বিজ্ঞাপন

২ গ্রামেই ১৩৫ ‘বিকাশ প্রতারক’

June 14, 2021 | 7:37 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিকাশে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম ও মাগুরা থেকে দুজনকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে ডিবি ১৩৫ জন ‘বিকাশ প্রতারকের’ একটি তালিকা উদ্ধার করেছে, যাদের বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার দুই ইউনিয়নের দুই গ্রামে। অর্থাৎ শুধু মাগুরা জেলার এক উপজেলায় ১৩৫ প্রতারক অবস্থান করে বিকাশের মাধ্যমে দেশজুড়ে প্রতারণার জাল বিস্তার করেছে।

বিজ্ঞাপন

নগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাগুরার বাইরে অবস্থান করা প্রতারক চক্রের সদস্যরা গ্রাহক সেজে যান বিকাশ এজেন্টের দোকানে। সেখান থেকে কৌশলে ভিডিও করে নেন এজেন্টের নিবন্ধন বইয়ে লেখা নম্বরগুলো। সেই নম্বর পাঠিয়ে দেওয়া হয় মাগুরায় অবস্থান করা চক্রের সদস্যদের কাছে। তারা বিকাশের ‘কাস্টমার কেয়ারের কর্মকর্তা’ সেজে ফোন করে কৌশলে জেনে নেয় পিন নম্বর। এরপর হাতিয়ে নেয় গ্রাহকের টাকা।

গ্রেফতার দুজন হলো- মিঠুন কুমার বালা (২৬) ও হামিদুল মোল্লা (২২)। এদের মধ্যে মিঠুনের বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার দ্বারিয়াপুর ইউনিয়নের গোয়ালদাহ গ্রামে। আর হামিদুলের বাড়ি একই উপজেলার নাকোল ইউনিয়নের রায়নগর গ্রামে।

গত ১২ জুন মিঠুনকে মাগুরা থেকে গ্রেফতার করা হয়। রোববার তাকে চট্টগ্রামে আনার পর রাতে নগরীর ইপিজেড থানার নিউমুরিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে হামিদুলকে গ্রেফতার করা হয়। দু’জনকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে মূলত মাগুরার বিকাশ প্রতারক চক্রের তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ।

বিজ্ঞাপন

এডিসি রউফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিকাশে প্রতারণার শিকার হওয়ার বেশকয়েকটি অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে আমরা মাগুরায় অবস্থানকারী কয়েকজনের সম্পৃক্ততা পাই। আমাদের একটি টিম তিনদিন মাগুরায় অবস্থান করে মিঠুনকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করে। তখন মিঠুন তাদের চক্রের সদস্য হামিদুলের চট্টগ্রামে অবস্থানের তথ্য দেন। দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা মাগুরায় অবস্থানকারী ৭-৮টি চক্রের ১৩৫ জনের নাম পেয়েছি। এদের মধ্যে নারীও আছেন। এরা সবাই প্রতারণায় যুক্ত।’

মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার দ্বারিয়াপুর ইউনিয়নের গোয়ালদাহ এবং নাকোল ইউনিয়নের রায়নগর গ্রামেই ১৩৫ ‘বিকাশ প্রতারকের’ বাড়ি বলে জানিয়েছেন এডিসি রউফ।

‘প্রতারক চক্রের সদস্যরা অধিকাংশই মাগুরাতেই অবস্থান করেন। দু’য়েকজন প্রতিনিধি অস্থায়ীভাবে থাকেন বড় শহরের শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। যেমন চট্টগ্রামে থাকেন ইপিজেড-বন্দর-নিউমুরিং-সল্টগোলা এসব এলাকায়। মাসের প্রথম সপ্তাহ টার্গেট করে প্রতারক, কারণ সেই সপ্তাহে অধিকাংশ শ্রমিক বেতন পেয়ে বিকাশের মাধ্যমে বাড়িতে টাকা পাঠান। প্রতারক গ্রাহক সেজে বিকাশ এজেন্টের দোকানে ঢোকেন। আগে থেকে মোবাইলে ভিডিও চালু রাখেন। এজেন্টের সাথে কথা বলার সময় সে টেবিলে রাখা নম্বর নিবন্ধন খাতাটি ভিডিও করে নেন। দোকান থেকে বের হয়েই সেটি মাগুরায় তাদের চক্রের অন্য সদস্যদের পাঠিয়ে দেন।’

বিজ্ঞাপন

এরপর মাগুরায় অবস্থানকারী প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিকাশের কাস্টমার কেয়ারের প্রতিনিধি সেজে সংশ্লিষ্ট নম্বরে ফোন করেন উল্লেখ করে গোয়েন্দা কর্মকর্তা রউফ বলেন, ‘নম্বরের সঙ্গে যখন বিকাশে পাঠানো টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেন, তখন গ্রাহকের বিশ্বাস জন্মায়। এভাবে নানা কথার ফাঁকে জেনে নেন পিন নম্বর। তারপর টাকা স্থানান্তর করে নেন নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে। তবে নিজ জেলা মাগুরা থেকে তারা টাকা উত্তোলন করে না। চক্রের সদস্যদের অন্য জেলায় পাঠিয়ে টাকা উত্তোলন করে।’

ডিবি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রেফতার হামিদুলের কাছে বিকাশের এজেন্টের নিবন্ধন বইয়ের ৩৬টি ভিডিও পাওয়া গেছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, ভিডিও হোয়াটস অ্যাপে বা ম্যাসেঞ্জারে পাঠানোর পর সে নিজের মোবাইল থেকে মুছে দেয়। প্রতিটি ভিডিও পাঠানোর বিনিময়ে সে পায় ১০০ টাকা। কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী ও ঢাকায় অবস্থান করেও হামিদুল একই ধরনের প্রতারণা করেছে বলে জানিয়েছে।

হামিদুল ও মিঠুনের বিরুদ্ধে নগরীর ইপিজেড থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। গ্রেফতারের পর হামিদুল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে প্রতারণার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে। মিঠুন বালাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন