বিজ্ঞাপন

বড় প্রতারণার শিকার আমি, সুষ্ঠু বিচার চাই: ঝর্ণা

April 30, 2021 | 1:09 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

নারায়ণগঞ্জ: হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের কাছে বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন জান্নাত আর ঝর্ণা। তিনি এর সুষ্ঠু বিচার কামনা করেছেন রাষ্ট্রের কাছে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) সকালে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন ঝর্ণা।

সোনারগাঁও থানায় মামলা দায়েরের পর সাংবাদিকদের ঝর্ণা বলেন, ‘আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে তিনি (মামুনুল হক) আমার সঙ্গে অন্যায় করছেন। অনেক দিন ধরে প্রতারণা চালিয়ে গেছেন। আমি রাষ্ট্রের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই।’

আরও পড়ুন- মামুনুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা

সোনারগাঁওয়ের রিসোর্টকাণ্ডের পর আটকে রাখা হয়েছিল ঝর্ণাকে। সেখান থেকে পুলিশ তাকে মুক্ত করেছে। এ বিষয়ে কিছু বলতে চান কি না— জানতে চাইলে ঝর্ণা এসব বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমার শেষ কথা, আমি সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার সঙ্গে বড় প্রতারণা, ধোঁকা ঘটেছে। আমি এর বিচার চাই।’

এর আগে, সোনারগাঁও থানায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামুনুল হককে আসামি করে মামলা দায়ের করেন জান্নাত আরা ঝর্ণা।

মামলার তথ্য স্বীকার করে সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, রয়্যাল রিসোর্টে মামুনুল হকের সঙ্গে যিনি ছিলেন, তিনি আজ থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ একটি মামলা গ্রহণ করেছে। তদন্তসাপেক্ষে মামলা নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

মামলার এজাহারে ঝর্ণা অভিযোগ করে বলেন, আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরির নাম করে তার পরিচিত বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে রাত্রীযাপন ও বিয়ের আশ্বাস দিয়ে যৌন লালসা চরিতার্থ করেন। বিয়ের কথা বললে করব-করছি বলে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করেন তিনি।

সোনারগাঁওয়ে রিসোর্টকাণ্ডের উল্লেখ করে এজাহারে ঝর্ণা লিখেছেন, সবশেষ গত ৩ এপ্রিল ঘোরাঘুরির কথা বলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও  রয়েল রিসোর্টে নিয়ে যান আমাকে। সেখানে স্থানীয়রা আমাদের আটক করে পরিচয় জানতে চায়। আমরা কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় স্থানীয়দের রোষানলে পড়ি। পরে তার (মামুনুল হক) অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়। এ ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠলে মামুনুল হক আমাকে আমার নর্থ সার্কুলার রোডের ভাড়া বাসায় যেতে না দিয়ে তার পরিচিত একজনের বাসায় জোর করে আটকে রাখেন। এসময় আমি আমার আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।

ঝর্ণা লিখেছেন, এক পর্যায়ে আমার বড় ছেলে আব্দুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার দুরবস্থার কথা জানাই এবং আমাকে এই বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। পরে ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে আমাকে আমার বাবার জিম্মায় দিয়েছে।

মামুনুল হকের প্ররোচনায় বিচ্ছেদ ও তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠার সময়কার বর্ণনা দিয়ে ঝর্ণা এজাহারে লিখেছেন, আমার সাবেক স্বামী শহীদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। এরপর মামুনুল হকের ‘লোলুপ ‍দৃষ্টি’তে পড়েন তিনি। মামুনুল হক এসময় কৌশলে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। এসময় ঝর্ণা ‘অসহায়’ হয়ে পড়লে মামুনুল তাকে ‘সহযোগিতার নাম করে’ ঢাকা আসতে প্ররোচিত করেন।

বিজ্ঞাপন

ঝর্ণা লিখেছেন, ‘আমি একজন আলেমকে ভরসা করে সরল বিশ্বাসে তার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় আসার পর শুরুতে আমাকে তার পরিচিত বিভিন্ন অনুসারীদের বাসায় আমাকে রাখেন এবং নানাভাবে আকার ইঙ্গিতে আমাকে কু-প্রস্তাব দিতে থাকেন। একপর্যায়ে আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রলোভনে পা দিতে বাধ্য হই। এরই ধারাবাহিকতায় তার পরামর্শে আমি কলাবাগানের নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাসায় সাবলেট ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করি এবং তার ঠিক করে দেওয়া একটি বিউটি পার্লারে কাজ শিখতে থাকি।’

গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রিসোর্টে নারী নিয়ে অবরুদ্ধ হন মামুনুল হক। স্থানীয়দের অভিযোগ, রিসোর্টে মামুনুলের সঙ্গে যে নারী (জান্নাত আরা ঝর্ণা) ছিলেন, তার সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত তিনি। তবে মামুনুল ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। ওইদিন তাকে হেফাজতের স্থানীয় নেতাকর্মীরা রিসোর্ট ভেঙে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

ঘটনার দিন সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় হেফাজতের নেতাকর্মী‌দের আসামি করে তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে একটি মামলায় মামুনুল হক প্রধান আসামি। মামলা দায়েরের পর মামুনুল বেশ কিছুদিন পালিয়ে বেড়ালেও গত ১৮ এপ্রিল তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মোহাম্মদপুর থানায় গত বছর দায়ের করা এক মামলায় বর্তমানে রিমান্ডে আছেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন, ওই নারীর সঙ্গে তার বৈবাহিক কোনো সম্পর্ক নেই। কয়েকটি শর্ত দিয়ে চুক্তিভিত্তিক একটি সম্পর্ক রেখেছেন তিনি।

এদিকে, রিসোর্টের ওই ঘটনার পর ঝর্ণার বড় ছেলে গণমাধ্যমগুলোকে জানিয়েছে, তার মা-বাবার সম্পর্কে ফাটল ধরিয়ে মামুনুল হক বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন। জানা যায়, বিচ্ছেদের পর ঝর্ণাকে ঢাকা নিয়ে আসেন মামুনুল। শুরুতে তার অনুসারীদের বাসায় রাখলেও পরে মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় সাবলেট রাখা হয় ঝর্ণাকে। তাকে একটি বিউটি পার্লারে কাজ শেখার সুযোগ করে দেন।

রিসোর্টকাণ্ডের পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন জান্নাত আরা ঝর্ণা। এর আগে পল্টন থানায় তার জন্য জিডি করেছেন ঝর্ণার বড় ছেলে। সবশেষ কলাবাগান থানায় ঝর্ণার বাবা জিডি করে মেয়ের সন্ধান চান। এর পরদনই ‍পুলিশ খুঁজে বের করে ঝর্ণাকে তার বাবার জিম্মায় দেন। এর একদিন পরই ধর্ষণের মামলা করলেন ঝর্ণা।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন