বিজ্ঞাপন

পরমুখাপেক্ষী হবো না এটি আমাদের চিন্তা: প্রধানমন্ত্রী

May 6, 2021 | 4:58 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে যেন আর কখনো পরমুখাপেক্ষী হতে না হয়। কারও মুখের দিকে তাকিয়ে যেন চলতে না হয়। আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। নিজের পায়ে দাঁড়াব আর সম্মান নিয়ে চলব। এটিই হচ্ছে আমাদের চিন্তা। আমরা চাই, আমাদের দেশের সার্বিক অর্থনীতি হোক।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৬ মে) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার অবকাঠামো ও জলযানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন প্রকল্প এলাকায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ সব জলযান ও অবকাঠামোর উদ্বোধন করেন ঘোষণা করেন।

গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। অন্যদিকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালেয়র সভাকক্ষে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন: চলাচলকারী প্রত্যেক নৌযানের রেজিস্ট্রেশন থাকা উচিত: প্রধানমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরকারে আসার পর সারা বাংলাদেশের উন্নয়ন করছি। কারণ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে, আমি নৌ মন্ত্রীকে দিয়েছি একেবারে উত্তরবঙ্গ থেকে। যাদের বড় বড় নদী দেখার সুযোগ হয় না। তাদেরকে আমি নিয়ে আসছি। অর্থাৎ বাংলাদেশটা আমাদের, সবাই সবাইকে চিনুক। এর পূর্বে মন্ত্রী দিয়েছিলাম ঠাঁকুরগাঁও থেকে, এবার দিয়েছি দিনাজপুর থেকে। কারণ আমি চাই যে, পুরো অঞ্চল তারা ঘুরে দেখুক এবং এই নদী অঞ্চলের মানুষ কী রকম কষ্টে থাকে আর তাদের কষ্টটা যেন দূর করা যায় সে জন্যই এই ব্যবস্থা। সে কারণেই এবার আমরা উত্তর থেকেই নিয়েই আসি।’

অবশ্য পানি সম্পদে দিয়েছি একেবারে বরিশালের মানুষ। যাতে ঠিকভাবে উন্নতিটা হয়। এর পূর্বে অবশ্য যিনি ছিলেন তিনি আমাদের দক্ষিণবঙ্গের বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নটা যেন হয়। তা ছাড়া আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি। এ পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে এখানে আমরা রেল সংযোগ দিচ্ছি এবং আমাদের আরেকটা পরিকল্পনা রয়েছে য়ে, আমাদের রেল সংযোগটা একেবারে দক্ষিণাঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছি। পায়রা বন্দর পর্যন্ত যেন যায় তার জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি হচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারেও যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘যখনি পদ্মা সেতু হয়ে যাবে এবং নদীপথগুলো আরও সচল হবে, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার যাতে উন্নতি হয় এবং আমাদের পণ্য পরিবহন ও পণ্য রফতানি বা অভ্যন্তরীণ পণ্য যাতে নৌপথে হতে পারে, সবদিকে বিবেচনা করেই আমি নিজেই উদ্যোগ নিয়েছিলাম পায়রা বন্দর তৈরি করা। যদিও এটি পায়রা নদীর তীরে না। কিন্তু আমি নামটা দিয়েছি পায়রা, পায়রা তো শান্তির প্রতীক। সেই জন্য এই নামটা দিয়েছিলাম।’

পায়রা বন্দরকে ঘিরে তার সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন। সেখানে একটা জাহাজ নির্মাণ শিল্প গড়ে তোলাসহ জাহাজ ভাঙা শিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ইনফ্রাস্টাকচার ডেভলপমেন্ট ফান্ড আমাদের কারও কাছে যেন হাত পাততে না হয়। আমরা যেন নিজেরা নিজেদের অর্থ ব্যয় করতে পারি। কারণ এক সময় আপনারা জানেন যে, একসময় পদ্মা সেতু নিয়ে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে। তখন আমরা বলেছিলাম কারও অর্থ না, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। আল্লাহর রহমতে, আপনাদের দোয়ায়, বাংলাদেশের জনগণের দোয়ায় আমরা সেই পদ্মা সেতু নিজের অর্থায়নে তৈরি করছি।’

‘এখন আমরা একটা ফান্ড আমাদের যে রিজার্ভের টাকা, সেই রিজার্ভের টাকা দিয়েই আলাদা একটা ফান্ড তৈরি করছি। যেটা বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন নামে অভিহিত। সেই ফান্ড থেকে প্রথম যে অর্থটা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেটা আমরা পায়রা বন্দরের যে ক্যাপিটাল ড্রেজিং হবে, সেই ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের টাকাটা আমরা এই ফান্ড থেকে দিয়ে দেব যদিও বেলজিয়ামের সঙ্গে চুক্তি আছে। তারপরও এখানে আমরা নিজের অংশটা আমাদের নিজেদের টাকা দিয়েই কাজ শুরু করে দিচ্ছি। কাজেই এই উদ্যোগটা গ্রহণ করেছি।’

বিজ্ঞাপন

‘যাতে বাংলাদেশকে আর কখনো পরমুখাপেক্ষী হতে না হয়। কারো মুখের দিকে তাকিয়ে যেন চলতে না হয়। আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। বিজয়ী জাতি। নিজের পায়ে দাঁড়াব। আর সম্মান নিয়ে চলব। এটাই হচ্ছে আমাদের চিন্তা। আমরা চাই, আমাদের দেশের সার্বিক অর্থনীতি হোক।’

প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে জনগণের কষ্ট হচ্ছে জানিয়ে বলেন, ‘আমি জানি করোনাভাইরাসের কারণে কিছুটা আমরা হয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তবু এই ক্ষতি আমাদের নিজেদেরই পুষিয়ে নিতে হবে। তার জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আর যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন করে যাচ্ছি।’

আর নদীগুলোকে বাঁচাতেই হবে আমাদের। এ জন্য তার সরকারের মেয়াদে এরইমধ্যে চিলমারীসহ দেশের বিভিন্ন নদী বন্দরের চালু নাবত্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন শুরু করার কথা তুলে ধরেন।

নৌপথের সঠিক ও সুষ্ঠ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের পণ্য পরিবহন সহজ হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি, এটা আরও শক্তিশালীভাবে গড়ে উঠুক। বাংলাদেশ বদ্বীপ; এই বদ্বীপকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেই জন্য এরইমধ্যে আমরা একটা প্ল্যান করেছি। ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ অর্থ্যাৎ ২১০০ সাল পর্যন্ত একটা পরিকল্পনা কাঠামো তৈরি করে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। যাতে এই বদ্বীপটা যেন সুরক্ষিত হয়, উন্নত হয়। এই অঞ্চলের মানুষ যাতে আর কখনো দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত না হয়। সার্বিকভাবে দেশের মানুষের উন্নতি হয়। সেই দিকেই লক্ষ্য রেখেই আমরা এই পরিকল্পনা করে দিয়ে গেলাম। আমাদের পরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা আসবে নিশ্চয়ই তারা অনুসরণ করবেন। যাতে আমাদের আমদানি রফতানিসহ সবকিছু বৃদ্ধি পাবে।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে আমাদের অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোর সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে আমাদের আমদানি-রফতানির আরও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, সুগম হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্যকে সহজ করার লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে নৌ পথে বাণিজ্য আরো বাড়িয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। তা ছাড়া বাংলাদেশের বন্দরগুলো যেন নেপাল ভুটান ভারত ব্যবহার করতে পারে সেই সুযোগটাও আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে নদীপথগুলো সচল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্যে ৭৫ এরপর ২১ বছর পরে আমরা ক্ষমতায় আসি। দেখলাম মংলা বন্দর মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছে। আমাদের সবসময় এটি ছিল প্রায় ৪০ ভাগ খাদ্য সামগ্রী মোংলা বন্দরে নামত এবং খুব সহজে নৌপথে বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে যেত। ঘাসিয়াখালি নদীটা প্রায় বন্ধ অবস্থায় ছিল। সেটা ড্রেজিং করে সচল করা হয়েছে। জাতির পিতার যে চিন্তাভাবনা যে নীতিমালা ছিল সেটাকে মাথায় রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

‘৭৫ পরবর্তী যারা ক্ষমতায় ছিল জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ বা খালেদা জিয়া তাদের আমলে কিন্তু কোনো ড্রেজার সংগ্রহ করা বা নদী খনন করা এদিকে তাদের কোনো দৃষ্টি ছিল না। আমরা ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৮টি ড্রেজার সংগ্রহ করি এবং আজ আরও ২০টি ড্রেজার বিআইডব্লিউটি’তে যুক্ত হয়ে মোট ৪৫ টি ড্রেজার হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তা ছাড়া বেসরকারি ড্রেজার দিয়ে বছওে প্রায় ৭৫০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা যায়। আর নদ-নদীগুলো সংরক্ষণের জন্য ড্রেজিংয়ের চাহিদা ১ হাজার ৬০০ লাখ ঘনমিটার।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেকেই সুন্দরবন নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করেন, অনেক কথা বলেন। আমরা যখন রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে গেলাম। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, ঘাষিয়াখালটা যখন বন্ধ হয়ে গেল, আর সুন্দরবনের ভেতর থেকে যেখানে জীববৈচিত্র্য পরিপূর্ণ জায়গা, সেখান থেকে যখন জাহাজ আসে তখন আমাদের এই আন্দোলনকারীরা তারা চুপ ছিলেন কেন? তারা কখনো এই কথাটা আনেননি কেন? সুন্দরবনের বিভতর দিয়ে পণ্য পরিবহন করলে ওই জায়গাগুলিতে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে, সুন্দরবনও নষ্ট হতে পারে। কারণ সুন্দরবনের এতো গভীর থেকে তারা জাহাজ নিয়ে আসে। তখন কিন্তু আমাদের এই আন্দোলনকারীরা কখনও এই বিষয়টা চিন্তাও করেননি, বলেনওনি। কিন্তু যখন মংলা বন্দরটা করা হয়, তখনও কিন্তু যাতে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন