহণের। এভাবেই ক্লাবগুলোর উপার্জন বাড়বে।’

‘যখন ক্লাবগুলোর কেবল সম্প্রচার স্বত্ব ছাড়া আর কোনো উপার্জন নেই তখন সমাধান হিসেবে ফুটবলকে আরও আকর্ষণীয় করাটাই সঠিক। আমরা সমর্থকদের আরও বড় বড় ম্যাচ দেখার সুযোগ করে দিচ্ছি, যেখানে বিশ্বের সব বড় দলগুলো নিয়মিতই নিজেদের মধ্যে খেলবে।’

বিজ্ঞাপন

‘রিয়াল মাদ্রিদ অনেক টাকা লোকসান গুনেছে, আমরা অনেক খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ইংল্যান্ড ও স্পেনের শীর্ষ ক্লাবগুলো তাই এই সমাধান নিয়ে এসেছে ফুটবলকে বাঁচাতে। এই সময়ে একা রিয়াল মাদ্রিদই ৪০০ মিলিয়ন ইউরোর লোকসান গুনেছে। আর এই লোকসান পোষাতে কিছুই করেনি কোনো ফুটবল কর্তৃপক্ষ।’

নতুন ফরম্যাটে আসছে চ্যাম্পিয়নস লিগ

‘যত বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হবে তত বেশি অর্থ উপার্জনের সুযোগ আসবে। আর এভাবেই ক্লাবগুলোকে বেঁচে থাকতে হবে। আর সুপার লিগই এর একমাত্র সমাধান। ফুটবলে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ৪০ শতাংশ তরুণরা এখন ফুটবলের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে। এর পেছনের একমাত্র কারণ হচ্ছে নিম্ন মানের ম্যাচ বেশি হওয়ায়। আর তাই তো আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে। ফুটবলকে বিশ্বে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। আর এই কারণেই সান্তিগানো বার্নাব্যুকে আমরা এমনভাবে তৈরি করছি।’

‘আমাদের যদি আরও বেশি অর্থ থাকে তাহলে এটা সবার জন্যই ভালো হবে। কারণ আমরা আরও বেশি অর্থ দিয়ে ছোট ক্লাবগুলোর কাছ থেকে খেলোয়াড় কিনতে পারবো। আর বাড়তি ওই অর্থ ক্লাবগুলোকে সাহায্য করতে পারবে। আমি যা কিছু করেছি সবই ফুটবলকে বাঁচাতে করেছি। এটা কেবল শীর্ষ ক্লাবগুলোর জন্যই ভালো নয়, এটা সকল ক্লাবের জন্যই ভালো কিছু বয়ে আনবে।’

‘সুপার লিগের দরজা বাকিদের জন্য বন্ধ? না এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটা সকলের নাগালের মধ্যের লিগ। সুপার লিগ চ্যাম্পিয়নস লিগের মতোই আয়োজন হবে। আমরা ১৫টি দল আছি, এছাড়াও আরও পাঁচটি জায়গা খালি রয়েছে। প্রত্যেক বছর পাঁচটি করে দল এই লিগে খেলার সুযোগ পাবে। যারা নিজেদের লিগে ভালো খেলবে তারা সুযোগ পাবে এই লিগে।’

‘নতুন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফরম্যাট ফুটবলকে বাঁচাবে না। আমি এটা বুঝি না যে এটা কীভাবে ফুটবলকে বাঁচাবে। কোনো ক্লাব যদি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে তাহলে তারা মাত্র ১২০ থেকে ১৩০ মিলিয়ন ইউরো প্রাইজমানি পাবে। কিন্তু সুপার লিগে খেললে এই অর্থের পরিমাণ কয়েকগুণে বেড়ে যাবে। আমরা ফুটবলকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই, আর সুপার লিগই এটাকে বাঁচাতে পারে।’

‘সুপার লিগে খেলার জন্য আমাদের খেলোয়াড়রা নিষিদ্ধ হবে না। আর এটার শতভাগ নিশ্চয়তা আমি দিচ্ছি। কোনো খেলোয়াড় বিশ্বকাপ খেলা থেকে নিষিদ্ধ হবে, এটা আমি নিশ্চিত। আমি ২০০০ সালে রিয়াল মাদ্রিদে এসেছিল ক্লাবকে বাঁচাতে, আর আমি তা করে দেখিয়েছিলাম।’

‘উয়েফা আমাদের চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বের করে দিবে? আমি একশত ভাগ নিশ্চিত তারা এটা করতে পারবে না। সুপার লিগে অংশগ্রহণ করলে ঘরোয়া লিগে নিষিদ্ধ? না তারা এটা করতে পারবে না কারণ এটা অসম্ভব।’

সেমিফাইনালের আগেই বহিষ্কার হতে পারে রিয়াল, ম্যানসিটি ও চেলসি

‘উয়েফা ভাবছে তারা আমরা তাদের সম্পদ, আর তারা যা খুশি তাই করতে পারে। কিন্তু না তারা সম্পূর্ণ ভুল। সবার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি আমরা ফুটবলকে বাঁচাতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের এটা বাস্তবায়ন করতে হবে কারণ সামনের ২০ বছরে যাতে কোনো ক্লাবকে ২০০ মিলিয়ন ইউরোর লোকসান গুনতে না হয়।’

‘ম্যানচেস্টারের ক্লাবে সঙ্গে বার্সেলোনার খেলাটা অনেক বেশি আকর্ষণীয় হবে যেকোনো ছোট ক্লাবের সঙ্গে এই দুই দলের খেলার থেকে। চ্যাম্পিয়নস লিগের আকর্ষণ তৈরি হয় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। এর আগের ম্যাচগুলো নিয়ে কেউ তেমন আগ্রহ দেখায় না।’

‘আমরা পিএসজিকে আমন্ত্রণ জানায়নি। আমরা ফিফা এবং উয়েফার সঙ্গে আলোচনায় বসব কিন্তু তারা তাতে রাগ করতে পারবে না কারণ তারা এটা সম্পর্কে সবকিছুই জানে।’

‘বার্সেলোনা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বেশ বাজে সময় অতিবাহিত করছে। আর তাই তো লাপোর্তার সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনায় বসার সঙ্গে সঙ্গেই সে এটা বুঝতে পেরেছে এবং রাজী হয়ে গেছে। সুপার লিগ গোটা বিশ্বের ফুটবলকেই বাঁচাবে। তাকে রাজী করাতে বেগ পেতে হয়নি।’

‘সুপার লিগে যাতা যোগ দিয়েছে তারা উদ্বীগ্ন? না, তারা ইতোমধ্যেই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আগামি ২০ বছরকে সামনে রেখেই আমরা কৌশল সাজিয়েছি। আমরা সমর্থকদের কাছে ঋণী এবং মনে করে এটা তাদের প্রাপ্য ছিল।’

ইউরোপিয়ান সুপার লিগের গভার্নিং বডির তালিকা:

চেয়ারম্যান: ফ্লোরিন্তিনো পেরেজ (রিয়াল মাদ্রিদ)

ভাইস চেয়ারম্যান: স্ট্যান ক্রোয়েঙ্কে (আর্সেনাল)

ভাইস চেয়ারম্যান: আন্দ্রেয়া অ্যাগ্নেলি (জুভেন্টাস)

ভাইস চেয়ারম্যান: জোয়েল গ্লেজার (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)।

উল্লেখ্য, ইউরোপিয়ান সুপার লিগের প্রকল্পে থাকা ক্লাবগুলো হলো এসি মিলান, আর্সেনাল, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, চেলসি, বার্সেলোনা, ইন্টার মিলান, জুভেন্টাস, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ ও টটেনহাম হটস্পার্স।

সারাবাংলা/এসএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন