June 2, 2021 | 10:47 am
গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) অভিঘাত মোকাবিলার লক্ষ্য নিয়ে আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট। এই ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দেশের নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আসছে বাজেটে তাদেরকে সুখবর দিতে চান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে মুনাফার হার বাড়ানোর ঘোষণা দিতে পারেন তিনি।
এদিকে, কোভিড পরবর্তী সংকট থেকে উত্তরণে উদ্যোক্তাদেরও নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে চায় সরকার। আর সে কারণেই বাজেটে কমানো হচ্ছে করপোরেট ট্যাক্স। কোভিডে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিতে গতি ফেরানো, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি ও স্থানীয় শিল্পে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কমানো হচ্ছে এই কর। এছাড়াও কোভিডে ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির ক্ষেত্রে এ সুবিধা দেওয়া হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহির্ভূত কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট ট্যাক্স হার ৩২ দশমিক ৫ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশের পরিবর্তে এ হার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পের করপোরেট কর ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে পোশাক খাতে গ্রিন কারখানা সনদধারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ১০ শতাংশ ও গ্রিন কারখানা সনদবিহীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স হার অপরিবর্তিত থাকছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
এদিকে, গত ৩ মার্চ প্রাক-বাজেট আলোচনায় ২০২১-২২ থেকে পরবর্তী চার অর্থবছরে পর্যায়ক্রমে করপোরেট কর হার আড়াই থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর প্রস্তাব করেছিলেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। নন-লিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে বর্তমানের সাড়ে ৩২ শতাংশের পরিবর্তে ৩০ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করে ডিসিসিআই। আর লিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে বর্তমানের ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২০ শতাংশ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়।
অন্যদিকে, গত ৯ মার্চ মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির এনবিআরের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, দেশে বর্তমান করপোরেট কর হার ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ হলেও ব্যবসায়ীদের আমদানিতে কর, মধ্যবর্তী বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কর এবং সর্বোপরি ফিনিশড প্রোডাক্টেও কর দিতে হয়। সবকিছু হিসাব করলে দেখা যায় যে করের হার ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ আর থাকে না, তা ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ হয়ে যায়। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং বৈদেশিক বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বাজেটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। ওই আলোচনায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও করের আওতা বাড়ানোসহ বেশকিছু বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। ওই আলোচনাতেই সরকারের ব্যয় বাড়লেও কোভিডে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গা বিবেচনায় সঞ্চপত্রে মুনাফা কিছুটা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। পাশাপাশি বাজেটে করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সঞ্চয় অধিদফতর সূত্র জানায়, বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ মুনাফার হার রয়েছে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে স্তরভেদে ১২ থেকে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ হতে পারে এই মুনাফার হার।
জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগ করা অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর মুনাফা দেয় সরকার। মেয়াদপূর্তির পর বিনিয়োগ করা অর্থও ফেরত দেওয়া হয়। বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়েছিল।
এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি। তাছাড়া ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর সরকার জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সীমাও কমিয়ে দেয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী একক নামে ৫০ লাখ এবং যৌথ নামে ১ কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়লেও এক্ষেত্রে বিনিয়োগ সীমা অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর