বিজ্ঞাপন

অর্থমন্ত্রী সংসদে না থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

June 16, 2021 | 10:58 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থ পাচার বন্ধে সরকারি ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা। এছাড়াও, অধিবেশন চলাকালীন অর্থমন্ত্রী সংসদে না থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন জাপা মনোনীত সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৬ জুন) সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, ইকবাল হোসেন, ইউসুফ আব্দুল্লাহ, নাদিরা ইয়াসমিন, নাহিদ এজহার খান, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং পীর ফজলুর রহমান, বিএনপি থেকে মোশাররফ হোসেনসহ আরও কয়েকজন সদস্য।

আলোচনার শুরুতেই ক্ষোভ প্রকাশ করে পীর ফজলুর রহমান বলেন, সংসদে বাজেট বক্তৃতা চলছে। কিন্ত, অর্থমন্ত্রী নেই। গতকালও (মঙ্গলবার) তাকে সংসদে পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, দেশ থেকে কারা টাকা পাচার করছে, সে তালিকা অর্থমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের কাছে চেয়েছেন। সংসদ সদস্যরা কিভাবে তালিকা দেবে? যিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে তিনিই অর্থ পাচারকারীদের তালিকা দেবেন। পি কে হালদার টাকা নিয়ে বিদেশে গিয়ে ঘুমায়, আর তার বান্ধবীদের এখানে জেলে ঘুম পাড়ানো হয়। এটাতো কেউ চায়নি। সবাই চেয়েছে পি কে হালদারদের মতো লোকেরা যেনো অর্থ নিয়ে বাইরে যেতে না পারে।

বিজ্ঞাপন

পীর ফজলুর রহমান বলেন, প্রত্যেকটা অডিট রিপোর্টে আছে কিভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনিয়ম দুর্নীতি হয়। সেখান থেকেই কারা টাকা পাচার করে তাদের তথ্য নিতে পারেন অর্থমন্ত্রী।

সিএজির চার বছরের অডিট প্রতিবেদনের বরাতে তিনি বলেন, ৩১ হাজার কোটি টাকা লুট। চার বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকে জালিয়াতি, সরকারি অর্থের মোট অনিয়মের ৫২ শতাংশই হয়েছে ব্যাংকিং খাতে। ৯ বছরে অনিয়ম বেড়েছে ১৬ গুণ।

শেয়ার বাজার পরিস্থিতি তুলে ধরে বিরোধী দলীয় এই সদস্য বলেন, শেয়ার বাজারে লুটপাট হয়, অর্থমন্ত্রী খুঁজে পান না। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, পাঁচ বছরে এক হাজার ২৪টি অর্থ পাচারের ঘটনার প্রমাণ মিলছে। এটাতো সরকারি প্রতিষ্ঠানেরই তথ্য। তাহলে মন্ত্রী পান না কেন?

বিজ্ঞাপন

জাপা’র এই সাংসদ আরও বলেন, সাফাই না গেয়ে যারা দুর্নীতি করছে তাদের ধরেন। করোনাকালে অন্ততঃ বিবেক জাগ্রত হোক। একইসঙ্গে, অবৈধ টাকাকে কখনোই সাদা করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পাশাপাশি, শিক্ষাখাতে কর আরোপ এবং মোবাইলে অর্থ লেনদেনের ওপর কর আরোপেরও সমালোচনা করেন পীর ফজলুর রহমান। প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের চিকিৎসার নিশ্চয়তা দেন। ভ্যাকসিন নিয়ে কেউ কোনো কথা শুনতে চায় না। মানুষই যদি না বাঁচে, তবে বাজেট বাস্তবায়ন হবে কিভাবে? তাই সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে হবে।

এই আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতির টাকা কোথায় থেকে আসবে তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। ঋণের সুদই দিতে হবে ৬৯ হাজার কোটি টাকা। এরপর অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থপাচার চলছে।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিনের দাম বলে দেওয়ায় ৬ জুন একজন অতিরিক্ত সচিবকে ওএসডি করা হয়েছে। মানুষের করের টাকায় ভ্যাকসিন কেনা হচ্ছে, দাম জানার অধিকার মানুষের আছে। এ জন্য একজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করার ঘটনা দুঃখজনক। শুধু একটি নয়, অন্যান্য দেশের সঙ্গেও ভ্যাকসিনের জন্য আলোচনা করার দরকার ছিল। এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

এমপি মোশাররফ বলেন, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এতো বাজে অবস্থা, সেখানে যাওয়া যায় না। গেলে নাক রুমাল দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। কিছু দরপত্র আহ্বান করা হলেও কাজ হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ ফোন করে তাকে গালিগালাজ করেন।

একইসঙ্গে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এই বিএনপি দলীয় সাংসদ।

অন্যদিকে, ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, করোনা মহামারিকালেও দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে আগের বারের চেয়ে বরাদ্দ না বাড়ানো এবং আগের বরাদ্দকৃত বাজেট যথাযথভাবে ব্যয় না করা অত্যন্ত দুঃখজনক।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাত নিয়ে এতো কথা হচ্ছে অথচ সেখানে বরাদ্দ জিডিপির সেই এক শতাংশের মধ্যেই আছে। যা প্রতিবেশি নেপাল-ভারত-শ্রীলংকা এমনকি পাকিস্তানের চেয়েও কম। এই বরাদ্দ দিয়ে স্বাস্থ্যখাতের চাহিদা মিটবে না।

বরাদ্দ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য খাত পিছিয়ে আছে উল্লেখ করে এই জাপা সাংসদ বলেন, এই বাস্তবতায় স্বাস্থ্যখাত বড় ধাক্কা সামলাতে পারবে না। স্বাস্থ্যখাতে কমপক্ষে জিডিপির দুই শতাংশ বরাদ্দ রাখা দরকার বলে তিনি মনে করেন। কারণ স্বাস্থ্যখাত শক্তিশালী হলেই কেবল করোনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণ হলে অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে।

বাবলা বলেন, এবারের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘাটতি বাজেট। আলোচিত এই বাজেটে অনুদানসহ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ। অনুদান বাদ দিলে ঘাটতির পরিমাণ দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এতো বিশাল ঘাটতি পূরণ করতে যে ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। তাই, বাজেটে ব্যাপক রদবদল করতে হবে বলে তিনি মত দিয়েছেন।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একেএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন