বিজ্ঞাপন

পুকুরের মাটি ইটভাটায় বিক্রি, ডিসি’কে দায়ী করে দোষ ঢাকার চেষ্টা

May 25, 2021 | 2:53 pm

মো. আশিকুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজবাড়ি: সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে রাজবাড়ি সদর উপজেলার দ্বাদশী ইউনিয়ন পরিষদের পুকুর পুনঃখননের মাটি বেআইনিভাবে ইটভাটায় বিক্রি করা হয়েছে। মাটি বিক্রির টাকা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২১’ প্রোগ্রাম সম্পন্ন করার জন্য জেলা প্রশাসককে চাঁদা দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা মো. লোকমান হোসেন ও সচিব এ কে এম রেজাউল কবির।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৪ মে) দুপুর ২টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় দ্বাদশী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে স্তুপ করে রাখা মাটি ভেকু দিয়ে ইটভাটার ড্রাম ট্রাকে লোড দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, সারাদেশে পুকুর-খাল উন্নয়ন প্রকল্পের (আইপিসিপি) আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ৬ লাখ ৭০ হাজার ৪১১ টাকা ব্যয়ে দ্বাদশী ইউনিয়ন পরিষদের পুকুর পুনঃখনন করে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোহান এন্টারপ্রাইজের পক্ষ থেকে সাব ঠিকাদার হিসেবে দুই মাস আগে কাজটি শেষ করেন মো. হাবিবুর রহমান মিয়া।

পুকুর পুনঃখননের মাটি বিক্রির কথা স্বীকার করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফেজ মো. লোকমান হোসেন বলেন, “কিছু মাটি দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের আশেপাশের খানাখন্দ ভরাট করা হয়েছে এবং কিছু মাটি ২০ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়েছে। মাটি বিক্রির টাকা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২১’ প্রোগ্রামের জন্য দেওয়া হয়েছে। এর বেশি আমি আর কোন কথা বলতে পারবোনা। ইউপি সচিব সাহেব এই বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন।”

বিজ্ঞাপন

ইউপি সচিব এ কে এম রেজাউল কবির বলেন, “ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পুকুর পুনঃখনন করে যাওয়ার পর ডিসি স্যার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২১’ প্রোগ্রাম সম্পন্ন করার জন্য আমাদের কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা চান। পরে আমরা ইউনিয়ন পরিষদে মিটিং করে রেজুলেশনের মাধ্যমে পরিষদের দফাদার শহিদুল ইসলামের কাছে ২০হাজার টাকায় মাটি বিক্রি করি। পরে মাটি বিক্রির টাকা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২১’ প্রোগ্রামের জন্য ডিসি স্যারকে দেই।”

দ্বাদশী ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পুকুর পুনঃখননের মাটি আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবের কাছ থেকে ২০হাজার টাকা দিয়ে কিনি। পরে আমি সেই মাটি একটি মাদরাসায় ভরাটের কাজে বিক্রি করেছি। কোনো ইটভাটায় আমি মাটি বিক্রি করিনি।’

পুকুর পুনঃখনন কাজের সাব ঠিকাদার হাবিবুর রহমান মিয়া বলেন, ‘পুকুর পুনঃখননের মাটি দিয়ে আমরা পুকুরপাড় বাঁধার কাজ সম্পন্ন করার পরও ৭০ হাজার ঘনফুট মাটি উদ্বৃত্ত থাকে। যার বাজার মূল্য অন্তত ৭০ হাজার টাকা। আমাদের কাজ শেষে দ্বাদশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সচিব জানান উদ্বৃত্ত ৭০ হাজার ঘনফুট মাটি দিয়ে তারা তাদের ইউনিয়ন পরিষদের পিছনের খাল ভরাট করবেন। পরে তারা সেই মাটি দিয়ে কি করেছেন আমরা তা বলতে পারবো না।’

বিজ্ঞাপন

পুকুর পুনঃখনন কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) রাজবাড়ী সদরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পুকুর পুনঃখননের মাটি দিয়ে পুকুরপাড় বাঁধতে হবে। এরপর মাটি উদ্বৃত্ত থাকলে তা ইউনিয়ন পরিষদের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কোন অবস্থাতেই মাটি বিক্রি করা যাবে না।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমের নম্বরে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমি মো. সায়েফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ডিসি স্যার কারও কাছ থেকে কোনো প্রোগ্রামের কথা বলে টাকা নেবেন; এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ী সদর উপজেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২১’ প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়। এটি জাতীয় একটি প্রোগ্রাম ছিলো। প্রোগ্রামটি সফলভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমি স্থানীয়ভাবে একটি ফান্ড তৈরি করেছিলাম। দ্বাদশী ইউনিয়ন পরিষদ ওই ফান্ডে কিছু অর্থ দিয়েছিলো। তবে ইউনিয়ন পরিষদের পুকুরের মাটি কোথায় কিভাবে কারা বিক্রি করেছে তা আমার জানা নেই। আর কোনো মাটি বিক্রির টাকার সাথে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২১’ প্রতিযোগিতার সম্পর্ক নেই।”

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন