বিজ্ঞাপন

সরকার অনুমতি না দিলেও চলবে গণপরিবহন, ঘোষণা পরিবহন মালিক গ্রুপের

May 2, 2021 | 6:54 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সরকার অনুমতি না দিলে মালিক-শ্রমিকরা নিজ উদ্যোগে দুই-একদিনের মধ্যে ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে’ গণপরিবহন চালাতে বাধ্য হবেন বলে জানিয়েছে ‘চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ’।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২ মে) সকালে নগরীর বিআরটিসি মার্কেটে আন্তঃজিলা বাস মালিক সমিতির কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু এ ঘোষণা দিয়েছেন। এসময় পরিবহন শ্রমিক নেতারাও মালিকদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সরকার লকডাউন ঘোষণা করেছে। আমরা এর বিরোধী নই। কিন্তু এমন এক লকডাউন, এই লকডাউনে সবকিছু খোলা থাকলেও শুধু গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। সব কারখানায় হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করছে। মার্কেট-শপিংমল খুলে দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় দোকানপাট খোলা আছে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই।’

‘মোটরসাইকেল, অ্যাম্বুলেন্সে করে এবং পুলিশের সামনে দ্বিগুণ ভাড়ায় পিকআপ, মিনি ট্রাক-ইজি বাইকে বেশি ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। সেখানে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে করোনা সংক্রমণের জন্য শুধু একমাত্র বাস ও চেয়ার কোচগুলো দায়ী। সরকার যদি অনুমতি না দেয় তাহলে দুই-একদিনের মধ্যে মালিক-শ্রমিকরা নিজ উদ্যোগে গণপরিবহন চালাতে বাধ্য হবেন। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হবে’, বলেন পরিবহন মালিক গ্রুপের এই নেতা।

বিজ্ঞাপন

মঞ্জু আরও বলেন, ‘বর্তমান সময়ে সারাদেশের পরিবহন ব্যবস্থা মহাসংকটে এবং ধ্বংসের মুখে পড়েছে। লকডাউন কিংবা গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পরিবহনের প্রাতিষ্ঠানিক খরচ বন্ধ থাকে না। বিভিন্ন পরিবহন সার্ভিসের প্রধান ও শাখা কার্যালয়ের ভাড়া, কর্মচারিদের বেতন ইত্যাদি মালিকের কাঁধের ওপর চড়ে বসে। আবার পরিবহন শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ে। মঞ্জুর দাবি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চালানোর সিদ্ধান্ত দেয়া হলে মালিকরা দুই ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়। একদিকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় আর অন্যদিকে ব্যবসায়িক ক্ষতিতেও পড়তে হয় পরিবহন মালিকদের।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুই সিটে যে ভাড়া আদায় করা হয় সেখানে দুই সিটে এক জন করে যাত্রী পরিবহনের জন্য বলা হলে তাদের আয়ও কমে যায় ৪০ শতাংশ। আবার প্রতি যাত্রীতে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নিতে হলে তা যাত্রীদের ওপর চাপও সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি নামাতে হলে প্রতিটি গাড়ির জন্য সরকারকে বিভিন্ন খাতে মোট ২৩ হাজার ১০০টাকা অগ্রিম ট্যাক্স দিতে হয়। পরিবহন খাতে সরকার বছরে হাজার কোটি টাকা অগ্রিম ট্যাক্স দেওয়ার পরও এ খাতে কোনো ধরনের ভুর্তকি কিংবা সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু পোশাক ও অন্যান্য শিল্পকে রক্ষার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।’

পাঁচ দফা দাবির মধ্যে আছে- বিনা সুদে পরিবহন মালিকদের ঋণ দেওয়া, করোনাকালীন একবছর সময়ে ব্যংক ঋণ ও কিস্তির সুদ মওকুফ, কিস্তির টাকা আদায়ে হয়রানি ও মামলা দেওয়া বন্ধ, করোনা মহামারির সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদের সময় বাড়ানো ও পরিবহন শ্রমিকদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি খোরশেদ আলম, কার্যকরী সভাপতি মুহাম্মদ সৈয়দ হোসেন, অতিরিক্ত মহাসচিব আহসান উল্লাহ চৌধুরীসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী বলেন, ‘লকডাউনের নামে পরিবহন শ্রমিকদের ওপর অবিচার হচ্ছে। মার্কেট-শপিংমল, কলকারখানা সব খোলা। দোকানপাটও খোলা। মোটর সাইকেলে মানুষ যাচ্ছে। প্রাইভেট কারে মানুষ গাদাগাদি করে যাচ্ছে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। সব দায় কি তাহলে পরিবহন শ্রমিকদের শুধুই।’

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবহন শ্রমিকরা আপনাদের প্রতিপক্ষ নই। ২০১৩ সালে এদেশে যখন জ্বালাও-পোড়াও চলছিল, আমরাই জীবন বাজি রেখে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলাম। পরিবহন শ্রমিকদেরও পরিবার আছে। তাদের কষ্টটা একবার বুঝুন।’

বিজ্ঞাপন

তিন দফা দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালানোর অনুমতি দিতে হবে। শ্রমিকদের পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া পরিবহন শ্রমিকদের কাছে দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।’

সারাবাংলা/আরডি/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন