বিজ্ঞাপন

গবেষণায় করোনায় আক্রান্তদের ৯০ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি

May 8, 2021 | 7:41 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের নিয়ে এক গষেণায় দেখা গেছে, আক্রান্তদের প্রায় ৯০ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। একই গবেষণায় কোভিড-১৯ পরীক্ষায় (আরটি-পিসিআর) নেগেটিভ এমন ব্যক্তিদের প্রায় ২৬ শতাংশের শরীরেও অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে গব্ষেণায় অংশ নেওয়া প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষের শরীরে পাওয়া গেছে অ্যান্টিবডি। এই এন্টিবডি ৯ মাস পর্যন্ত তাদের শরীরে পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. আব্দুর ররের নেতৃত্বে এই গবেষণা পরিচালিত হয়। ‘চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি’ শীর্ষক’ এই গবেষণার প্রতিবেদন শনিবার (৮ মে) প্রকাশ করা হয়।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ও জেনারেল হাসপাতালের ব্যাবস্থাপনা কমিটির মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

এতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও উপসর্গযুক্ত রোগীদের শরীরে কোভিড-১৯ বিরোধী অ্যান্টিবডির উপস্থিতি ও এর স্থায়িত্ব অনুসন্ধান করার উদ্দেশ্যে এ গবেষণা হয়েছে। একইসঙ্গে রোগীদের আর্থসামাজিক অবস্থা, কোভিড আক্রান্ত হওয়ার সময় তাদের মধ্যে কী কী উপসর্গ বিদ্যমান ছিল এবং কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পরও কোনো ধরনের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা রয়ে গেছে কি না, এসব তথ্য জানতে গবেষণা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়েছে, দেশে করোনা মহামারি ‍শুরুর সাত মাস পর ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত চলমান এ গবেষণায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের ১ হাজার ৫৩০ জন ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর পজিটিভ ছিলেন ৯৪১ জন ও আরটি-পিসিআর নেগেটিভ ছিলেন ৫৮৯ জন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ পুরুষ ও ৭০ শতাংশ চাকরিজীবী।

গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের ৯২ শতাংশের জ্বর ছিল, কাশি ছিল ৬৩ শতাংশের, ঘ্রাণশক্তি লোপ পায় ৫২ শতাংশের। এ ছাড়া গলাব্যথা, মাথাব্যথা, পাতলা পায়খানা , শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গও ছিল। আক্রান্তদের ১৫ শতাংশের ডায়াবেটিস, ২৩ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ, ৯ শতাংশের শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা এবং হৃদরোগ ইত্যাদি ছিল।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পরে তাদের প্রায় ৫৭ শতাংশের কোনো না কোনো উপসর্গ দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান ছিল। এর মধ্যে শারীরিক দুর্বলতা, ব্যাথা, দুশ্চিন্তা, অবসাদ, কাশি, চুল পড়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ উল্লেখযোগ্য।

বিজ্ঞাপন

গবেষণা টিমের প্রধান ডা. আব্দুর রব সারাবাংলাকে বলেন, ‘গবেষণায় আমরা ৯ মাস পর্যন্ত রোগীদের শরীরে আ্যান্টিবডির উপস্থিতি পেয়েছি। গবেষণায় পাওয়া তথ্য আরও বিশদে বিশ্লেষণ করে আমরা যথাযথভাবে আন্তর্জাতিক জার্নালে উপস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল সরকারের চলমান কোভিড-১৯ টিকা কর্মসূচিকে আরও গতিশীল করবে।’

গবেষণায় আরও অংশ নেন একই হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী, চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আসিফ খান, সাউথ ক্যরোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহযোগী এম এ কবির চৌধুরী, সহকারী সার্জন অমি দেব ও চিকিৎসা কর্মকর্তা মোরতাহিনা রশিদ। এস আলম গ্রুপ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায় এই গবেষণা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর চট্টগ্রামে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের জন্য সর্বপ্রথম একমাত্র ভরসাস্থল ছিল জেনারেল হাসপাতাল। প্রথম অবস্থায় কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট ছিল, কিন্তু এখন পরিপূর্ণ।  চট্টগ্রামে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি সংক্রান্তে গবেষণা কার্যক্রম দেশে এই প্রথম। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এটি করেছেন। আশা করছি, তাদের অ্যান্টিবডি গবেষণা ভবিষ্যতে আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীর ও সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিম আকতার চৌধুরী। সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি এতে সভাপতিত্ব করেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন