বিজ্ঞাপন

তরুণীদের প্রলুব্ধ করে ক্লাবে পাঠানোই ছিল নাসিরের কাজ: ডিবি

June 15, 2021 | 11:35 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জনপ্রিয় ঢালিউড তারকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলায় প্রধান আসামি নাসির ইউ মাহমুদ তথা নাসির উদ্দিন মাহমুদকে গ্রেফতারের পর তার সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আবাসন ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত হলেও বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজে নাসিরের যোগসূত্র পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তারা বলছেন, বিশেষ করে তরুণীদের প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন ক্লাবে পাঠানো এবং সেখানে তাদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করার কাজটি নাসির দীর্ঘ দিন ধরে করে আসছেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৪ জুন) দুপুরে উত্তরায় নাসিরের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, নাসিরের সম্পর্কে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণের কাজ চলছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। তিনি ও তার সহযোগীসহ সম্ভাব্য সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পাওয়া সব তথ্য বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সোমবার উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কের ওই বাসা থেকে নাসির ছাড়াও গ্রেফতার করা হয় তুহিন সিদ্দিকী অমিকে। এই অমির বিরুদ্ধেই পরীমনিকে কৌশলে বোট ক্লাবে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ওই বাসা থেকে আরও গ্রেফতার করা হয় লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯) ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধা (২৪) নামে তিন তরণীকে। অভিযানে বিপুল পরিমাণে ইয়াবা ও দেশি-বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, উত্তরার ওই বাসাটি অমির। সেখানে নাসিরের সঙ্গে যে তিন তরুণীকে পাওয়া গেছে, তাদের সবাইকে নাসির সঙ্গী হিসেবেই রাখতেন। রোববার (১৩ জুন) রাতে পরীমনির ফেসবুক স্ট্যাটাস ও সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে নাসির তাদের নিয়ে ওই বাসায় পালিয়ে ছিলেন।

পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আবাসন ব্যবসার পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নাসিরের। উঠতি বয়সী তরুণীদের প্রলুব্ধ করে এসব ক্লাবে পাঠাতেন তিনি। মদও সরবরাহ করতেন ক্লাবগুলোতে। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন দফতরে করতেন ঠিকাদারির কাজও। সেক্ষেত্রেও কাজ বাগিয়ে নিতে কৌশলে নারীদের ব্যবহার করতেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

নাসিরের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, উঠতি বয়সী মেয়েদের প্রলুব্ধ করা ছিল নাসিরের অন্যতম কাজ। এসব তরুণীদের তিনি কৌশলে বিভিন্ন বার ও ক্লাবে পাঠিয়ে দিতেন। সেখানে তাদের অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করা হতো। নারী ও মদ সরবরাহ করার কাজে তিনি আলোচিত ছিলেন। তার এই পরিচয় বার ও ক্লাবের সঙ্গে যুক্তদের সবাই জানেন।

মঙ্গলবার আদালতে নেওয়া হয় নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তার সহযোগীদের

এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় এর আগেও নাসিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সে তথ্য জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, নাসিরের বিরুদ্ধে আগেও মাদক ও নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন অভিযোগে তাকে উত্তরা ক্লাব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখনো কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে আমরা সেগুলোরও তদন্ত করব।

বিজ্ঞাপন

গুলশানের ক্লাবগুলোর বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এখন থেকে রাতে ক্লাব পাড়া বা এর আশপাশে কম বয়সী মেয়েদের দেখলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এই নাসিরদের মতো যারা একের পর এক মেয়েকে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার বানিয়ে চলছে, এগুলো আর চলতে দেওয়া হবে না। সবাইকে আইনের আওতায় আসতে হবে।

পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলায় এরই মধ্যে নাসির ও অমিসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনেও একটি মামলা করা হয়েছে। এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নাসির ও অমির সাত দিন এবং বাকি তিন নারীর তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে বলে জানালেন হারুন অর রশিদ।

তিনি বলেন, পরীমনির মামলায় গ্রেফতার এই কয়েকজনের বাইরেও যদি কেউ জড়িত থেকে থাকে, তাহলে তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা তদন্ত শুরু করেছি, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তে যারই জড়িত থাকার প্রমাণ মিলবে, তাকেই ধরা হবে।

আরও পড়ুন-

এর আগে, গত ৮ জুন রাতে আশুলিয়া এলাকার ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার শিকার হন পরীমনি। সেদিন রাতে পরীমনি তার বনানীর বাসা থেকে বোন বনি, কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ও তার বন্ধু অমির সঙ্গে গাড়ি করে উত্তরার দিকে রওনা দেন। পরীমনির অভিযোগ, অমি কৌশলে তাদের বোট ক্লাবে নিয়ে যান। সেখানে অমির সহযোগিতায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন এবং তাকে শারীরিকভাবেও জখম করেন।

এ ঘটনার চার দিন পর রোববার (১৩ জুন) রাতে পরীমনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দিয়ে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার শিকার হওয়ার কথা জানান। এ ঘটনায় ন্যায় বিচার প্রার্থনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। পরে রাতেই তিনি বনানীর নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, ঘটনার পর তিনি বনানী থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলেও অভিযোগ নেওয়া হয়নি। এ ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ায় তিনি প্রাণভয়ে ভীত বলেও জানান সাংবাদিকদের।

পরে রোববার দিবাগত রাতেই রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান সরদারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পরীমনির বাসায় যায়। পরীমনির অভিযোগের ঘটনাস্থল সাভার থানার অধীন হওয়ায় তার কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ নিয়ে সেই অভিযোগ সাভার থানার কাছে পৌঁছে দেয় রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাভার থানায় মামলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ের হয়। মামলায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তার বন্ধু তুহিন সিদ্দিকী অমির নাম উল্লেখ করে আরও চার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এরপর দুপুরেই অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

সারাবাংলা/ইউজে/এসএসএ/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন