বিজ্ঞাপন

টিকটক হৃদয় ও সহযোগীরা আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের সদস্য: পুলিশ

May 29, 2021 | 5:59 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তরুণীকে বিবস্ত্র করে পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত সবাই আন্তর্জাতিক একটি মানবপাচার চক্রের সদস্য। বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু ব্যক্তির গড়ে তোলা এই চক্রটির নেটওয়ার্ক মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত বিস্তৃত। স্কুলপড়ুয়া কিশোরী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নারীদের ভালো চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চক্রটি বিভিন্ন দেশে পাচার ও পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে থাকে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৯ মে) বিকেলে শ্যামলীতে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এসব তথ্য জানান।

বাংলাদেশ ও ভারতের আসামে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে যে কয়েকজনকে নির্যাতন চালাতে দেখা গেছে, তাদের সবাইকে বৃহস্পতিবার (২৭ মে) ব্যাংগালুরু পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। তবে নির্যাতনের শিকার মেয়েটির সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। ভারতের পুলিশ তাকে খুঁজে পেতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ডিসি শহীদুল্লাহও এ তথ্য জানিয়েছেন সাংবাদিকদের।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

ব্রিফিংয়ে ডিসি শহীদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু অপরাধী মিলে এই সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রটি গড়ে তুলেছে। এই চক্রটির নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইসহ কয়েকটি দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

কিভাবে এই পাচার চক্রটি কাজ করে থাকে, সে বিষয়টি তুলে ধরে ডিসি বলেন, স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া মেয়েসহ বিবাহিত গৃহিণী পর্যন্ত সব বয়সী নারী এই চক্রের টার্গেট। মূলত টিকটক ভিডিও তৈরির নাম করে তরুণ-তরুণীদের ফেসবুক গ্রুপে সংযুক্ত করা হয়। সেই ফেসবুক গ্রুপটি এই আন্তর্জাতিক চক্রের মূল পৃষ্ঠপোষক।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, গ্রুপের অ্যাডমিনের তত্ত্বাবধানে গত বছরের শেষের দিকে ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি জেলার একটি রিসোর্টে সাত-আটশ তরুণ-তরুণীকে নিয়ে একটি পুল পার্টি আয়োজন করা হয়। এরকম নানাভাবে কিশোরী-তরুণীদের যোগাযোগের মধ্যে আনা হয়। অন্যদিকে গ্রুপের কিছু সদস্য আছেন, যাদের কাজই হলো মেয়েদের ভারতের বিভিন্ন সুপার মার্কেট, সুপার শপ ও বিউটি পার্লারে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রস্তাব দিয়ে প্রলোভিত করা। এভাবেই টার্গেটে থাকা নারীদের প্রলোভিত করে তারা ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করে থাকে। আর পাচারের পর তাদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়।

ডিসি শহীদুল্লাহ বলেন, এই চক্রের মূল আস্তানা ব্যাংগালুরুর আনন্দপুর এলাকায়। মূলত পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্য নিয়েই কিশোরী-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সী নারীদের ভারতে পাচার করা হয়। এই চক্রের সঙ্গে ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু হোটেলের চুক্তিও রয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী হোটেলগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন বয়সের মেয়েদের সরবরাহ করা হয় বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।

ডিএমপি’র তেজগাঁও বিভাগের এই উপকমিশনার বলেন, চক্রের সদস্যরা পাচার করা নারীদের ভারতের ব্যাংগালুরুর আনন্দপুরায় নিয়ে যাওয়ার পর কৌশলে নেশাজাতীয় দ্রব্য বা মাদক সেবন করিয়ে বা জোর করে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। এরপর তাদের হুমকি দেওয়া হয়, অবাধ্য হলে বা পালানোর চেষ্টা করলে এই ভিডিও পরিবারের কাছে, বিবাহিত হলে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আমরা এরকম সুনির্দিষ্ট বেশকিছু তথ্য পেয়েছি।

বিজ্ঞাপন

ডিসি আরও বলেন, ভাইরাল ভিডিওটির ঘটনায় জড়িত সবাই বাংলাদেশি এবং তারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি।

ওই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সাইবার মনিটরিং টিমের নজরে এলে পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে। পরে নির্যাতক হিসেবে রিফাতুল ইসলাম ওরফে ‘টিকটক হৃদয় বাবু’কে শনাক্ত করে পুলিশ। তার বাসা মগবাজার। তার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কৌশলে যোগাযোগ করে জানা যায, ঘটনাটি ঘটেছে ভারতে, ১৫-২০ দিন আগে। নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বাড়ি কিশোরগঞ্জ। ঢাকায় হাতিরঝিল এলাকায় বাসা। মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে মেয়েটির পরিবারও তাকে চিনতে পারে। পরে মেয়েটির বাবা হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর বলছে, ভিডিওটি আসাম-পশ্চিমবঙ্গেও ভাইরাল হয়। ভিডিও থেকে নির্যাতকদের ছবির স্ক্রিনশট নিয়ে আসাম পুলিশ টুইটারে পোস্ট করে। তাদের সন্ধান দিতে পারলে তার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করে। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্যাংগালুরু থেকে টিকটক হৃদয় বাবু, সাগর, মোহাম্মদ বাবা শেখ ও হাকিল নামে চার তরুণ এবং এক তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার নারীর পরিচয় জানানো হয়নি। এ ঘটনায় ব্যাংগালুরুতেও একটি মামলা হয়েছে।

এর মধ্যে শুক্রবার গ্রেফতার চার তরুণকে নিয়ে ব্যাংগালুরু পুলিশ তদন্তের জন্য ওই ভিডিও’র ঘটনাস্থলে যায়। এসময় টিকটক হৃদয় ও সাগর পুলিশকে আক্রমণ করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি করে। পরে গুলিবিদ্ধ টিকটক হৃদয় ও সাগরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর মধ্যে শুক্রবার রাতে ডিসি শহীদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। টিকটক হৃদয় ও তার সহযোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে অন্য সব অপরাধীর মতো বেগ পেতে হবে না বলে আশাবাদ জানান তিনি।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন