বিজ্ঞাপন

‘বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আরও বেশি ক্ষুধার্ত হতে হবে’

March 25, 2018 | 3:59 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

একটা সময় সবাই তাকে চিনত ইরফান পাঠানের ভাই হিসেবে। ধীরে ধীরে নিজেকে চেনাতে শুরু করলেন, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কাছে হয়ে গেলেন হটকেক। ভারতের জাতীয় দলে সুযোগ পেলেন, দুর্দান্ত কিছু ইনিংসও খেললেন। এখন অবশ্য জাতীয় দলের বাইরে, এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলে গেছেন প্রাইম ব্যাংকের হয়ে। সারাবাংলার বিশেষ প্রতিনিধি মোসতাকিম হোসেনের সঙ্গে ভারতের অলরাউন্ডার ইউসুফ পাঠান কথা বলেছেন নিজের ক্যারিয়ার, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, বাংলাদেশের স্থানীয় খেলোয়াড়দের মানসিকতাসহ আরও অনেক কিছু নিয়ে।

সারাবাংলা: ২০১৬ সালেও তো আবাহনীর হয়ে খেলে গিয়েছিলেন। সেবারের সাথে এবারের পার্থক্য কী দেখছেন?

ইউসুফ পাঠান: আমার জন্য এটা বলা আসলে কঠিন। কারণ অত নিবিড়ভাবে তুলনা করার সুযোগ আমার হয়নি। এর আগে সর্বশেষ যখন এসেছিলাম, আমার ২-৩টি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে। যতটুকু দেখেছি, তা থেকে বলতে পারি এখানে প্রতিভার অভাব নেই। তবে ঠিক সময়ে ঠিক সুযোগটাও আপনার নিতে হবে। নেটে কয়েকজন বোলারকে আমি দেখেছি বেশ ভালো বল করতে। আমি খালেদকে (খালেদ মাসুদ, প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের কোচ) বলার পর সে তাদের পরে দলেও নিবন্ধন করিয়েছে। এখানে কোচরা প্রতিভার মূল্যায়ন খুব ভালোভাবেই করে। এটা ক্রিকেটের জন্য ভালো।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: বাংলাদেশ ও ভারতের ক্রিকেট সংস্কৃতির মূল তফাতটা কোথায়?

ইউসুফ পাঠান: অবশ্যই কাঠামোগতভাবে বড় একটা পার্থক্য আছে। বিসিসিআই যেমন ভারতের ক্রিকেটারদের জন্য অনেক কিছু করেছে। প্রতিটা রাজ্যে অন্তত ৭-৮টি স্টেডিয়াম আছে, মুম্বাইতেই তো মাঠ আছে ৫০টি। বরোদা ও মহারাষ্ট্রেও অনেক সুযোগ সুবিধা আছে, যেখানে আপনি বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের জন্যও নিজেকে তৈরি করতে নিতে পারবেন। বিসিসিআইয়ের অনেক মাঠ আছে, ক্রিকেটারদের জন্য তা অনুশীলন ও ম্যাচ খেলার খুব ভালো সুযোগ। বাংলাদেশেও আমি লক্ষ্য করেছি, বিকেএসপি, মিরপুর ও ফতুল্লায় ক্রিকেটারদের জন্য ভালো সুবিধা আছে।

আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, ভারতে পেসাররা এমনকি ৩৫-৪০ ওভারও বল করে, কিন্তু বাংলাদেশে সেই কাজটা স্পিনারদের করতে হয়। সংস্কৃতিগত দিক দিয়ে এটা অনেক বড় একটা ব্যবধান। তবে স্পিনাররা খুব বেশি রান কিন্তু দিতে দেয় না। পিচও বাংলাদেশে একটু অন্যরকম। এখানে খুব বেশি ঘাস না থাকার পরও ভালো স্পিন ধরে। ব্যাটসম্যান ও বোলার, দুই পক্ষের জন্যই ব্যাপারটা প্রেরণাদায়ী। ভালো উইকেট যারা বানায় তাদের অবশ্যই আপনার পাওনা মর্যাদাটা দেওয়া উচিত। আর প্রতিভাবান ক্রিকেটারদেরও প্রেরণা দেওয়া উচিত, যেন তারা অনেকদূর যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: আপনার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?

ইউসুফ পাঠান: আমাদের বাসার পাশেই একটা মসজিদ ছিল, সেখানে ছিল ছোট্ট একটা মাঠ। ওখানেই আমাদের খেলার হাতেখড়ি। আমার বাবা-মা আমাদের ক্রিকেট অনুশীলনের জন্য পাঠানোর কথা ভেবেছিল, যেন আমরা ভালো কিছু যেন শিখতে পারি, খারাপ সঙ্গে যেন পড়ে না যাই। তারা দেখেছিল ক্রিকেটে আমাদের আগ্রহ আছে। আমি এটা ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ের কথা বলছি।

আজও ওই মাঠে গেলে মনে হয় সেই পুরনো নেশাটা যেন ফিরে এসেছে। মনে হয় আমরা যেন ক্রিকেট খেলাটা কেবল শুরু করেছি। দেখুন, সত্যি বলতে কী ক্রিকেট ছাড়া অন্য কিছু আমরা করতেও জানি না।

সারাবাংলা: আপনাদের দুই ভাইয়ের তো নিজেদের একটা অ্যাকাডেমি আছে। সেটার কাজ কেমন চলছে?

বিজ্ঞাপন

ইউসুফ পাঠান: এখন তো পুরো ভারত জুড়েই আমাদের অনেকগুলো শাখা আছে। আমরা এটার নাম দিয়েছি সিএপি (ক্রিকেট অ্যাকাডেমি অব পাঠানস)। আমরা ক্যারিয়ারের শুরুতে যেসব জিনিস পাইনি, বাচ্চাদের সেসব দেওয়ার চেষ্টা করছি। তারা কীভাবে কিছু জিনিস শিখতে পারে, কীভাবে আরও বেশি পেশাদার হতে পারে সে চেষ্টা করা হয়।

সারাবাংলা: প্রাইম ব্যাংকে আপনার সময়টা কেমন গেল?

ইউসুফ পাঠান: আমি আসার আগে কী অবস্থা ছিল সেটা তো আপনারা ভালোমতোই জানেন। ছেলেরা রেলিগেশন নিয়ে কথা বলছিল। চার ম্যাচ হেরে যাওয়ায় তারা খুবই হতাশ, আমার জন্য এটা ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং। আমি কিছু ছেলের সঙ্গে কথা বলে ওদের প্রেরণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখন তারা সুপার লিগের কথা ভাবছে (যদিও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি)।

আরিফ (আরিফুল হক) বাংলাদেশ জাতীয় দলে যোগ দেওয়ার আগে চিন্তায় ছিল, আমরা আবাহনীর সাথে কেমন করব। আমি বলেছি, আমরা জিতব, সেটার পর তুমি আমাকে ফোন দেবে। কাজটা আমরা করেছি। সব সময়ই আমি নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে দলকে একটা ভালো অবস্থানে নিতে চেয়েছি। আর ক্লাবটাও বেশ সিরিয়াস। ওদের প্রস্তুতি সে কথাই বলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়েও তারা বেশ সক্রিয়।

সারাবাংলা: আপনি তো বিগ হিটিংয়ের জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশ আবার এই জায়গায় বেশ ভুগেছে। আপনি কি আপনার সতীর্থদের এটা নিয়ে কোনো টিপস দিয়েছেন?

ইউসুফ পাঠান: আমি আসলে বেশ কয়েকজনের হিটিং দেখে মুগ্ধই। আমার দলেই তো রিপন, নাহিদ, দেলোয়ার ভালো হিট করতে পারে। একটা ব্যাপার আমি লক্ষ্য করেছি, এখানে যখনই আমি কোচ বা খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলেছি, তারা আগে থেকেই একটা জিনিস ঠিক করে বসে থাকে। এটাই আমাকে হতাশ করেছে। ক্লাব তো খেলোয়াড়দের পিছনে টাকা কম খরচ করছে না, তাদের অন্য কিছু নিয়ে ভাবা উচিত নয়। প্রিমিয়ার লিগে জায়গা পেলে সবার উচিত সেই সুযোগ কতটা ভালোভাবে কাজে লাগানো যায় সেই চিন্তা করা। খোলা মন নিয়েই এই চিন্তা করতে হবে।

আমাকে যদি কেউ বলে, আমাকে এই জায়গাটায় আরও উন্নতি করতে হবে, আমি সেই পরামর্শ খুশি মনেই নেব। আমার মনে হয় অনেক ভারতের খেলোয়াড়দেরও এই মনোভাব আছে। বাংলাদেশের স্থানীয় খেলোয়াড়দের এই জায়গায় মনে হয় একটু ঘাটতি আছে, কোচদের কাছ থেকে আমি তা-ই শুনেছি। খেলোয়াড়েরা সব সময় মনযোগ দিয়ে কথা হয়তো শুনতে চায় না। তারা যদি ধরে নেয়, তারা যা জানে সেটা যথেষ্ট, তাহলে ক্ষতিটা ক্রিকেটের। এই ব্যাপারটা আসলে বদলানো উচিত। তাদের আরও বেশি ক্ষুধার্ত হতে হবে। আপনি যদি খোলা মন নিয়ে না খেলতে পারেন, তাহলে শীর্ষ পর্যায়ে গিয়ে কিন্তু আপনাকে ভুগতে হবে।

সারাবাংলা: সবাই আপনাকে আইপিএল দিয়েই চেনে। তবে দুলীপ ট্রফিতে তো আপনি দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছিলেন…

ইউসুফ পাঠান: একটা নয়, আমি দুইটি কি তিনটি ম্যাচে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছিলাম। চার দিনের ম্যাচে আপনি জানেন, বোলারদের অনেক বেশি ওভার বল করতে হয়। আমি এসব চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি।

দ্বিতীয় ইনিংসে আমাদের অনেক বড় রান তাড়া করতে হতো। আমার মনে আছে আমরা শুরুটা ভালো করেছিলাম। এরপর ইরফান, রমেশ পাওয়ার ও অন্য একজনের সঙ্গে ভালো একটা জুটি গড়ি। এখনো সেটা বিশ্ব রেকর্ড হয়ে আছে।

সারাবাংলা: ভারতের হয়ে আবার খেলার স্বপ্ন দেখেন?

ইউসুফ পাঠান: আশা না থাকলে আপনি দৌড়াবেন কেন? আমরা দুই ভাই মনে করি, স্বপ্ন দেখা ও আশাবাদী থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম ধর্মও কিন্তু তাই বলে। আল্লাহর কাছে আপনি কিছু চাইলে সেটা আপনি পাবেন, কিন্তু আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। গাছ লাগানোর সাথে সাথেই আপনি ফল পাবেন না, সময় লাগবে।

কাজটা খুবই কঠিন, কিন্তু আপনি পরিশ্রম করলে, মনযোগ ধরে রাখতে পারলে আপনার সুযোগ আসতেও পারে। আমার কাজ হচ্ছে চেষ্টা করে যাওয়া, এজন্য প্রিমিয়ার লিগ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ন ছিল।

সারাবাংলা: ভারতের ক্রিকেটারদের কি বিদেশের টি-টোয়েন্টি লিগে খেলতে দেওয়া উচিত?

ইউসুফ পাঠান: আমি ঠিক জানি না। বোর্ড কর্তারা কী ভাবছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের অনেক ক্রিকেটার আইপিএলের পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে। আমি মনে করি চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের বাইরে বাকিদের বিদেশে খেলতে দেওয়া উচিত। ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের পরখ করে নিতে পারবে। আইপিএলের মাধ্যমে অনেক ক্রিকেটার বেরিয়ে এসেছে, বিসিসিআই সেটা জানে। এখন তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিদেশের লিগে খেলোয়াড়দের খেলতে দেওয়া উচিত কি না।

সারাবাংলা/এএম/এমআরপি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন