বিজ্ঞাপন

আরও ১৭ খালের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন

June 14, 2021 | 10:29 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বর্ষা মানেই ঢাকার রাস্তা আর অলিগলিতে থৈ থৈ পানি। যানজট ও জলজটে দুর্ভোগের পাশাপাশি বাড়ে দুর্ঘটনাও। এই দুর্ভোগের পেছনে খাল দখল ও দূষণকেই দায়ী করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তাদের বক্তব্য, ড্রেনের পাশাপাশি খালগুলো পরিষ্কার রাখা গেলে জলাবদ্ধতা কমে আসবে। এদিকে রাজধানীর এই দুর্ভোগ কমাতে আরও ১৭টি খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তবে এক্ষেত্রে সংস্থা দুটিকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোনোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, বর্তমানে রাজধানীতে ৪৩টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে বেশকিছু খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন। কিছু নালা নদর্মায় পরিণত হয়ে রয়েছে। আর যেগুলোর পানি প্রবাহ এখনও কোনরকমে টিকে আছে তাও ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ড্রেনের পাশাপাশি খাল দীর্ঘদিন পরিষ্কার না রাখায় দিনের পর দিন জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ বাড়ছেই।

এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৃষ্টির যে পানি রাস্তায় জমে তা নদী পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়াই আমাদের ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ। আর খালগুলো এই সিস্টেমের অন্যতম অনুষঙ্গ। প্রথমে নরমাল ড্রেন, স্ট্রং ড্রেন, বক্স কালভার্ট, জলাধার তারপরে নদী বা পাম্প স্টেশন- এই হলো টোটাল প্রসেস। এই প্রসেসের বিরাট একটা অংশ সিটি করপোরেশনের হাতে ছিল। বাকি অংশ ছিল ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে। পুরো নেটওয়ার্কে সমন্বিত না থাকায় সমস্যা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পানি নদী পর্যন্ত যাওয়ার পথে যদি ড্রেন ব্লক হয়ে যায় তাহলে ভেতরে যতই রক্ত সঞ্চালন হোক বের হতে পারবে না। যে ঘটনা ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে হয়েছে। ঢাকা ওয়াসা বর্জ্য ফেলে খাল নদী দূষিত করছে। অন্যদিকে খাল পরিষ্কার করা হচ্ছে না। মানুষ অপরিষ্কার জায়গা দেখলে সেখানে ময়লা ফেলবেই। যে কারণে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ কখনোই কমানো যায়নি।’

বিজ্ঞাপন

 

এদিকে রাজধানীর জলাবদ্ধতা কমাতে গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসার আওতায় থাকা ২৬টি খালের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। যদিও দাফতরিকভাবে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব এখনও ঢাকা ওয়াসার। প্রশাসনিক এই জটিলতার মাঝেই বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে কাজ করছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। যার সুফল পুরোপুরি পেতে শুরু করেনি নগরবাসী।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘খালগুলো এককভাবে সিটি করপোরেশনের হাতে আসাতে আমরা খুশি হয়েছি। এখন এক হাতে আসাতে সমন্বয়ের গল্প আর বলা যাবে না। সামগ্রিকতা নির্ভর যে সমন্বিত পরিকল্পনা এটারও প্রয়োজন হবে না। দ্বিতীয়ত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কঠিন এবং তরল। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে খাল উদ্ধার করে ধরে রাখার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কারণ খাল যদি অতিগন্ধময় কালো ময়লা পানির আশ্রয় হয় আর এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যদি সঠিক না থাকে তাহলে মানুষ বর্জ্য খালেই ফেলবে। এখন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও যেহেতু সিটি করপোরেশেনর হাতে সেহেতু সিটি করপোরেশন ওই জায়গাতেই সমন্বিত করে খালটাকে সুরক্ষা করতে পারবে।’

গণপূর্ত, রাজউক, পাউবো ও জেলা প্রশাসকের কাছে বাকি যে ১৭টি খাল রয়েছে তা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদকে আহ্বায়ক করে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ, সংস্থা ও দফতরের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি রিপোর্ট দিলেই হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ করবে।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে ওয়াসার আওতায় থাকা খালগুলো সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করেছি। এ নিয়ে দুই সিটি করপোরেশন কাজ করছে। এখন গণপূর্ত, জেলা প্রশাসক এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় যে ১৭টি খাল রয়েছে তা কোন প্রক্রিয়ায় সিটি করপোরেশন দুটির কাছে হস্তান্তর করা যায় তা ভাবা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

যে ১৭টি খাল সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হবে, সেগুলো হলো- শ্যামপুর খাল, দিয়াবাড়ী খাল, কাঁঠাল বাগান খাল (বক্স কালভার্ট), ধোলাই খাল (বক্স কালভার্ট), শাহজাহানপুর খাল, নন্দীপাড়া খাল, বোয়ালিয়া খাল, গোবিন্দপুর খাল, কামরাঙ্গির চর খাল, নড়াই খাল, গুলশান-বনানী খাল, ধানমন্ডি খাল (বক্স কালভার্ট), পরীবাগ খাল (কালভার্ট), রাজারবাগ খাল (বক্স কালভার্ট), রায়েরবাজার খাল (বক্স কালভার্ট), ডুমনি খাল এবং হাউজিং খাল (বেনারস পল্লী)।

হেলালুদ্দীন আহমেদ সারাবাংলাকে জানান, ওয়াসা এবং সিটি করোপোরেশন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় থাকায় খালগুলো সহজেই হস্তান্তর করা গেছে। এখন বাকি এই ১৭টি খাল গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় থাকায় সমন্বয় করে হস্তান্তর করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে বলে আশা করছি।’

এদিকে যে ২৬টি খাল দুই সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছে সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছে সংস্থা দুটি। এরই মধ্যে খাল পরিষ্কারে তারা শক্তভাবে মাঠে নেমেছে। মৃতপ্রায় এবং নাব্যতা হারাতে বসা খাল উদ্ধার করতে গিয়ে গত পাঁচ মাসে কয়েক হাজার টন বর্জ্য উদ্ধার করা হয়েছে। উচ্ছেদ করা হয়েছে খালের দুই পাড় দখল করে থাকা হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনা। এসব কাজ করতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে দুই সিটি করপোরেশনকেই। যদিও নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু খাল পরিষ্কার করলেই জলাবদ্ধতা কমবে না। এজন্য সামগ্রিক ও সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে।

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘৫৪ মন্ত্রণালয়ের যে ১১ সংস্থা বা দফতর জনগণের যে পরিষেবা দিচ্ছে তার মধ্যে একটা হচ্ছে সিটি করপোরেশন। যেখানে সরাসরি জনগনের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। ফলে জনগণকে সম্পৃক্ত করা তাদের জন্য সহজ। এই কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ক্যাম্পেইন করা, খালের পাড়ে ছোট ছোট কমিটি করে তাদের অভিভাবকত্ব দিতে হবে। এসব কাজ সিটি করপোরেশনের পক্ষে যত সহজ অন্য কারও পক্ষে তত সহজ না।’

তিনি বলেন, ‘২৬টি খাল সিটি করপোরেশনের হাতে যাওয়ার পর আমাদের নিয়ে মিটিং করে। আমরা বলেছিলাম, ড্রেনগুলো পরিষ্কার করুন, খালগুলো পরিষ্কার করুন। অন্তত ম্যাক্সিমাম লেভেলে নেন। তাহলে পানিটা রাস্তায় না গিয়ে খালে গিয়ে পড়বে। আমার মনে হয় সে চেষ্টা শুরু হয়েছে। যে কারণে এবার জমে থাকা পানি নামতে শুরু করেছে। তবে পুরোপুরি কাজ শেষ হলে পানি দ্রুত নামবে।’

ইকবাল হাবিব বলেন, ‘সিটি করপোরেশন দুটি যদি তাড়াহুড়ো না করে সুর্নিদিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করে, তাহলে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে একটা সুফল পাওয়া যাবে। বড়ধরনের বৃষ্টিতে পানি জমবে এটা স্বাভাবিক। এরকমটা বিশ্বের উন্নত দেশেও হয়। কিন্তু মাঝারি বৃষ্টির পানি যেন দ্রুত নেমে যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন