বিজ্ঞাপন

জিদানের খোলা চিঠি: আমি সবসময় মাদ্রিদিস্তা হয়েই থাকব

May 31, 2021 | 1:00 pm

স্পোর্টস ডেস্ক

কোচ জিদানের রিয়াল মাদ্রিদের ডাগ আউটে অভিষেক ঘটে দলের টালমাটাল অবস্থার মধ্যে। মৌসুমের মাঝপথে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সে সময়কার কোচ রাফা বেনিতেজ বরখাস্ত হলে দায়িত্ব পান জিদান। এরপর ইতিহাস রচনা করে জয় করেন টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ, পরে ২০১৮ সালে প্রথমবার ক্লাব ছেড়ে যান। পরের বছরে আবারও রিয়ালের দুঃসময়ে লস ব্ল্যাঙ্কোসদের ডাগ আউটে ফেরেন জিদান। দ্বিতীয়বার ফেরার দুই মৌসুম পরে এসে আবারও রিয়াল ছাড়লেন জিদান। অবশেষে তার রিয়াল ছাড়ার ব্যাপারে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি দিয়েছেন জিজু। সেখানে জিজু জানিয়েছেন, প্রিয় মাদ্রিদিস্তারা আমি সবসময় তোমাদের মতোই সমর্থক হয়ে থাকবো।

বিজ্ঞাপন

রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে খেলোয়াড় জিদান এবং কোচ জিদানের সম্পর্ক ২০ বছরের। খেলোয়াড় জিদানের সাফল্য যেমন ঈর্ষনীয় ঠিক কোচ জিদানের সাফল্যও অবিশ্বাস্য। রিয়ালের খেলোয়াড়ি জীবনের সাফল্যকেও জিদান ছাড়িয়ে গেছেন ডাগআউটে দাঁড়িয়ে। বারবার রিয়ালের খারাপ সময়ে ফিরেছেন ক্লাবে। দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন কাঁধে আর আবারও রিয়ালকে তুলেছেন শীর্ষে। তবে এতকিছুর পরেও রিয়াল ছাড়লেন জিদান। কেন ছাড়লেন? সেটিও পরিস্কার করে জানালেন এবার।

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এএসকে এক খোলা চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন রিয়াল ছাড়ার কারণ। রিয়ালকে সম্ভাব্য প্রায় সকল শিরোপায় জিতিয়েছেন জিদান। এত সাফল্যের পরেও ক্লাবের পক্ষ থেকে জিদানের ওপর আস্থা রাখা হয়নি। এমনটাই জানিয়েছেন এই কিংবদন্তি। জিদান বলেন, ‘আমি ক্লাব ছেড়েছি, কিন্তু কখনোই অনুশীলন করাতে হাঁপিয়ে উঠিনি। ২০১৮ সালের মে মাসে ক্লাব ছেড়েছিলাম। কারণ, তখন আমার মনে হয়েছিল, আড়াই বছরের সাফল্য এবং এতগুলো শিরোপার পর দলকে উদ্বুদ্ধ করতে নতুন কাউকে দরকার। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। এবার আমি ক্লাব ছাড়ছি, কারণ ক্লাব আমার ওপর সেভাবে আস্থা রাখতে পারছিল না ক্লাব।’

২০১৬ সালে যখন রিয়ালের ডাগ আউটে জিদান আসলেন তখন সদ্যই ঘরের মাঠে বার্সেলোনার কাছে ৪-০ গোলের ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয় তারা। এমন সময়ে জিদান দলের দায়িত্ব নিলেন আর এরপর চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় করলেন। পরের মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ। তারপরের মৌসুমে রেকর্ড গড়ে টানা তৃতীয়বার জিতলেন চ্যাম্পিয়নস লিগ। এরপরে তো ক্লাবই ছেড়ে গেলেন জিজু। দ্বিতীয় দফায় ২০১৯ সালে আবারও রিয়ালের ডাগ আউটে জিজু। এসেই প্রথম পূর্ণ মৌসুমে জিতলেন লা লিগা। আর পরের মৌসুমে শিরোপাহীন কাটানোর পরেই সিদ্ধান্ত নিলেন সরে দাঁড়ানোর। তবে এবার পেছনের কারণটা ভিন্ন।

বিজ্ঞাপন

২০১৬ থেকে এখন পর্যন্ত জিদানের সাফল্যের পেছনে যারা ছিল সেই খেলোয়াড়রা ফুরিয়ে এসেছে। সার্জিও রামোস ৩৫ বছর বয়সী, লুকা মদ্রিচ ৩৫ বছর পেরিয়েছেন, বয়স বাড়ছে ক্রুস, মার্সেলো, বেনজেমারও। তাই তো রিয়ালকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে নতুন পরিকল্পনা করছিলেন জিদান। কিন্তু তার পরিকল্পনার বাস্তবে রূপ দিতে একচুল সাহায্য পাচ্ছিলেন না ক্লাবের পক্ষ থেকে। এমনটাই জানিয়েছেন জিজু। তিনি বলেন, ‘একটি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ক্লাবের পক্ষ থেকে যেমন সমর্থন দরকার, সেটি আমি পাচ্ছিলাম না রিয়ালের কাছ থেকে। আমি ফুটবল বুঝি। বুঝি রিয়ালের কী কী দরকার। আমি জানি, যখন জেতা যায় না, তখন সরে দাঁড়াতে হয়। কিন্তু এখানে আমার অর্জনগুলোকে ভুলে যাওয়া হয়েছে।’

রিয়ালকে এমন ঈর্ষনীয় সাফল্য এনে দেওয়ার পরেও ক্লাবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট সম্মান পাননি জিদান। তাই তো আক্ষেপ নিয়ে বলেছেন, ‘প্রতিদিন ক্লাবের প্রত্যেকের সঙ্গে আমি সম্পর্ক গড়ে তুলেছি। আমি জন্মেছি জেতার জন্যই। এখানে এসেছিলাম শিরোপা জেতার জন্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষ, জীবন, আবেগের মতো বেশ কিছু জিনিস থাকে, যেগুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। কোনো না কোনোভাবে আমার ঘাড়ে দোষ চাপানোর একটা প্রবণতা দেখেছি। আমরা সবাই মিলে এখানে যে সাফল্য অর্জন করেছি, আমি সবার চোখে শুধু সম্মানের দৃষ্টিটাই দেখতে চেয়েছিলাম।’

সম্প্রতি ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরিন্তিনো পেরেজের সঙ্গে জিদানের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। সেটিও বলতে কার্পন্য করেননি জিজু। ‘ক্লাব ও ক্লাবের সভাপতির সঙ্গে কয়েক মাস ধরে আমার যেমন সম্পর্ক, সেটি একটু অন্য রকম হলেই ভালো লাগত। আমি কোনো বাড়তি সুবিধা চাইছি না; আমি কেবল আমাদের সবার অর্জনের স্বীকৃতি চেয়েছিলাম। আজকাল যেকোনো বড় ক্লাবে কোচদের মেয়াদ হয় কমবেশি দুই বছর। এর চেয়ে বেশি দিন থাকতে চাইলে অবশ্যই ক্লাবের মধ্যে মানবিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা লাগে। এই সম্পর্কটাই টাকা, খ্যাতি সবকিছুর চেয়ে বড়।’-বলেন জিদান।

বিজ্ঞাপন

জিদান আরও বলেন, ‘এটা খুবই কষ্টকর যখন আমি সংবাদমাধ্যমে পড়ছি যে নির্দিষ্ট এই ম্যাচে হারলে আমাকে বরখাস্ত করা হবে। এই ধরনের সংবাদ ক্লাবের পক্ষ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবেই প্রকাশ করা হয়। যেটা আমাকে এবং পুরো দলকে কষ্ট দেয়। আর এমন সংবাদ দলের মধ্যে অসন্তুষ্টির সৃষ্টি করে। সাংবাদিকদের উদ্দেশেও কিছু বলতে চাই। আমি শতাধিক সংবাদ সম্মেলন করেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা ফুটবল নিয়ে তেমন কথা বলিনি। আমি আপনাদের কিছু শেখাতে চাই না, কিন্তু সব সময় বিতর্কিত বিষয় নিয়ে যদি প্রশ্ন না করতেন, তাহলে ভালো হতো।’

রিয়ালের হয়ে এমন সাফল্যের সব কৃতিত্বই জিদান শুরু থেকে খেলোয়াড়দের দিয়ে আসছেন। বিদায় বেলাতেও তার ব্যতয় ঘটেনি। তাঁর শিষ্যরা যে তাঁর জন্য নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়েছেন তা জিদান আরও একবার জানান দিলেন। ‘আমি জানি দল কী চায়। গত ২০ বছরে আমি এটা বুঝেছি যে ক্লাবের ভক্তরা শুধু জিততে চায়—আর সেটিই হওয়া উচিত। কিন্তু এটা মনে রাখা উচিত, আমি ও আমার ক্লাবের খেলোয়াড়েরা সব সময় সর্বোচ্চটুকু দিতে চেষ্টা করেছি। আমি নিশ্চিত করতে পারি, আমরা আমাদের শতভাগ দিয়েছি।’-যোগ করেন জিদান।

তবে এতকিছুর পরেও জিনেদিন জিদান আজীবন একজন রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থক হিসেবেই রইবেন। সেটিও স্বীকার করলেন অকপটেই। সমর্থকসহ সকলের উদ্দেশ্যে জিদানের খোলা চিঠির শেষটা হয়েছে তাঁর মাদ্রিদ সমর্থক হিসেবে রয়ে যাওয়ার কথাটি দিয়েই। জিদান বলেন, ‘প্রিয় মাদ্রিদিস্তারা, আমি আজীবন তোমাদের মতো সমর্থক হয়েই থাকবো। আলা মাদ্রিদ।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন