বিজ্ঞাপন

বিসিবি’র অতি আদরেই বাঁদর সাকিব!

June 13, 2021 | 3:08 pm

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

১৯৯৯ সালের কথা। শ্রীলংকান ক্রিকেট দল অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিল স্বাগতিকদের বিপক্ষে কার্লটন অ্যান্ড ইউনাইটেড সিরিজ খেলতে। তো সেই সিরিজের এক ম্যাচে অজি আম্পায়ার ম্যাকলিন ও রস এমারসন অনৈতিকভাবে মুত্তিয়া মুরোলিধরণের ডেলিভারি ‘নো’ ডাকেন। আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা মাঠ ছেড়েছিলেন। কিন্তু আম্পায়কে গালাগালি করেননি, স্ট্যাম্পে লাথি দেননি বা তুলে আছাড় মারেননি।

বিজ্ঞাপন

এর সাত বছর পরে অর্থাৎ ২০০৬ সালে পাকিস্তান ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিল সিরিজ খেলতে। কেনিংটন ওভালে চতুর্থ টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলায় আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার ও বিলি ডক্টরভ অভিযোগ আনেন, পাকিস্তা বোলাররা বল টেম্পারিং করেছেন। আম্পারয়ারদের এমন ভিত্তিহীন অভিযোগের প্রতিবাদে পাক অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হক চা পানের বিরতিরে পরে দল নিয়ে মাঠেই নামেননি। কিন্তু সাকিবের মত কোন অভব্য আচরণ দেখাননি।

ঘটনাগুলো সম্ভবত সাকিব জানেন না। আবার জানলেও হয়ত মানেন না। যদি মানতেন তাহলে সেদিন ম্যাচ চলাকালীন আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে বেয়াদবের মত লাথি দিয়ে স্ট্যাম্প ভাঙতেন না, আম্পায়রকে বাজেভাবে গালাগালি করতেন না, স্ট্যাম্প তুলে আছাড় দিতেন না কিংবা গ্রাউন্ডসকর্মীদেরও গালাগালি করতেন না। মাঠের ক্রিকেটে এই ঘটনা ঘটিয়ে সাকিব নিজে যেমন বিতর্কিত হয়েছেন তেমনি ক্রিকেটের স্পিরিটকে নষ্ট করেছেন। পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তিকেও করেছেন প্রশ্নবিদ্ধ।

বিজ্ঞাপন

এদেশের ক্লাব ক্রিকেটে পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিং নতুন কোন ঘটনা নয়। ক্রিকেট রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারের অভিপ্রায়ে প্রায় এক দশক ধরে এই ঘটনা অহরহ ঘটছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, কোন সুরাহার পথ আজ অব্দি কেউই দেখায়নি। দেখায়নি কারণ, এতে করে একটি গোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্থ হবে যা তাদের বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে পরিচালনা পর্ষদে প্রবেশের পথ রুদ্ধ করে দিবে।

মজার ব্যাপার হল, দেশ সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান তা ভাল করেই জানেন। আর জানেন বলেই হয়ত ওভাবে প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু সেটা না করে তিনি যদি অর্জুনা রানাতুঙ্গা কিংবা ইনজামামের পথ অনুসরণ করতেন তাহলে এক ঢিলে চার পাখি মারা হত। প্রথমত, তার ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হত না। দ্বিতীয়ত, ক্রিকেটের স্পিরিট নষ্ট হত না। তৃতীয়ত, ক্রিকেট ভক্তদের আকুন্ঠ সমর্থন পেতেন। আর চতুর্থত, দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের ভাবমুর্তিও বিশ্বদরবারে অটুট থাকত।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু সাকিব বলে কথা! তার মাথায় কি আর ভাল কিছু খেলে! মাঠে ও মাঠের বাইরে যত প্রকার বিতর্কিত ঘটনা আছে তিনি তা করতে দারুণ পারঙ্গম এবং করেনও বেশ স্বাচ্ছন্দে! কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, তাকে নিবৃত্ত করার মত কেউই নেই! এমনকি খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও নয়। তাদের ভাবখানা এমন, এ আর এমন কি?

গত শুক্রবারের ওই ঘটনায় বিসিবি তাকে মাত্র ৩ ম্যাচ নিষিদ্ধ ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা করল। যা তার গুরু পাপের বিপরীতে মোটেও গুরু শাস্তি নয়। অনেকটা লঘুদন্ডেই পার পেয়ে গেলেন দেশসেরা এই অলরাউন্ডার। কিন্তু এটা হওয়া উচিত ছিল না। লাল সবুজের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি তাকে আরও বড় দন্ডে দন্ডিত করত তবেই এর সুষ্ঠ বিচার হত। এতে করে তিনি দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস দেখাতেন না। এবং নতুন প্রজন্মও এ থেকে শিক্ষা নিত। কিন্তু সাকিব বলেই হয়ত এড়িয়ে গেল টাইগার ক্রিকেট প্রশাসন! সব মাফ!

তাহলে কী আমরা ধরে নেব, সাকিবকে তারা ভয় পান? নাকি বাংলাদেশ দলে তার বিকল্প নেই বলেই তাকে পরম আদরে আগলে রেখেছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তুমুলক শাস্তির ব্যবস্থা করতেও তাদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে! হয়ত তাই। তা না হলে একজন ক্রিকেটার দিনের পর দিন বিতর্কিত এক একটি ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছেন তবুও কেন নির্বাক,অসাড় বিসিবি?

বিজ্ঞাপন

সাকিবও এই সুযোগে ধারাবাহিক এক একটি বিতর্কিত ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছেন। এবং সেটা কোন পর্যায়ে চলে গেছে সম্ভবত বিসিবি তা দেখছে। এসকল ঘটনাপুঞ্জি থেকে সাকিব সম্পর্কে বার্তাই স্পষ্ট হয়, অভিভাবক সংস্থা বিসিবিকে সাকিব আর পরোয়া করেন না। বরং বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতেই তিনি বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।

সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএইচএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন