April 28, 2021 | 3:28 pm
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: চলমান করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) অর্জনে ভালো করবে বলে মনে করছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। কোভিড-১৯ মহামারির দ্বিতীয় ঢেউকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করা গেলে চলতি অর্থবছর এই প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ হতে পারে বলে প্রাক্কলন করছে সংস্থাটি।
বুধবার (২৮ এপ্রিল) ‘এশিয়ান ডেভলপম্টে আউটলুক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এটি প্রকাশ করা হয়। এসময় বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ।
প্রতিবেদনে বংলাদেশের জনগণের জন্য ভ্যাকসিন সংগ্রহে ঋণ ও অনুদান মিলিয়ে ৯৪ কোটি ডলার দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন সহায়তার বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারি সামাল দিতে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে। বাংলাদেশে রফতানির গতিও বেড়েছে। ফলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে। সেই সঙ্গে সরকারের দেওয়া প্রণোদনার সুফল মিলবে। পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য ও বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও বেড়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রেমিট্যান্সের শক্তিশালী প্রবাহ অব্যাহত থাকায় ব্যক্তিখাতে ভোগব্যয় বাড়বে। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতি হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগেও গতি আসবে। বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও ধীরে ধীরে প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী ধারায় ফিরবে জিডিপি। অঞ্চল হিসেবে এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সবচেয়ে দ্রুত হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালে এ অঞ্চলের অর্থনীতি ৬ শতাংশ সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। এবার তা ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়বে। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দেশ ভারত মহামারিতে নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারপরও এ বছর দেশটিতে ১১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। গতবছর ভারতের অর্থনীতি ৮ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল।
প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
কান্ট্রি ডিরেক্টর মমোহন প্রকাশ বলেন, চলতি অর্থবছর ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নির্ভর করবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের উপর। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের চাপে এটি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৮ শতাংশেও নেমে আসতে পারে।
করোনার ভ্যাকসিন সংকট বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক কোম্পানিরই ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তাই দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের বিষয়ে জোর দিতে হবে।
এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুকি সোয়াদা বলেন, ভারত যে গতিতে টিকাদান চালিয়ে নিচ্ছে, তাতে অগাস্টের মধ্যে সেখানে ৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে ২০২২ সালেই হয়তো ভারত ‘হার্ড ইমিউনিটি’তে পৌঁছে যাবে। এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর গতি যতটা হবে বলে আগে ভাবা হয়েছিল, এ বছর তার চেয়ে বেশিই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে করোনা সংক্রমণ নতুন করে বাড়লে এবং ভ্যাকসিন প্রয়োগের গতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ানো না গেলে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়ানো কঠিন হবে।
এডিবি ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথা বললেও চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। করোনা মহামারির বাস্তবতার কারণে পরে তা ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।
এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নিয়ে এসেছিল সরকার। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাথমিক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন হয় ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। চূড়ান্ত হিসেবে সেটি আরও কমবে বলে জানা গেছে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর