বিজ্ঞাপন

আত্মঘাতী গোলে ফেভারিট ফ্রান্সের কাছে জার্মানির হার

June 16, 2021 | 2:58 am

স্পোর্টস ডেস্ক

টুর্নামেন্টের দুই হট ফেভারিট মুখোমুখি। জমজমাট লড়াইয়ের প্রত্যাশাই ছিল তাই। সেই প্রত্যাশার পুরোটা মিটল। ছেড়ে কথা বললো না কেউ কাউকে। তবে ম্যাচের ২০ মিনিটে যে আত্মঘাতী গোলটি খেয়ে বসেছিল জার্মানি, সেই গোলটিই ব্যবধান গড়ে দিলো। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২০-এর প্রথম ম্যাচেই জয় তুলে নিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।

বিজ্ঞাপন

মিউনিখের অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে আতিথ্য দিয়ে ১-০ গোল ব্যবধানে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করতে হলো জার্মানিকে। তবে ৯০ মিনিটের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ‘ইনজুরি টাইমে’র ৮ মিনিট মিলিয়ে ৯৮ মিনিটের মাঠের খেলা বলছিল, এই ম্যাচ যে কারও হতে পারত। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ মিনিটের ফুটবল রোমাঞ্চ থেকে চোখ সরাতে পারেনি কেউই। একবার ফ্রান্সের দিকে পাল্লা ভারি তো একবার জার্মানির দখলে গোটা মাঠ।

অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনায় লড়াইটা ছিল মূলত পগবা-এমবাপ্পে-গ্রিজম্যান-বেনজেমাদের শৈল্পিকতার সঙ্গে প্রেসিং ফুটবলের মিশেলের সঙ্গে ক্রুস-মুলার-হামেলসদের গতিশীল ফুটবলের। সেই লড়াইয়ে শুরুর দিকে প্রভাব বিস্তার করেছে ফ্রান্স, সেই সঙ্গে গোটা ম্যাচেই সৃজনশীল ফুটবলের ঝলক বারবারই ফিরে এসেছে পগবা-এমবাপ্পেদের পায়ে। দু’বার তো ‘ম্যাজিক্যাল মোমেন্ট’ ধরাও দিয়েছিল। ভিএআরের কল্যাণে দু’বারই সামান্য ব্যবধানে অফসাইড ধরা পড়ায় হাসি ফুটিয়েও ধরে রাখতে পারেননি এমবাপ্পে, বেনজেমারা।

বিজ্ঞাপন

তবে আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়া জার্মানি ম্যাচে ফিরতে মরিয়া ছিল। একদম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আশা ছাড়েনি তারা। শুরুর আধাঘণ্টায় ফ্রান্সের আক্রমণভাগের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড অবস্থা থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে, চেপে ধরেছে ফ্রান্সকে। জার্মানির একের পর এক আক্রমণে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হয়েছে ফ্রান্সের রক্ষণভাগকে। শেষ পর্যন্ত তাতেও সফল ভারান-কিম্পেম্বে জুটি। ফ্রান্সের জাল তাই সুরক্ষিত। ম্যাচের বড় একটি অংশে আধিপত্য ছড়িয়েও শূন্য হাতে ফিরতে হলো জার্মানিকে।

মিউনিখে পগবা, এমবাপে, বেনজেমা আর গ্রিজম্যানের কল্যাণে ম্যাচের শুরুতে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আক্রমণ সাজাতে শুরু করে ফ্রান্স। গতির সঙ্গে সৃজনশীলতা মিশিয়ে জার্মানদের চেপে ধরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচের ১৭তম মিনিটে বল নিয়ে কাট ইন করে ডি-বক্সের ভেতর ঢুকে পড়ে ডান পায়ের দারুণ শটে বাঁকানো শটে বল জাল বরাবরই পাঠিয়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপে। তবে সেখানে যে ছিলেন ম্যানুয়েল নয়্যার, আঙুলের সামান্য স্পর্শে বল বিপদমুক্ত করেন কর্নারের বিনিময়য়ে।

বিজ্ঞাপন

এর মিনিট তিনেক পরে হতাশায় পুড়ে জার্মানি। মধ্যমাঠ থেকে বাঁ দিকে লুকাস হার্নান্দেজকে একা দেখতে পেয়ে তাকে বল বাড়িয়ে দেন পল পগবা। মধ্যমাঠে বল পেয়ে ক্ষীপ্রতার সঙ্গে ডি-বক্সের লাইনে ঢুকে ক্রস করেন গোলমুখে। সেখানে ছিলেন কিলিয়ান এমবাপে কিন্তু তাঁর ঠিক সামনেই ম্যাট হামেলস। বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে নিজেই নিজেদের জালে জড়িয়ে ফেলেন হামেলস। আর তাতেই কপাল পুড়ল জার্মানদের।

অবশ্য পিছিয়ে পড়ার মিনিট দুই পরেই সমতায় ফিরতে পারতো স্বাগতিকরা। গোসেনের উঁচু করে বাড়ানো ক্রস ফ্রান্সের ডি-বক্সের ছয় গজের ভেতরে পান থমাস মুলার। সেখান থেকে কেবল জালে শট নিলেই সমতায় ফিরতে পারে জার্মানি কিন্তু তিনি শট নিলেও তা ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট।

এরপর প্রথমার্ধে দুই দলই বল দখলে রাখার চেষ্টা করে আক্রমণ সাজাতে থাকে। তবে দুই দলই রক্ষণকে দৃঢ় রাখে। পিছিয়ে পড়ে জার্মানি আক্রমণের ধার বাড়ায় ফ্রান্সের ডি-বক্সের সামনে বল নিয়ে গেলেও রাফায়েল ভারান-কিম্পেম্বেদের নিয়ে গড়া রক্ষণে ফাটল ধরাতে পারছিল না। ডি-বক্সের সামনে থেকে ছয় গজের ভেতরেই বল নিয়ে ঢুকতে পারছিল না সার্জ গ্ন্যাব্রি-কাই হাভার্টজ আর থমাস মুলাররা। আর তাতেই প্রথমার্ধে ওই ১-০ গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যেতে হয় জার্মানিকে।

বিজ্ঞাপন

বিরতি থেকে ফিরে এ এক অন্য জার্মানির দেখা মেলে। শুরু থেকেই বল দখলে রেখে ফ্রান্সকে নিজেদের জাত চেনাতে শুরু করে টনি ক্রুস-কিমিচরা। তবে জার্মানদের আক্রমণের মধ্যেও প্রতি আক্রমণে ঠিক ভয় ধরাচ্ছিল ফ্রান্স। ম্যাচের ৫১তম মিনিটেই ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারত ফ্রান্সের। বাঁ প্রান্ত থেকে কিলিয়ান এমবাপের পাস ডি-বক্সের ভেতর পেয়ে জোরালো শট করেন অ্যাড্রিয়েন র‍্যাবিওট। তবে তাঁর শট গোলপোস্টে লেগে প্রতিহত হলে হতাশ হয় ফ্রান্স। এর মিনিট দুই পরে সুযোগ আসে জার্মানদের সামনেও। গোসেন্সের আরও একটি দুর্দান্ত ক্রস খুঁজে নেয় সার্জ গ্ন্যাব্রিকে। ডি-বক্সে বল পেয়ে শট নিলেও তা চলে যায় গোলপোস্টের ওপর দিয়ে। আর তাতেই দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সমতায় ফেরা হয়নি সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।

গোটা ম্যাচের ৬২ শতাংশ বল দখলে রেখে ১০টি শট ফ্রান্সের গোল বরাবর নেয় জার্মানি। এর মধ্যে গোলের সুযোগ তৈরি করে ৭টি। তবে কিছুতেই ফ্রান্সের রক্ষণে ফাটল ধরাতে পারেনি হট ফেভারিট জার্মানরা। উলটো ম্যাচের শেষ দিকে পগবার থ্রু বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বেনজেমা এবং এমবাপে বল দেওয়া নেওয়া করে ডি-বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েন। এরপর ডান প্রান্ত থেকে আসা এমবাপের দারুণ পাস থেকে গোল করেন করিম বেনজেমা। তবে জার্মানদের সৌভাগ্যই বলতে হবে। অফসাইডের কারণে গোল বাতিল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল না হওয়ায় ম্যাট হামেলসের একমাত্র আত্মঘাতী গোলে ফ্রান্স জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।

এই দিকে গ্রুপ এফ’র অপর ম্যাচে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোড় জোড়া গোলে পর্তুগাল হাঙ্গেরির বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে জিতে টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে। ১-০ গোলে জার্মানিকে হারিয়ে দুইয়ে ফ্রান্স, তিনে জার্মানি আর চারে আছে হাঙ্গেরি।

ইউরোতে বুধবার (১৬ জুন) আছে তিনটি ম্যাচ।

গ্রুপ বি: ফিনল্যান্ড বনাম রাশিয়া (সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম, সেন্ট পিটার্সবার্গ, রাশিয়া; বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা)

গ্রুপ এ: তুরস্ক বনাম ওয়েলস, (বাকু অলিম্পিক স্টেডিয়াম, আজারাবাইজান; বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা)।

গ্রুপ এ: ইতালি বনাম সুইজারল্যান্ড, (এস্তাদিও অলিম্পিকো, রোম, ইতালি; বাংলাদেশ সময় রাত ১টা)।

সারাবাংলা/এসএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন