বিজ্ঞাপন

মালিকদের দাবি সব কারখানায় বেতন-বোনাস হয়েছে, শ্রমিকরা বলছেন হয়নি

May 11, 2021 | 11:21 pm

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রায় শতভাগ কারখানায় বেতন বোনাস হয়েছে বলে দাবি করছেন পোশাক কারখানার মালিকরা। তবে শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, এখনো ৪০ ভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস বাকি রয়েছে। শিল্প পুলিশের তথ্যও বলছে, ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কারখানায় বেতন-বোনাস এখনো হয়নি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, বেশিরভাগ পোশাক কারখানায় ঈদের ছুটি তিন দিন দেওয়ায় শ্রমিকরা সন্তুষ্ট নন। শ্রমিক নেতারা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে শ্রমিকদের পাওনা ছুটি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তবে কোনো কোনো কারখানার শ্রমিকরা তিন দিনের বেশি ছুটিও পেয়েছেন। ১০ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে— এমন কারখানার তথ্যও পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান মঙ্গলবার (১১ মে) বিকেলে সারাবাংলাকে বলেন, ৯৯ শতাংশ কারখানায় বোনাস হয়ে গেছে। আর বেতন হয়েছে ৯৭ শতাংশ কারখানায়। বেতন-বোনাস বাকি থাকা কারখানাগুলোরও বেশিরভাগের বেতন-বোনাস আজকে (মঙ্গলবার) হয়ে যাবে। আর যে দুয়েকটি কারখানায় বাকি থাকবে, সেগুলোর বেতন-বোনাস আগামীকালই (বুধবার) হয়ে যাবে।

শ্রমিকদের ঈদের ছুটির বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তিন দিন ছুটি দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো মালিক ছুটি সমন্বয়ও করছেন।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি সারাবাংলাকে বলেন, মোটামুটিভাবে সব কারখানায় বেতন বোনাস দেওয়া হয়ে গেছে। সামান্য দুই-চারটি কাখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। সেগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। সবমিলিয়ে বিজিএমইএ’র তালিকাভুক্ত ৯৯ শতাংশ কারখানায় বেতন-বোনাস হয়ে গেছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকার যেভাবে বলছে, সেভাবেই ছুটি দেওয়া হচ্ছে। ছুটি তিন দিনই দেওয়া হচ্ছে। তবে পাওনা ছুটি থাকলে মালিকরা তা সমন্বয় করে ছুটি বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

এদিকে, নিট কারখানাগুলোর মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সারাবাংলাকে এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাসময়ে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিয়ে দিতে বলেছি। যখন ছুটি হবে, তার আগেই কারখানাগুলো বেতন-বোনাস দিয়ে দেবে। অনেকের হয়তো বেতন-বোনাস পরিশোধে অসুবিধা হবে। কারণ রফতানির ওপর যে প্রণোদনা দেওয়া হয়, মালিকরা এখনো তা পায়নি। বায়ারদের কাছ থেকে পেমেন্টও কম পেয়েছে। আবার শিপমেন্ট হলেও পেমেন্ট পিছিয়ে দিয়েছে। অনেকের কাছেই এখন তারল্য সংকট রয়েছে। সমস্যা থাকলেও শ্রমিকদের বেতন বোনাস পরিশোধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পোশাক কারখানার ছুটির বিষয়ে তিনি বলেন, ঈদে শ্রমিকদের তিন দিনের ছুটি আছে। তার সঙ্গে সমন্বয় করে এক থেকে দুই দিনের ছুটি বাড়িয়ে দিতে বলা হয়েছে। তবে শ্রমিকরা যেন কর্মস্থলে থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে তাদের কর্মস্থলে থাকতে হবে।

জানতে চাইলে বিকেএমইএ’র পরিচালক ফজলে শামীম এহসান সারাবাংলাকে বলেন, প্রায় শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস হয়েছে। দুয়েকটি কারখানায় সমস্যা রয়েছে। তারও সমাধান হয়ে যাবে। আর ছুটি নিয়েও ঝামেলা নেই। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ছুটি দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনিও পোশাক কারখানার মালিকদের দেওয়া এসব তথ্যের সঙ্গে একমত পোষণ করছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস হয়ে গেছে।’ তবে এমন দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ৬০ ভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস হয়েছে। বাকিগুলো হয়তো কাল-পরশু বেতন দেবে। আর তিন দিন ছুটি দিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। বছরে মাত্র তারা দুই বার বাড়ি যায়। বেশিরভাগ কর্মীর ছেলে-মেয়ে ও মা-বাবা বাড়ি থাকে। তাই ছুটি তাদের আরও বাড়িয়ে দেওয়া উচিত ছিল।

এদিকে, গাজীপুরে হামীম গ্রুপের একটি কারখানার শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, বেতন-বোনাস দিয়েছে। ছুটি হয়েছে আজ। ১০ দিনের ছুটি দিয়েছে। ওই শ্রমিক জানান, ছুটি নিয়ে ওই গ্রুপের একটি কারখানায় ঝামেলা হওয়ায় তাদের ছুটি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গাজীপুরের আরএক্স ফ্যাশনের একজন শ্রমিক জানান, তাদের কারখানায় ছয় দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ কারখানাতেই ছুটি দেওয়া হয়েছে ৬ থেকে ৭ দিন। এছাড়া ঢাকার একটি পোশাক কারখানা নাসা গ্রুপে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারখানাটিতে পাঁচ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, শিল্প পুলিশের তথ্য বলছে— বস্ত্র, তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, আসবাব, সেলফোন সংযোজন, ওষুধ ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম এলাকায় কারখানা আছে সাত হাজারের বেশি। এর মধ্যে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত গার্মেন্টসহ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কারখানার বেতন ও বোনাস হয়নি।

বাংলাদেশ শিল্পাঞ্চল পুলিশের ডিআইজি মাহাবুবর রহমান জানান, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র সদস্যসহ ১৫ শতাংশের কিছু বেশি কারখানার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেননি মালিকরা। এগুলো নিয়ে দেন-দরবার চলছে। হয়তো আগামীকাল কিছু কারখানা বেতন পরিশোধ করবে।

এর আগে, গত ২৯ এপ্রিল শ্রম মন্ত্রণালয় পোশাক কারখানার মালিকদের ১০ মে’র মধ্যে বেতন-বোনাস দেওয়ার দেওয়ার নির্দেশনা দেয়। সরকার নির্ধারিত সময় ছিল ১০ মে রাত পর্যন্ত। তবে সব কারখানা সে নির্দেশনা মানেনি। বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে মঙ্গলবারও (১১ মে) রাজধানীর কমলাপুরের রাস্তায় বিক্ষোভ করছে বিন্নী গার্মেন্টস নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এর আগে কয়েকটি স্থানে বেতন-বোনাস ও ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতেও বিক্ষোভ করেছে পোশাক শ্রমিকরা।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন