বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি হিসেবে সেদিন শেখ হাসিনাকে পেয়েছে বাংলাদেশ

May 17, 2021 | 4:37 pm

আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তিনি কৈশোর থেকেই প্রতিবাদী চরিত্র নিয়ে রাজনীতিতে আসেন। কিশোর বয়সেই ফরিদপুরের খরসূতী চন্দ্র কিশোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য যুবকদের অনুপ্রেরণা যুগিয়ে সংঘবদ্ধ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৩ সালে ফরিদপুর সরকারি ইয়াছিন কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৪ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফরিদপুর জেলা শাখার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরে প্রতিরোধ আন্দোলন ও সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন এবং দীর্ঘদিন কারা ভোগ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যনির্বাহী সদস্য, এবং পরবর্তী সময়ে সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে ১৯৮৪ সালে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ২০০১-০২ মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্বেক্ষক সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগের ১৭তম সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৯তম সম্মেলনে কার্যনির্বাহী সদস্য হন। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০তম সম্মেলনে ২০১৬-১৯ মেয়াদে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস নিয়ে কথা বলেছেন সারাবাংলার সঙ্গে। তার সঙ্গে কথোপকথনে অংশ নেন সারাবাংলার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট নৃপেন রায়। সেই কথোপকথনের উল্লেখযোগ্য অংশ এখানে তুলে ধরা হলো-

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার চার দশক: বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা’ এটাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

আব্দুর রহমান: ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাঙালি জাতির জাতীয় জীবনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে রাজনীতির এক মাইলফলক। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে নির্মম এবং নিষ্ঠুরভাবে বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করার পর থেকেই মূলত বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপরাজনীতির পাহাড় চেপে বসে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে মূলত সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধসহ সবকিছুকেই হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে দেশকে পাকিস্তানের ভাবধারায় গড়ে তোলার ষড়যন্ত্র করেছিল স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান ও খুনি মোশতাকসহ দেশি-বিদেশি অনেক শক্তি জড়িত ছিল। তাদের টার্গেটই ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের নব্য সংস্কৃতি বাংলাদেশে আমদানি করা।’

সারাবাংলা: বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে কার ভূমিকা ছিল?

বিজ্ঞাপন

আব্দুর রহমান: বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একাত্তরের পরাজিত শক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়। রাজাকার, আলবদর, আল-শামস এবং সরাসরি যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, যারা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে, জিয়াউর রহমান তাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিল। দেশে-বিদেশে তাদের চাকরি দিয়েছিল। এমনকি চাকরিতে প্রমোশনও দিয়েছিল। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটানোর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু দীর্ঘদিন লড়াই সংগ্রাম করে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিয়ে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একাত্তরের পরাজিত শক্তি সেই জায়গাকে ভুলণ্ঠিত করে।

সারাবাংলা: বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপরিহার্য ব্যক্তিটি কে ছিলেন?

আব্দুর রহমান: বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল। তা না হলে শেখ হাসিনা যদি যদি ১৫ আগস্ট দেশে থাকতেন, তাহলে সেদিন তিনি বাঁচতেন না। তাকেও মেরে ফেলা হতো। আল্লাহর অশেষ রহমত তিনি এবং শেখ রেহানা বেঁচে গিয়েছেন। তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি হয়ে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করলেন। এসেই দেখলেন বিমানবন্দর থেকে গ্রামে-গঞ্জে, পথে-প্রান্তরে, হাট-বাজারে সব জায়গায় মানুষের এক আওয়াজ- শেখ হাসিনার বেশে বঙ্গবন্ধুই ফিরে আসছেন। সেদিন গোটা জাতি এক কাতারে কাতারবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেন। তিনি শুধু মৃত্যু ঝুঁকিকে উপেক্ষা করে বাংলার মাটিতে পা রাখেন। তারপরও তিনি সেই মহাসমাবেশে দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মাটিতে আসলাম। আমার একটাই লক্ষ্য। সেটি হলো- আমার বাবা যেই স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। এই দেশের দুঃখী-মেহনতি, কৃষক, শ্রমিকের মুখে হাসি ফোটানোর এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই আসছি। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন যদি পূরণ করতে পারি তাহলে যথার্থ অর্থেই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: ওই সময় থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার অবদানকে আপনি কীভাবে মূল্যয়ন করবেন?

আব্দুর রহমান: শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার সরকারের পতন হলো। তীব্র আন্দোলনের মুখে জনরোষে তাকে পরাস্ত হতে হল এবং সেই থেকে গণতন্ত্রের উত্তরণ শুরু হলো। তারপর একটা নির্বাচন হলো। সেই নির্বাচনে স্থুল কারচুপির মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হল না। তারপরও এদেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় শামিল হতে এগিয়ে গেলেন। ১৯৯৬ সালে ১২ জুন নির্বাচন হলো। সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনার জয়ের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের বিজয় হলো। তিনি ক্ষমতায় এলেন। তারপর থেকে ধীরে ধীরে তিনি বহু বাধা-বিপত্তির পরও তিনি গণতন্ত্রের মুক্তির পথ সুগম করলেন এবং আজকের এই বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের একটি দেশ হিসেবে গড়ে তোলার অবিরাম চেষ্টা তিনি করে যাচ্ছেন। বিশ্ববাসী আজ বাংলাদেশকে নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আর এর পেছনে কাজ করেছে শেখ হাসিনার প্রবল সাহস, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, সততাসহ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বলয়, গৃহহীনদের গৃহ দান, বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো সবকিছু মিলিয়ে আজকের অনন্য বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা: ১৯৮১ সালের সেই দিনটি আপনার স্মৃতিতে এখনও কতটুকু উজ্জ্বল?

আব্দুর রহমান: সেদিন অঝরে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল। আমরা সবাই সেদিন এয়ারপোর্টে (তেজগাঁও) গিয়েছিলাম। তেজগাঁও বিমানবন্দরে তিনি যখন অবতরণ করলেন, তখন লাখ লাখ মানুষের গগণবিদারী চিৎকার। সেই দৃশ্য ভোলার নয়। অশ্রুসিক্ত সব মানুষ। মনে হচ্ছিল, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আবার সেদিন শেখ হাসিনাকে কাছে পেয়ে সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল। সেই আবেগ সেই, অনুভূতি ও ভালোবাসা নিয়েই তাকে বরণ করা হয়েছিল। লোকে লোকারণ্য তাকে এক নজর দেখার জন্য। মানুষের সে কি অস্থিরতা, কি যে প্রাণপণ চেষ্টা- সে দৃশ্য না দেখলে বোঝা যায় না! আমরা তাকে নিয়ে যখন শেরে-ই বাংলা নগরে আসলাম, তখন মানুষে মানুষ সয়লাব। সারা ঢাকা শহর জনতার স্রোতে ভেসে গেল এবং জনতার নগরীতে পরিণত হলো। জীবনযাত্রা বলা চলে সেদিন কেবল শেখ হাসিনাকে ঘিরেই ছিল। তারপরও উনি মঞ্চে আসলেন এবং কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। বারবার তিনি মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন। সেই দৃশ্য বর্ণনা করার মতো ভাষা আমার জানা নেই।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আব্দুর রহমান: সারাবাংলাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন