বিজ্ঞাপন

খুনের পর গুম: মোবাইলের সূত্র ধরে দেড় বছর পর ‘খুনি’র সন্ধান

May 6, 2021 | 8:23 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় বাসা ভাড়া দিয়ে থাকতেন রুবেল। চাষাবাদ করতেন। ২০১৯ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে তার ভাই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে জানান, রুবেলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মাস তিনেক চেষ্টা করে পুলিশও তার সন্ধান বের করতে পারেনি। পারবেই বা কী করে, তাকে যে খুন করে পুঁতে রাখা হয়েছিল মাটিতে!

বিজ্ঞাপন

হ্যাঁ, রুবেল নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জিডি দায়েরের তিন মাস পর গত বছরের ২ মার্চ হালিশহরের চৌচালা এলাকায় জমি খুঁড়তে গিয়ে এক কঙ্কাল উদ্ধার হয়। রুবেলের ভাই দাবি করেন, এই কঙ্কাল তার ভাইয়ের মরদেহের। ডিএনএ পরীক্ষায় তার দাবির সত্যতা মেলে। নিখোঁজ রুবেলের কঙ্কালটা মিললেও তার খুনির অবশ্য সন্ধান মেলেনি।

তবে হাল ছাড়েনি পুলিশ। তদন্ত চালিয়ে গেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটি জানিয়েছে, একটা পর্যায়ে গিয়ে রুবেলের মোবাইল ফোনের সন্ধান মেলে। তারপর সেই মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই চলে আরও গভীর অনুসন্ধান। শেষ পর্যন্ত হত্যার প্রায় দেড় বছর আর রুবেলের কঙ্কাল উদ্ধারেরও একবছর পর সেই খুনিকে শনাক্ত কেবল নয়, গ্রেফতার হতে হলো পুলিশের হাতে। চাঞ্চল্যকর বা আলোচিত না হলেও সূত্রবিহীন এক হত্যাকাণ্ড ও গুমের রহস্য উদঘাটন হলো এর মাধ্যমে।

বুধবার (৫ মে) ভোরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে রুবেলকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সোহরাব হোসেন বলীকে (৫৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৬ মে) তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জানিয়েছেন, সোহরাব আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার সোহরাব হোসেন বলী লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্ণা ইউনিয়নের পূর্ব সিন্দুর্ণা গ্রামের মৃত মনছুর আকন্দের ছেলে। হত্যার শিকার মো. রুবেল (২৭) নীলফামারি জেলার গৌরগ্রামের আজিজিয়া রহমানের ছেলে।

জানা গেছে, সোহরাব হালিশহরে ওয়াসার নিজস্ব জমিতে চাষাবাদ করতেন। আর রুবেল এর পাশের জমিতে চাষাবাদ করতেন। তারা দু’জনেই হালিশহর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

বিজ্ঞাপন

পিবিআই জানিয়েছে, গত বছরের ২ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর থানার চৌচালা এলাকায় ওয়াসার একটি প্রকল্পের সীমানা খুঁটি স্থাপনের জন্য গর্ত করা হয়। ওই গর্তে একটি কঙ্কাল পাওয়া যায়। পুলিশ কঙ্কালের ডিএনএ সংগ্রহ করে এবং হালিশহর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। মামলা তদন্তের দায়িত্ব নেয় পিবিআই।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর রুবেলের ভাই সামছুল হালিশহর থানায় তার ভাই নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ১৯ নভেম্বর থেকে তার ভাইয়ের খোঁজ মিলছে না। চৌচালায় কঙ্কাল উদ্ধারের পর সামছুল থানায় এসে দাবি করেন, কঙ্কালটি তার ভাই রুবেলের। পরে তারও ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়। সিআইডির ডিএনএ ল্যাবে আলামত পরীক্ষা করে পিবিআই। তাতে দেখা যায়, দু’জনের ডিএনএ’তে মিল আছে। এভাবে কঙ্কালের পরিচয় শনাক্ত করে পিবিআই।

পিবিআই কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘কঙ্কালের পরিচয় বেরিয়ে আসার পর আমরা তার হত্যাকারী শনাক্ত ও গ্রেফতারের কার্যক্রম শুরু করি। রুবেলের সঙ্গে কার কার সম্পর্ক ছিল, ঘটনাস্থলে গিয়ে সেটা বের করার চেষ্টা করি। আমরা জানতে পারি, তার মোবাইলটি পাওয়া যাচ্ছে না। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সেই মোবাইলের অবস্থানও শনাক্ত করা হয়। সেই মোবাইল যার কাছে ছিল, তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তিনি জানান, মোবাইলটি সোহরাবের কাছ থেকে কিনেছেন। কিন্তু সোহরাবের অবস্থান আমরা শনাক্ত করতে পারছিলাম না। কারণ, ঘটনার পর সোহরাব তার পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। প্রায় একবছর ধরে নিবিড় তদন্তের পর সোহরাবের অবস্থান শনাক্ত করে আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি।’

কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড— জানতে চাইলে পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ বলেন, ‘সোহরাব জানিয়েছে, রুবেলের কাছ থেকে সুদে ২৮ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল। টাকা নেওয়ার আনুমানিক ছয় মাস পর ‍রুবেল পুরো টাকা একসঙ্গে ফেরত চায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় কৃষিজমিতেই তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে রুবেল কোদাল দিয়ে সোহরাবের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। সোহরাব দা দিয়ে রুবেলের মাথায় কোপ দেয়। রুবেল তাৎক্ষণিকভাবে লুটিয়ে পড়ে মারা যায়। তখন সোহরাব তার মোবাইল নিজের হেফাজতে নিয়ে রুবেলকে সেখানেই গর্ত খুঁড়ে পুঁতে রাখে। তিন দিন পর ভয়ে ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গাজীপুরে চলে যায়।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন