বিজ্ঞাপন

শেষ হচ্ছে হাতিরঝিল প্রকল্পের মেয়াদ, দায়িত্ব পাবে কে?

June 16, 2021 | 11:20 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন বিনোদনকেন্দ্র হাতিরঝিলের ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ এতদিন ধরে করে আসছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তবে যে প্রকল্পের আওতায় তারা হাতিরঝিলে দায়িত্ব পালন করে আসছিল, চলতি জুন মাসেই শেষ হচ্ছে সেই প্রকল্পের মেয়াদ। ফলে এ মাসের শেষ নাগাদ হাতিরঝিলের দায়িত্ব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) বুঝিয়ে দিতে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। প্রশ্ন উঠেছে, হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তাহলে পালন করবে কে?

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, এরই মধ্যে হাতিরঝিলের দায়িত্ব পেতে আগ্রহ দেখিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তবে রাজউক বলছে— অন্য কোনো সংস্থার প্রয়োজন হবে না, এই দায়িত্ব তারাই পালন করবে। অন্যদিকে এতদিন হাতিরঝিলের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীও বলছে, জনগণ চাইলে তারা আবার নতুন করে দায়িত্ব নিতে পারে।

এ ক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সক্ষমতা রয়েছে— এমন প্রতিষ্ঠানকেই এই দায়িত্ব দেওয়া উচিত। সরকারও সক্ষমতাসম্পন্ন কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছেই হাতিরঝিলের দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চায়। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।

বিজ্ঞাপন

জনসাধারণের সহজ চলাচল, ভ্রমণ ও বিনোদনের জন্য তেঁজগাও, মগবাজার, রামপুরা সংলগ্ন ৩০২ একর জায়গা ঘিরে হাতিরঝিল এলাকাটিকে একটি সমন্বিত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বেছে নেয় সরকার। গোটা এলাকায় দৃষ্টিনন্দন সব সেতু ও স্থাপনা গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রশস্ত সড়ক আর জায়গায় জায়গায় ফাঁকা মাঠের মতো স্থান রেখে সাজানো হয় এলাকাটি। ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি হাতিরঝিল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটি চালুর ফলে ঢাকার তেঁজগাও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও মগবাজার এলাকার মানুষের চলাচল অনেক সহজ হয়। বেশকিছু রুটে যানজট কমে যায়। শুধু তাই নয়, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা নিসরণেও ভূমিকা রেখেছে প্রকল্পটি।

হাতিরঝিল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও তদারকি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন (এসডব্লিউও)। গত আট বছর ধরেই তারা রয়েছে এই প্রকল্পের দায়িত্বে। আর প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি জুনে। নিয়ম অনুযায়ী এখন রাজউককে হাতিরঝিল হস্তান্তর করতে সব ধরনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাতিরঝিল প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

হাতিরঝিল লেকের দূষিত পানি পরিশোধন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী শাকিল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, এ মাসেই (জুন) হাতিরঝিল প্রকল্প শেষ হচ্ছে। আমরা নিয়ম অনুযায়ী রাজউককে বুঝিয়ে দেবো। পরের রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব রাজউকের হাতেই থাকবে। তবে জনগণ যদি চায় এ দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে থাকুক, তাহলে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী আবারও দায়িত্ব নেবে।

বিজ্ঞাপন

লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাকিল আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় অনুমতি ছাড়া এই দায়িত্বে সেনাবাহিনী থাকতে পারবে না। সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিতে হলেও কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। রাজউক অন্য কাউকে দায়িত্ব দিতে চাইলেও একই কথা প্রযোজ্য। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও নিয়ম অনুযায়ী ৩০ জুনের পর আমরা আরও তিন মাস থাকতে পারব। ৩০ জুনের আগে এ বিষয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সে অনুযায়ী সেনাবাহিনী ৩০ জুনের মধ্যে হাতিরঝিল হস্তান্তর করবে বা আরও তিন মাস দায়িত্ব পালন করবে।

জানা গেছে, দৃষ্টিনন্দন এই হাতিরঝিলের দায়িত্ব রাজউককে বুঝিয়ে দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এই খবরে ঝিলটির দায়িত্ব নিতে রাজউকের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তবে সে প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে নিজেরাই রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে রাজউক।

এ প্রসঙ্গে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (প্রজেক্ট অ্যান্ড ডিজাইন) এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস সারাবাংলাকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী হাতিরঝিল রাজউকের হাতেই আসবে। ভবিষ্যতে রাজউক এর দেখভাল করবে।

বিজ্ঞাপন

সেনাবাহিনী কিংবা সিটি করপোরেশনের হাতে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যাচ্ছে কি না— এ প্রশ্নের জবাবে এই প্রকৌশলী বলেন, এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে রাজউকের অধীনেই থাকার কথা।

এদিকে, সম্প্রতি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেছেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা কমাতে এরই মধ্যে ঢাকা ওয়াসার আওতায় থাকা ২৬টি খাল দুই সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়েছে। হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণ করারও যথেষ্ট সক্ষমতা সিটি করপোরেশনের রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নগর পরিকল্পনাবিদরা সক্ষমতাসম্পন্ন যেকোনো প্রতিষ্ঠানের হাতে হাতিরঝিলের দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষে। হাতিরঝিল প্রকল্পের এরিয়া ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড বিল্ডিং ডিজাইন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব সারাবাংলাকে বলেন, যেহেতু রাজধানীর সবগুলো খাল সিটি করপোরেশনের আওতায় চলে যাচ্ছে, সেহেতু হাতিরঝিলকেও তাদের দায়িত্বে দেওয়া উচিত। এতে করে এর আগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে, সেটি হবে না। কারণ সিটি করপোরেশন সবকিছু একক হাতে বাস্তবায়ন করবে।

এ পরিস্থিতিতে কোন প্রতিষ্ঠানের হাতে হাতিরঝিলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া যায়, তা ঠিক করতে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে সচিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুধু হাতিরঝিল নয়, গণপূর্তের আওতায় থাকা ১৭টি খাল হস্তান্তরের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেবে কমিটি। এরই মধ্যে ২৬টি খালের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৭টি খাল দুই সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হবে। হাতিরঝিলের বিষয়টিও কীভাবে সুরাহা করা যায়, এসব বিষয় নিয়ে শিগগিরই বৈঠক হবে।’

তবে দৃষ্টিনন্দন এই হাতিরঝিলের ব্যবস্থাপনা যে প্রতিষ্ঠানের হাতেই দেওয়া হোক, তারা যেন সেনাবাহিনীর করে যাওয়া কাজকর্মের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে— এমনটিই চাচ্ছেন বর্তমানে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা। লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী শাকিল হোসেন বলেন, গত আট বছর আমরা হাতিরঝিলের ব্যবস্থাপনাও করেছি, আবার উন্নয়নও করেছি। বাড়তি দু’টি ইউলুপ করেছি। কয়েকটি সংযোগ সড়ক ছিল, সবগুলো আমরা করে দিয়েছি। এসব করতে গিয়ে যেসব জনবল এখানে সেটআপ করেছি, প্রশিক্ষণ দিয়েছি— সেই ধারাবাহিকতা রেখে রাজউক কাজ করলে হাতিরঝিল টিকে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা বা এর কাছাকাছি হাতিরঝিলের মতো এমন জায়গা নেই। সেনাবাহিনী ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছেড়ে দিলে এখানে নতুন অপরাধ হতে পারে। এ দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হলেও সেনাবাহিনী দায়িত্বে থাকলে পরোক্ষ একধরনের ব্যবস্থাপনা থাকেই। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হবে।

ছবি: জাহিদুর রহমান

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন