বিজ্ঞাপন

কুসিসি’র অবকাঠামো উন্নয়নে পরামর্শক খাতে ৫ কোটি টাকার প্রস্তাব

May 8, 2021 | 8:55 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপনডেন্ট

ঢাকা: কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিসি) অবকাঠামো উন্নয়নে পরামর্শক খাতেই প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। তবে এই কমাতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ভবন নির্মাণ প্রস্তাব বাদ দেওয়ার পক্ষে মত দেওয়া হচ্ছে।
‘কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার কার্যপত্রে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৪১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল হতে ১ হাজার ৩৮৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের তহবিল হতে ১৫৪ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পেলে চলতি বছর হতে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। গত ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় এই সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ।

উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় প্রসেঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন এর আগে সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেকোন প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় রাখাটা এখন একটি রেওয়াজের মতোই হয়ে গেছে। তবে একেবারেই প্রয়োজন না হলে এই ব্যয় পরিহার করা উচিত। বিশেষ করে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে সরকার যেসময় অপ্রয়েজনীয় ব্যয় হ্রাসের পথে হাঁটছে, সেখানে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়টি পরিকল্পনা কমিশনকে আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার।’

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাস্তা উন্নয়নের মাধ্যমে যানবাহন চলাচলে সময় ও ব্যয় কমানো এবং যানজট কমিয়ে আনা, ড্রেন নির্মাণের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও পরিবেশ উন্নয়ন, নগর ভবন নির্মাণের মাধ্যমে নগরবাসীকে নাগরিক সেবা দেওয়া। এ ছাড়া সৌন্দর্যবর্ধন কাজের মাধ্যমে নগরবাসীকে বিনোদন সুবিধা ও নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নগরীর পরিবেশ স্বাস্থ্য সম্মত বজায় রাখা, নগরীর পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করা এবং নগরীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান আয়তন ৫৩ দশমিক ৪ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। এখানে ২৬৮ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ১৫৪ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা, ৯৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পাকা ড্রেন, ৭৫ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার কাঁচা ড্রেন ও ২৪ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত রয়েছে।

২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদও দক্ষিণ পৌরসভা নিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়েছে। কুমিল্লা পৌরসভাটি সিটি করর্পোরেশনের উত্তরাংশে অবস্থিত এবং কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভাটি সিটির দক্ষিণাংশের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংলগ্ন।

সিটি কর্পোরেশনের অধিকাংশ রাস্তা ঘাট কাঁচা ও অনুন্নত। নতুন সিটি কর্পোরেশন হিসাবে নগরীতে নাগরিকদের নাগরিক অনেক সুবিধাদি এখনও নিশ্চিত করা সম্ভবপর হয়নি। একটি আধুনিক নগরিতে যা কিছু থাকা প্রয়োজন তা এই সিটিতে এখনও নেই। তাই নতুন এই সিটিতে নাগরিকদের পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধাদি সরবরাহের জন্য সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন বঞ্চিত এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ৩১৬ দশমিক ৮২১ কিলোমিটার রাস্তা, ২০২,৭৮ কিলোমিটার নর্দমা ও ১৩ দশমিক ৮২৯ কিলোমিটার ফুটপাত উন্নয়ন, ৩টি এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধন ও উন্নয়ন কাজ, ১৪৬টি কবরস্থান ও শ্মশানের উন্নয়ন, ১০ হাজার ৩৪৮ দশমিক বর্গমিটার বিশিষ্ট ক্লিনারদের আবাসিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, ১৭ হাজার ৮০০ বর্গ মিটার বিশিষ্ট নগর ভবন নির্মাণ, ৪০ হাজার ৪৭৩ দশমিক ৯৭ বর্গমিটার বিশিষ্ট মোস্তফাপুর ট্রাক টার্মিনাল স্থাপন, ৮ হাজার ১৯৪ দশমিক ৯৮ বর্গমিটার বিশিষ্ট বাস চকবাজার বাস টার্মিনাল উন্নয়ন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রস্তাবিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) উল্লেখিত অবকাঠামোগুলো নির্মিত হলে সিটি কর্পোরেশন এলাকার মানুষ উন্নত জীবন ব্যবস্থা এবং জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাবে। পিইসি সভার কার্যপত্রে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের মোট ব্যয় এক হাজার ৫৪১ কোটি ২৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা, যার মধ্যে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়ন ১৫৪ কোটি ১২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা অর্থাৎ মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১০ শতাংশ। সিটি কর্পোরেশনের অবদানের বিষয়টি সভায় আলোচনা করা যেতে পারে।

এ ছাড়া বাস ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ভুমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন বাবদ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ভুমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ব্যয় প্রাক্কলন ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ব্যয় প্রাক্কলন ডিপিপিতে সংযুক্ত করা প্রয়োজন।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ কোটি টাকা। এই ক্ষতিপূরণে ব্যয় কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে সে বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতি পূরণ ও পুনর্বাসন পরিকল্পনা বা রিসেটেলমেন্ট অ্যাকশান প্ল্যান ডিপিপিতে সংযুক্ত নেই, যা সংযুক্ত করা প্রয়োজন।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে ১৫ তলা ভিত্তি বিশিষ্ট ২টি বেইজমেন্টসহ ৯ তলা আধুনিক নগর ভবন নির্মাণ, সেবক কলোনি নির্মাণ, আঞ্চলিক অফিস বর্ধিতকরণ, তিনটি এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধন ও উন্নয়ন কাজের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে মোট ৪০২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ভবন নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কার্যক্রমগুলো এ প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে পৃথক প্রকল্প নিয়ে এই কার্যক্রম গুলো বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

প্রস্তাবিত প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নের পরামর্শকের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং পরামর্শক বাবদ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। এই ব্যয় হ্রাস করা যেতে পারে। প্রsস্তাবিত প্রকল্পে ৩১৬ দশমিক ৮২ কিলোমিটার রাস্তা পুনঃনির্মাণ ও উন্নয়ন, ২০৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ ও উন্নয়ন এবং ১৩ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে মোট ৮৯৬ কোটি ৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এরমধ্যে চলমান দুটি প্রকল্পের আওতায় রাস্তা, ফুটপাত ও ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। তাই নির্মিত রাস্তা,ড্রেন ও ফুটপাত প্রস্তাবিত প্রকল্প হতে বাদ দেওয়া যেতে পারে।

এই প্রকল্পে ৭টি পাবলিক টয়লেট ও ১৪২টি কবরস্থান ও ৪টি শ্বশান উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫৭ কোটি ৮৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। প্রকৃত পক্ষে কি ধরনের উন্নয়ন সাধন করা হবে তা জানা প্রয়োজন এবং এই খাতে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যয় হ্রাস করা যেতে পারে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে প্রচার ও বিজ্ঞাপন বাবদ ১০ লাখ টাকা, সম্মানী বাবদ ১২ লাখ টাকা , অনিয়মিত শ্রমিক মজুরি বাবদ ১৫ লাখ টাকা, স্টেশনারি, সিল ও স্ট্যাপ খাতে ২ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।

সারাবাংলা/জেজে/একে

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন