বিজ্ঞাপন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে কঠোর লকডাউন: আমের বাজারজাতকরণ নিয়ে শঙ্কা

May 30, 2021 | 9:38 am

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত এক সপ্তাহে বেড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় মঙ্গলবার (২৫ মে) থেকে জেলায় কঠোর লকডাউন দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কঠোর লকডাউনের আওতায় জেলায় প্রবেশ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে জেলার আমচাষীরা। তবে পরিবহনের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এর কোনো প্রভাব পড়বে না আম বাজারে। স্বাভাবিক থাকবে আমবাজার, পরিবহন ও বাজারজাতকরনের সকল কার্যক্রম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ।

বিজ্ঞাপন

গুটি ও গোপালভোগ জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই শুরু হবে খিরসাপাত, হিমসাগর, মোহনভোগ, ক্ষুদি খিরসা, লক্ষ্মণভোগ, বোম্বাই জাতের আম পাড়া। সেলক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলার আমচাষী, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও রফতানিকারকরা। তবে হঠাৎ করেই জেলাব্যাপী কঠোর লকডাউন ঘোষণায় কৃষকদের মনে নানা শঙ্কা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসনের সঠিক বার্তা না পৌঁছানো ও মাঠপর্যায়ে পুলিশের তৎপরতা দেখেই তাদের মনে এই শঙ্কা বলে মনে করেন সচেতন মহল।

গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের আমচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে কঠোর লকডাউন চলছে, রাস্তায় কোনো গাড়ি চলতে দেয় না পুলিশ। এভাবে লকডাউন হলে কিভাবে কোথায় আম বিক্রি করবো? আশপাশের প্রায় সবার গুটি জাতের আম পাড়া হয়ে গেছে। ভাবছিলাম, বুধবার থেকে আম পাড়া শুরু করবো। কিন্তু বাজারে আম নিয়ে যাওয়া নিয়ে মনের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে।

কঠোর লকডাউনেও আম পরিবহনে কোনো বাধা নেয়, বিষয়টি তিনি জানেন কি না, এমন প্রশ্ন করলে তিনি আরও বলেন, আমরা জানি ও দেখতে পাচ্ছি লকডাউন চলছে। কিন্তু আম পরিবহন বা বাজারজাতকরনে কোনো বাধা নেই, এমনটা জানা নেই। তার মতো অনেক আমচাষী এমন হতাশা ও আতঙ্কে ভুগছেন বলেও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

ভোলাহাট উপজেলার আমচাষী সাদিকুল ইসলাম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম কিনতে বেশিরভাগ ক্রেতায় আসে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। কঠোর লকডাউনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা আসতে পারবে না। এতে আমি বিক্রি করা যেমন কঠিন হবে, তেমনি অন্যদিকে নায্যমূল্য পাবে না আমচাষীরা। তাই বিষয়টি নিয়ে ভোলাহাটের আমচাষীরা উদ্বিগ্ন।

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ও আম রফতানিকারক ইসমাঈল খান শামিম বলেন, জেলার বেশিরভাগ আমচাষী, ব্যবসায়ী ও আড়তদার স্বল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত। তাই আম বাজারজাতকরন ও পরিবহন চলমান কঠোর লকডাউনের আওতায় নেই বিষয়টি সিংহভাগ আমচাষী জানেন না। তাদের মধ্যে গতবছরের মতো ব্যবসা করতে না পারার একটা আতঙ্ক কাজ করছে। এ নিয়ে আমচাষীদের সচেতন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসন কঠোর লকডাউনের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে আম বাজার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি আমচাষী, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও রফতানিকারকদের জন্য তেমন সুফল বয়ে আনবে না। কারণ এভাবে পর্যাপ্ত পরিমানে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হবে না এবং আমচাষীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপজেলা পর্যায়ের আম বাজারগুলোকে আরও বেশি মনিটরিং করা ও বাজারের পরিধি বাড়ানোই হবে যুক্তিযুক্ত।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। তবে জেলার প্রধান অর্থকারী ফল আমের বাজার চলমান রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমের বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে পরিবহনে দেওয়া হয়েছে ছাড়। রাখা হয়েছে নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে। সরাসরি বাগান থেকে ট্রাকে আম পরিবহন করা যাবে। এছাড়াও অনলাইনে অর্ডার গ্রহণ করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম চলমান থাকবে।

তিনি আরও জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে হাট বসানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন যেসব বাজার রয়েছে সেগুলোর আকার বাড়ানোরও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২৪ মে) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ সংবাদ সম্মেলন এই কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় এ বছর প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এসব আম বাগানের প্রায় ২৭ লাখ গাছ থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন